সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আমার মায়াবতী |পর্ব:-তেইশ| অন্তিম পর্ব

টিভি থেকে কাচ জাতীয় কিছু একটা ভাঙার শব্দ শুনতে পেল মায়া। ভিষণ ইচ্ছে করছে চোখ খুলে দেখতে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আরো শক্ত করে চোখ বুজে দুহাতে চোখ ঢাকলো মায়া। কয়েক সেকেন্ড পরেই রাহাতের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল ভিডিওতে। -তুমি এভাবে এই ড্রেসআপে কেন এসেছ!! এই মেয়ে? জুলি তোমাকে বলে নি আমি জাস্ট তোমাকে কয়টা প্রশ্ন করব?? -আজব লোক তো মাইরি!! আমার কাজ টাকা নিয়ে বড়লোকদের রাত রঙিন করে দেয়া। এতো প্রশ্নের জবাব দিতে যাবো কেন!? -মানে!! চুপ থাকো। সেদিন কি কি হয়েছিল সেটা বলো আমাকে। -কি ক্যাঁচালে পড়লাম রে বাপ! কোনদিনের কথা বলছেন বলুন তো! আপনার এই বিশাল বাংলোয় আজই তো আসলাম!! -আমাকে তুমি চিনো না? তুমি সিউর আজকের আগে আমাকে দেখো নি কখনো!! -কি প্যাঁচাল!! বললাম তো!! আর কাস্টমারদের চেহারা ভুলে না এই বিজলি। -কিন্তু জুলি যে বললো তুমি সেদিন আমার সাথে ছিলে!! -আরে মাইরি!! আমি কি বলি আর সে কি বলে!! জুলি ফুলি চিনি না। আসো শুরু করি। হাতে সময় নেই আমার। যেতে হবে।। -জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার। -ওকে। টাকা দাও। চলে যাই। অপমান করার কি আছে!? কথাগুলো শুনেই মায়া চোখের উপর থেকে হাত সরালো। টিভি স্ক্রিনের ...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-বাইশ|

রাহাত এই মুহূর্তে বসে আছে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। কি করে মায়াকে নিয়ে এই হসপিটাল পর্যন্ত এসেছে রাহাত নিজেও তা জানে না। মাইক্রো বাসটা রাহাতের দিকে তেড়ে আসায় মায়া রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেও নিজে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। তাও একেবারে রাস্তার আইলানের উপরে মাথাটা বেশ জোরে ধাক্কা লাগে মায়ার। রক্ত পড়তে থাকে কপালের বাম দিকটা থেকে। হসপিটালও বেশ অনেকটা দূর এগিয়ে পেয়েছে রাহাত। ততক্ষণে হাতের রুমাল দিয়ে মায়ার মাথাটা চেপে ধরে থাকলেও বেশ অনেকটাই রক্ত বেরিয়ে গেছে। ডাক্তাররাও জরুরিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। ড্রসিং করে দেয়ার পরও তেমন সুবিধা না বুঝে মায়াকে এ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। রাহাত ফ্যালফ্যাল করে সব দেখছে। কি করবে কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এ্যাম্বুলেন্সেও মায়ার হাতটা ধরে ঠায় বসে ছিল রাহাত। গাড়িটা সিলেটে হাসপাতালের সামনে পড়ে আছে। ঢামেকে নেয়ার পর পরই ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে চিকিৎসা শুরু করে দিলো। ঘন্টাখানেক পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হচ্ছে দেখে রাহাতের হুঁশ ফিরলো। ডাক্তারের দিকে এগিয়ে গেল রাহাত কাঁপা পায়ে। কি শুনতে হতে পারে সেটা ভেবেই বুকটা মুচড়ে উঠছে ব...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-একুশ|

পরের কয়েকটা দিন শ্বশুরবাড়িতে রাহাতের বেশ কাটলো। রাহাত, মায়া, মিহান আর দিয়া মিলে অনেক মজা করেছে এই কয়টা দিন। সবাই মিলে হাতে হাতে রান্না করেছে, রাতে বারবিকিউ স্টাইলে পার্টি করেছে, চাঁদ দেখতে দেখতে মুড়ি মাখা খেয়েছে টানাটানি করে, ভর দুপুরে পুকুরে ঝাঁপাঝাপি করেছে, মাছ ধরেছে জাল টেনে। দিয়া আর রাহাতের ছেলেমানুষিগুলো ছিল দেখার মতো। এর আগে কখনো গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য ওরা এভাবে উপভোগ করে নি। তাই হয়তো এতো উৎফুল্ল ওরা। আর ওদের দুজনের খুশি দেখে বাকি তিনটা মানুষও খুশি। মিহানের এক সপ্তাহের ছুটি নেয়াটা যেন সার্থক হয়েছে ওদের সবার খুশিতে। তবে এতো হাসি খুশি সময়টাতেও রাহাত কিছুটা চিন্তিত। মায়ার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না মেয়েটার ভেতরে কি চলছে। রাগ করে আছে কিনা এখনো বা ঢাকায় ফিরে মেয়েটা কি করবে! এসব ভেবে ভেবে রাহাত ঢাকায় ফিরার কথাটা তুলতেও ভয় পাচ্ছে। কি থেকে কি হবে কে জানে! ছয় নাম্বার দিন রাতে ওরা চারজন উঠানে মাদুর পেতে কুপির আলোয় ঝাল করে আমড়া মাখা খাচ্ছে আর গানের কলি খেলছে। মা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওরা একটু নিচু গলায় গান করছে৷ দুটো টিম। মায়া আর দিয়া একটাতে আর রাহাত আর মিহান একটাতে। বসেছেও সেভাবে ...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-বিশ|

রাহাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মায়া, মা আর দিয়ার সাথে বসে পিঠা বানাচ্ছে। মিহানও ফ্রেশ হয়ে আসায় দুজনে মিলে আড্ডা দিতে দিতে রান্নাঘরের কাজ দেখতে লাগলো রাহাত। রান্নাঘরটা বাড়ির ভিতরে না দিয়ে উঠানের অপর পাশে বানানো। প্রত্যন্ত এই গ্রামে না আছে কারেন্ট, আর না আছে গ্যাসের সুবিধা। তাই রান্না হচ্ছে মাটির চুলোয়। চুলোর ধোঁয়ায় সমস্যা না হওয়ার জন্যই সম্ভবত এই আলাদা ব্যবস্থা। রান্নাঘরে মায়ার ব্যস্ততা দেখতে দেখতেই রাহাত মিহানকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। অফিস কোথায়, কাজ কেমন হয়, বস কেমন -এসব নিয়েই মিহানকে প্রশ্ন করছে রাহাত। নাস্তা করতে বসে রাহাত দেখলো পুলি, ভাঁপা, চিতুই-এরকম কয়েকটা পিঠে করা হয়েছে। আর শীত শীত সকালে পিঠাগুলো খেতেও বেশ লাগছে রাহাতের। খাওয়া শেষ করে গাড়ি থেকে শপিং ব্যাগগুলো আনলো রাহাত৷ মিহানও হেল্প করলো অবশ্য। অনেকগুলো শপিং করেছিল রাহাত। শাশুড়ীকে, মিহানকে আর দিয়াকে কয়েকটা করে শপিং ব্যাগ দিয়ে বাকিগুলো মায়াকে ধরিয়ে দিলো। মায়াও ভ্রু কুঁচকে রাহাতকে দেখছে। -আরে?? এসবের কি দরকার ছিল বাবা?? -মা?? আমি কি দিতে পারি না? মাকেই তো দিয়েছি। -রাহাত ভাই। আর আমাদের গুলো? এতো কাপড় চোপড়ের কি দরকার ছিল?? ...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-উনিশ|

বেশ স্পিডেই গাড়ি ছুটিয়ে সিলেট পৌঁছেছে রাহাত। নেভিগেশনে চন্দ্র গ্রাম নামে প্রত্যন্ত এই গ্রামটা খুঁজে পেতে বেশ ভালোই বেগ পেতে হয়েছে রাহাতকে। আর একেবারে আদিম যুগের গ্রাম বলা চলে। একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে যেখানে প্রায় সবটাতেই নগরায়নের ছোঁয়া লেগেছে, সেখানে কেমন করে যেন এই ছোট্ট গ্রামটা বাদ পড়ে গেছে। সিলেটের যত ভিতরের দিকে যাচ্ছে ততই নেটওয়ার্ক খারাপ হচ্ছে। তাই সিলেট পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে পৌঁছলেও চন্দ্রগ্রাম খুঁজে বের করতে রাহাতকে বেশ খানিকটা নাকানি চুবানি খেতে হলো। গ্রামের সীমানায় পৌঁছে তো আরো যাচ্ছে তাই অবস্থা। সময়টা সম্ভবত রাত ১০ টার একটু বেশিই হবে৷ কিন্তু গ্রামের কোন ঘর থেকে আলোর ছিটেফোঁটাও দেখতে পাচ্ছে না রাহাত। তার উপরে এতো সরু রাস্তা!! গাড়ি সামনে নিতে প্রায় গাছ গাছালির উপরে তুলে দিচ্ছে টাইপের অনুভূতি হচ্ছে রাহাতের। তবে কেন যেন এই শহর থেকে এতো দূরের প্রত্যন্ত এলাকার অচেনা গ্রামটাতে এসেও রাহাতের বেশ লাগছে। এতো খুশির কারণটা রাহাত নিজেও ধরতে পারছে না। মাথায় একটন পরিমাণের কনফিউশান নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল রাহাত। বেশ অনেকটা রাস্তা আগেই এক মুদি দোকানির কাছে মায়াদের বাড়ির হালকার উপর...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-আঠারো|

রাতে প্রজেক্টের কাজ শেষ করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছে রাহাত। সকালে উঠতে উঠতেও দেরি হয়ে গেছে ওর। ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে বাকি কাজটা কমপ্লিট করে মেইল করেই অফিসে ছুটলো রাহাত। অফিস থেকে নাকি বাসার নাম্বারে কল করেছে লিজা। তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। রাহাত অনেক্ক্ষণ খুঁজেও নিজের মোবাইলটা পেল না। পরে মোবাইল ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। অফিসে নিজের রুমে ঢুকতেই দিহান আর লিজাকে পেল রাহাত। -স্যার?? -কি ব্যাপার লিজা?? বাসায় কল করছিলে নাকি? -স্যার আপনার মোবাইলেও কম করে হলেও ১০০ বার কল করেছি। -মোবাইলটা পাচ্ছি না। সম্ভবত মায়ার বাসায় ফেলে এসেছি কালকে। -স্যার। ম্যাম কোথায়?? -কোথায় মানে!! বাসায়। আর তোমাদের দুজনের কি হয়েছে?? দিহান?? কোন সমস্যা হয়েছে? -সরি স্যার। লিজা তুমি স্যারের সাথে কথা বলো।৷ আমি আসছি, আসছি স্যার। দিহান বেরিয়ে যাওয়ার পর রাহাত চেয়ারে বসে লিজার দিকে তাকলো। -হয়েছে টা কি বলবে লিজা প্লিজ?? দিহানেরই বা কি হলো?? -স্যার গতকাল দুপুরে আপনি অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর দিহান অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করার সময় একটা লোককে আপনার রুমে ঢুকছে দেখতে পায়। ছুটে রুমে গিয়েও লোকটাকে...

আমার মায়াবতী |পর্ব:-সতেরো|

সকালে ঘুম ভাঙতেই এক চিলতে আলো এসে চোখে পড়ায় মায়ার তাকাতে প্রথমে একটু কষ্ট হলো। একটু পরেই টের পেল আলোটা আর চোখে এসে লাগছে না৷ আলোর বদলে মিষ্টি একটা ছায়া এসে পড়েছে কোত্থেকে যেন। আবার চোখ খুলেই ছায়ার রহস্যটা দেখতে পেল মায়া। রাহাত মায়ার দিকে একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে আড়াল করে রোদটাকে মায়ার চোখে মুখে পড়া থেকে আটকাচ্ছে। মায়া নিজের ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো রাহাতের কাজ দেখে।। রাহাতও আরেকটু ঝুঁকে মায়ার গালে চুমো খেল। -এভাবে হেসে আবার কেন আমার নেশা জাগাচ্ছে মায়াবতীটা?? হুম? হুম?? -কি?? -এভাবে হেসো না গো। পাগল হয়ে যাবো। -ধ্যাত, সরো। কত বেলা হলো?? -আরে?? মায়া গায়ে চাদরটা ধরে উঠে যাওয়ার আগেই রাহাত মায়াকে টেনে একেবারে বুকের ভিতরে নিয়ে শুয়ে গেল। -আরে?? কি করছ?? কত বেলা হলো?? -এ আর এমন কি বেলা হলো বউ? আটটা বাজে। পাশের রুমে দুজনসুখী মানুষ হয়তো একটু আগেই ঘুমিয়েছে। আর তুমি এখনই উঠার জন্য লাফালাফি করছো? -এই এই?? লজ্জা শরম কিছু নেই তোমার?? মুখে কিছু আটকায় না? -না আটকায় না। আর তোমার লজ্জাটাও তো ভেঙে দিলাম রাতেই..... -অসভ্য লোক একটা। সরো?? -উহু। সারারাত আমি মায়াপরীটাকে আদর করেছি। এখন মায়াব...