সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-বিশ|


রাহাত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মায়া, মা আর দিয়ার সাথে বসে পিঠা বানাচ্ছে। মিহানও ফ্রেশ হয়ে আসায় দুজনে মিলে আড্ডা দিতে দিতে রান্নাঘরের কাজ দেখতে লাগলো রাহাত। রান্নাঘরটা বাড়ির ভিতরে না দিয়ে উঠানের অপর পাশে বানানো। প্রত্যন্ত এই গ্রামে না আছে কারেন্ট, আর না আছে গ্যাসের সুবিধা। তাই রান্না হচ্ছে মাটির চুলোয়। চুলোর ধোঁয়ায় সমস্যা না হওয়ার জন্যই সম্ভবত এই আলাদা ব্যবস্থা। রান্নাঘরে মায়ার ব্যস্ততা দেখতে দেখতেই রাহাত মিহানকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। অফিস কোথায়, কাজ কেমন হয়, বস কেমন -এসব নিয়েই মিহানকে প্রশ্ন করছে রাহাত।
নাস্তা করতে বসে রাহাত দেখলো পুলি, ভাঁপা, চিতুই-এরকম কয়েকটা পিঠে করা হয়েছে। আর শীত শীত সকালে পিঠাগুলো খেতেও বেশ লাগছে রাহাতের। খাওয়া শেষ করে গাড়ি থেকে শপিং ব্যাগগুলো আনলো রাহাত৷ মিহানও হেল্প করলো অবশ্য। অনেকগুলো শপিং করেছিল রাহাত। শাশুড়ীকে, মিহানকে আর দিয়াকে কয়েকটা করে শপিং ব্যাগ দিয়ে বাকিগুলো মায়াকে ধরিয়ে দিলো। মায়াও ভ্রু কুঁচকে রাহাতকে দেখছে।
-আরে?? এসবের কি দরকার ছিল বাবা??
-মা?? আমি কি দিতে পারি না? মাকেই তো দিয়েছি।
-রাহাত ভাই। আর আমাদের গুলো? এতো কাপড় চোপড়ের কি দরকার ছিল??
-আরে মিহান ভাই। নতুন বিয়ে করেছেন। একটু ঘুরবেন ফিরবেন ভাবিকে নিয়ে....তাই আর কি! হা হা, তা আজকে কোথায় যাওয়া হচ্ছে??
-সবাই মিলে খালার বাড়ি যাই আজকে??
রাহাত কিছু বলার আগেই মায়া নিজের হাতের শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
-ভাইয়া,আমি যাচ্ছি না। এমনিতেই খারাপ লাগছে একটু। জার্নি করলে শরীর খারাপ করবে আরো! তোমরা যাও।
-তাহলে কাল পরশু যাই??
-আরে না না। আপনারা যান। মায়া আর আমি বাড়িতে থাকি। আমিও কাল ড্রাইভ করে এসে টায়ার্ড অনেক!
মায়া রাহাতের দিকে রাগী লুক দিয়ে রুমে চলে এলো। এই লোকটা না গেলে সারাদিন জ্বালিয়ে মারবে। মায়া ভেবেছিল রাহাতও মিহানদের সাথে যাবে। আর মায়া একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। তা আর হলো কই?! মিহানও বুঝতে পেরেছে মায়া কোন কারণে রাহাতের উপরে রেগে আছে। তাই ওদের দুজনকে একা ছাড়ার ব্যবস্থা করে দিল।। যাওয়ার আগে রাহাতকে ইশারায় ডাকলো।
-জি ভাইয়া?
-মায়া বোধ হয় আপনার উপরে অনেক খেপেছে। আমরা তো আজ রাতে ফিরবো না। দেখুন রাগ ভাঙাতে পারেন কিনা। এই মেয়ের রাগ কিন্তু সাংঘাতিক।
-থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
রাহাত লাজুক হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমে এলো। এসেই হা হয়ে গেল। মায়া শপিংব্যাগগুলো বিছানায় ছড়িয়ে রেখে জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে৷ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কতোটা রেগে আছে রাহাতের উপরে। রাহাত হেসে মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবালো। মায়া চমকে উঠে রাহাতের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
-ছাড়ো,উহু।
-বলছি না ছাড়ো? সরো??
-একটা গান শুনবে মায়াবতী??
-না
-শুনো না?? একটু.....
-না না না,না বলছি না??
-আরে বাবা একটু শুনো?? জাস্ট কয়েকটা লাইন??
এবার মায়া চুপ করে যাওয়ার রাহাত মায়ার কানে ঠোঁট বুলিয়ে দিতে দিতে গান ধরলো৷
-"আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো!
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই কিছু নাই গো !
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
আর কিছু নাহি চাই গো ।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস ।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো ।"
রাহাতের কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতটা শুনেই মায়া চুপ হয়ে গেছে। রাহাতও তাই সুযোগ বুঝে মায়ার ঘাড়ে, গলায় আলতো করে ঠোঁট ডুবিয়ে দিচ্ছে একবার। আবার কখনো মায়ার কানে ছোট্ট করে কামড় বসাচ্ছে। মায়া কেঁপে উঠে রাহাতের সামনে থেকে আচমকা উঠে বিছানা থেকে নেমেগেল। রাহাত খাটের সাথে হেলান দিয়ে মায়ার কাজ দেখছে।
-এই? কই যাও?
-খবরদার ছোঁবে না একদম। একবার একটা করে আমাকে জব্দ করা না? তোমাকে আমি আর কক্খনো মাফ করব না। সে তুমি যত কিছুই করো না কেন।
-আচ্ছা,মায়াবতী। মাফ করো না। এখন কাছে আসো??
-আসবো না কাছে। থাকবোও না তোমার সাথে।
-ও? তাই? কই যাবা?? আমি তো তোমার পিছে পিছে এসে হাজির হবো।
-তুমি ঘুমাও। আমি মা আর ভাইয়াদের সাথেই খালার বাড়ি চলে যাবো। থাকো তুমি একা একা।
-আরে??
মায়া রুম থেকে বেরুনোর আগেই রাহাত মায়ার হাত টেনে টিনের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। মায়া রাগী চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছোটানোর জন্য লাফালাফি করছে৷ কিন্তু কিছুতেই রাহাতের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না বেচারি।শেষে বিরক্ত হয়ে মায়া রাহাতের হাতেই কামড় বসালো। প্রথমে একটু আস্তে কামড় বসালেও পরে রাগ করে রাহাতের হাতে বেশ জোরেই কামড় বসালো মায়া। রাহাত হেসে মেয়েটার পাগলামিগুলো সহ্য করছে। মায়া হয়রান হয়ে রাহাতের হাত ছেড়ে দিতেই রাহাত মায়ার মুখটা এক হাতে তুলে ধরে চোখের দিকে তাকালো। মায়াও রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
-মা, ভাইয়া, ভাবি এখনো বাড়িতেই আছে মায়াবতী। এখনই এতো কাছে ডাকছ কেন?? উনারা যাক, তারপর কত কামড়াতে পারো আমিও দেখবো।
-অসভ্য লোক, ছাড়ো। নইলে এখান থেকেই মা কে ডাকবো বলে দিলাম।
-হুম হুম, অবশ্যই ম্যাডাম, ডাকুন!দেখুন চেষ্টা করে।মায়া মাকে ডাকার জন্য মুখ খোলার আগেই রাহাত মায়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। নিচের ঠোঁটটা আলতো করে কামড়ে ধরে বেশ খানিকটা সময় চুপ করে মায়ার ভারি নিঃশ্বাসগুলো অনুভব করলো রাহাত। একটু পরে মায়ার মুখটা তুলে ধরে দেখলো মায়া চোখ বুজে আছে। রাহাত মায়ার কান আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-আবার ডাকবে মাকে?? চেষ্টা করে দেখতে পারো। তবে এবার কিন্তু ডিউরেশনটা আরেকটু বেশি হবে।সেটা মাথায় রেখো কেমন, মায়াবতী??
-সরো.....
-উহু। কথা ছিল তুমি রাগ করলে আমার উষ্ণ স্পর্শে তোমার রাগ ভাঙাবো। অভিমান করলে তোমার নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে।। ছাড়াছাড়ি হচ্ছে না মিসেস মায়াবতী!
-তোমার দোহাই লাগে প্লিজ চুপ করো?
-কেন গো?? শুনলে বুকের ভিতরে ধুকপুক করে ওঠে? আরো আদর খেতে মন চায়? তুমি চাইলে করতেই পারি-তবে মা আর ভাইয়া ভাবি যাওয়ার পর!
-আমার বয়েই গেছে। সরো তো??
-আচ্ছা যাও। সবাই রেডি হলো কিনা দেখো গিয়ে। তোমাকে বশে আনার জন্য সারাটা দিন তো পড়েই আছে? কি বলো?
মায়া রাগী চোখে রাহাতের দিকে তাকাতেই রাহাতও মায়ার দিকে ইশারায় একটু চুমো দেখালো। তারপর হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিতেই মায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাহাতও হেসে মায়ার পিছন পিছন ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো। মেয়েটা সোজা পথে মাফও করবে না। আর ওর কোন কথাও শুনবে না৷ তাই এভাবে বিরক্ত করে, আরো রাগিয়ে দিয়েই মায়াবতীর মান- অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে রাহাত৷ কতটুকু কি করতে পারবে কে জানে! তবে সে হাল ছাড়বে না। রাহাতও যেন পণ করেছে।। তার মায়াবতীর রাগ সে যেমন করেই হোক ভাঙাবেই ভাঙাবে।
চলবেরাহাত ড্রইংরুমে এসেই দেখলো মিহান, দিয়া আর মা একেবারে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিয়েছে। রাহাত মিহানকে নিজের গাড়ির চাবিটা ধরিয়ে দিলো।
-গাড়িটা নিয়ে যান ভাইয়া। কতদূর যেতে হবে।
-আরে??
-না ভাইয়া। প্লিজ না করবেন না।
মা আর ভাইয়া ভাবি বেরিয়ে যেতে রাহাত গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। মায়া বিরক্ত হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে কাজ করতে লাগলো। এই লোকটা পুরোটা দিন চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে-ভাবতেই রাগ লাগছে মায়ার। কেন যে মরতে মায়ের সাথে গেল না সেটা ভেবে নিজের উপরও রাগ লাগছে প্রচন্ড। কিন্তু একবার যাব না বলে পরে যেতে চাইলে মা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো! হয়তো জানতেও চাইতো কি হয়েছে। কিন্তু রাহাতের এই কথাগুলো কি করে মাকে বলতো মায়া?? আর বলার পরই বা কি হতো!! মা বা ভাইয়া কেউ কি রাহাতকে ছেড়ে কথা বলতো!! কত অপমান করতো মানুষটাকে!! সেটা মায়া কি করে সহ্য করবে! যতই রাগ করে চলে আসুক না কেন মানুষটাকে তো সে আজও ভালোবাসে! সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। ইভেন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি হয়তো।
-এই? মায়াবতী? আঙুলে কি হয়েছে?
-হুম?? তুমি??
-তোমার আঙুল কেটে রক্ত পড়ছে।
-হুম?? আরে?? খেয়াল করি নি। তুমি এখানে কি করো?? যাও জার্নি করে এসেছ না এতোটা রাস্তা?? ঘুমাও।
-মাঝে মাঝে তুমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলো। বুঝসো?
-যাও তো। ঘুমাও। আর এই একটু কাটায়, এইটুকু রক্ত ঝড়লেই বা কি হবে?? এর চেয়ে কতো বেশি রক্তপাত হচ্ছে বুকের ভেতরে! সেটা তো কেউ দেখতেও পায় না।
-মায়া???
-যাও তো এখন। হাত ছাড়ো। রান্না বাকি আমার।।
রাহাত এক ছুটে বড় ঘরটার দিকে চলে গেল। মায়া পাশে রাখা জগ থেকে একটু পানি ঢেলে হাতটা ধুয়ে নিল। এতটা অন্যমনস্ক ছিল যে আঙুলটা এতোটা কেটেছে টেরই পায় নি ও। এখন পানি লাগায় জ্বালা করছে প্রচন্ড। শাড়ির আঁচলে আঙুলটা ধরে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করছে এমন সময় রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল মায়া। মায়া মুখ তুলে দেখলো রাহাত তুলোয় সেভলন লাগিয়ে মায়ার আঙুলে লাগানোর জন্য বাড়াচ্ছে। মায়া আঁতকে উঠে হাতটা টেনে নেয়ার চেষ্টা করলো। রাহাত বিরক্ত হয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকালো।
-মায়া?? এতো লাফালাফি করছো কেন?
-এমনিতেই বড্ড জ্বালা করছে। আবার সেভলন?? না না না। জ্বালা করবে আরো....
-মায়া?? নড়ো না বলছি না?? ব্যান্ডেজ করে দিবো। আর সেভলন না দিলে ইনফেকশন হতে পারে....
-না নাআআআ। আমি সেভলন লাগবো না......
-বেশি কথা বলবা সেভলন খাওয়াই দিবো বলে দিলাম মায়াবতী। চুপ করে বসে থাকো....
মায়া চুপ হয়ে গেল। মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিচ্ছে রাহাতকে। ফাজিললোকটা একটুও শান্তি দেয় না। এমনিতে তার কথা চিন্তা করতে করতে হাত কেটেছে আর সে এখন সেভলন দিয়ে আরো বেশি জ্বালা দিচ্ছে। খারাপ লোক একটা। রাহাত মায়ার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা মানে কাটা আঙুল সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। তারপর আলতো করে ব্যান্ডেজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-বেশি কষ্ট হচ্ছে মায়াবতী??
-এ আর কি কষ্ট?? এর চাইতেও বেশি কষ্ট নিয়ে ঘুরতে হবে আজীবন আমাকে। সরো। রান্না করি....
-কাটা হাত নিয়ে রান্না করতে হবে না। এসো?
-হুহ। রান্না করতে হবে না। বললেই হলো আর কি! না খেয়ে থাকবে দুপুরে?
-তোমার কষ্ট কম করতে না খেয়ে সারাদিনটাও থাকতে পারবো।
-ইশ। পরে খোঁটা দিতা যে না খাইয়ে রেখেছি, হুহ... সরো তো?
-মায়াবতী?? আচ্ছা যাও। তুমি বলে দাও। আমি রান্না করছি.
-আহারে!! ভালোবাসা দেখাইতে আসছো!! জীবনে মাটির চুলা দেখেছ তুমি? যে এখন রান্না করবা বলতেছ??
-তোমার জন্য আমি সব করতে পারি মায়াবতী। জাস্ট আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখো। প্লিজ??
-আচ্ছা আচ্ছা। তোমাকে রান্না করতে হবে না। তুমি শুধু মাছে মসলাটা মেখে দাও। আমি নিজে বাকিটা করে নিবো।
রাহাত খুশি হয়ে মায়ার কাজে হেল্প করছে। আর মায়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাহাতের হাসি মুখটা দেখছে। লোকটা এমন কেন বুঝে না মায়া। এক মূহুর্ত মনে হয় মানুষটাকে বিশ্বাস করে সারাটা জীবন হাত ধরে চলা যায়। আর পরক্ষণেই সব কিছু ধোঁয়াশা হয়ে মিলিয়ে যায় অনিশ্চয়তার অতলে। মানুষটা সত্যিই কি বদলে গেছে? নাকি আবার মায়াকে কাছে টানার জন্য মুখোশ পড়েছে? কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মায়া। মায়ার সমস্ত সত্তা চাইছে রাহাতের কাছে ফিরে যেতে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধছে। আর সেই বাঁধাটাকে মায়া কিছুতেই উপেক্ষাও করতে পারছে না।
রান্না শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে গেল। রাহাত বেচারা তো মাটির চুলোর তাপে গরমে ঘেমে নেয়ে একসার অবস্থা। মায়া সেটা দেখেই হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
-আমার বেহাল দেখে মজা পাচ্ছো সুন্দরী? দিন আমারও আসবে। মনে রেখো বধূ এক মাঘে শীত যায় না!
-হুহ।
মায়া হাত মুখ ধুয়ে এলো পুকুর থেকে। আর রাহাত বাচ্চাদের মতো ঝাঁপাঝাপি করে পুকুরে নেমে গোসল করলো৷ লোকটার এমন ছেলেমানুষি দেখে মায়া হেসে ফেললো। এই লোকটা বাচ্চাদের মতো হয়ে যায় মাঝে মাঝে৷ যেমনটা এখন করছে৷ কখনো পানি ছিটাচ্ছে মায়ার গায়ে। আবার কখনো পানিতে ডুব দিয়ে অনেকক্ষন পর মাথা তুলছে। শেষে প্রচন্ড খিদে পাওয়ায় রাহাত পুকুর থেকে উঠে এসেছে। নইলে তার পানিতে লাফালাফি কতক্ষণ চলতো কে জানে!!
খেতে বসেও আরেকটা ভেজাল বাঁধলো। মায়ার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা বেশ অনেকটাই কেটেছে। তার উপরে ব্যান্ডেজ করা। এই কাটা ব্যান্ডেজ করা আঙুল নিয়ে বেচারি খেতেও পারছে না৷ তার উপরে ডান হাতের এই বুড়ো আঙুল হলো এমন একটা আঙুল যেটা ছাড়া মাখিয়ে ভাত মুখে পোরা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার। মায়ার চুপ করে থাকা দেখে রাহাত এক লোকমা মায়ার মুখের সামনে ধরলো। মায়া মুখ তুলে তাকাতেই রাহাত মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো।
-ঝগড়া ঝাটি, রাগা রাগী ব্যাপারগুলো একটু সাইডে রাখো। খাওয়া শেষ হলেও আমাকে রাগ দেখানোর জন্যও পাশে পাবে মায়াবতী। তাই আপাতত খেয়ে নাও।
মায়াকে খাইয়ে দিয়ে রাহাত নিজেও খেয়ে নিলো। তারপর দুজনে মিলে প্লেটগুলো ধুয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে নিয়ে মায়াকে নিয়ে রুমে এলো রাহাত। ছুটির দিনগুলোতে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি ওদের দুজনের। তাই রাহাত চাইছে যতটা সময় পারে মায়াকে সময় দিতে। ঢাকায় ফিরার পর ব্যস্ত হয়ে গেলে হয়তো এভাবে এতোটা সময় মেয়েটাকে দিতেও পারবে না। তারচেয়েও বড় কথা হলো মেয়েটার রাগটা ভাঙাতে হলে কিছু একটা করা চাই। কি করা যায়??
-তোমার না টায়ার্ড লাগছে?? তুমি ঘুমাও।
-তুমি কি করবা??
-আমি মায়ের রুমে গিয়ে....
মায়া কথাটা শেষ করার আগেই রাহাত মায়াকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে গেল বিছানায়। তারপর গায়ে কাঁথা টেনে একেবারে জাপটে ধরে রইলো বুকের ভিতরে।
-কি করছ কি তুমি??
-মায়ের রুমে কেন যাবা?? আমার বউ আমার বুকে থাকবে। কোথাও যাওয়া চলবে না।।
-(চুপ)
-এই মায়াবতী?? ঠোঁটের কোণে হাসি নেই কেন তোমার? চোখের কোণাটা কেমন চিকচিক করছে! এই সুন্দর মুখখানাই বা এতো মলিন কেন? মনটা কি ভিষণ খারাপ?? এই পরী? তোমার কষ্টগুলো বেচবে আমার কাছে?? জগতের সমস্ত সুখের দামে কিনে নিবো। প্রমিস। তোমার মনের প্রতি বিন্দু কান্নার বিনিময়ে আমার উচ্ছল হাসিটুকু নিয়ে নাও। কখনো ফেরত চাইবো না কথা দিলাম। শুধু একটা জিনিসই চাইবো! তোমার ঠোঁটের সেই হাসিটা প্রতিবার দেখার জন্য তোমার পাশে থাকতে চাই। সুযোগটা দিবে?? প্লিজ??
মায়া রাহাতের বুকে ডুবিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। আর রাহাত কিছু না বলেই মায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মেয়েটাকে একটু কেঁদে হালকা হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে রাহাত। এর পর আর কখনো এমন কিছু করবে না যাতে মায়া কাঁদে। বা এমন কিছু করবে না যাতে মায়া ভুল বুঝে ওর থেকে দূরে কোথাও চলে যায়। আর নিজের অতীতের ভুলগুলোর দিকে ভুলেও পা বাড়াতে চায় না রাহাত৷ এসব ভাবতে ভাবতেই রাহাত মায়াকে আরেকটু নিবিড় করে বুকে টেনে নিলো।
যারা এই গল্পের পুরনো পাঠক আছেন, খুট করে আমার আইডি তে একটা রিকু সেন্ট করতে ভুলবেন না! ধন্যবাদ!
চলবে...…..........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...