হাতে মায়ার চিঠিটা নিয়ে ফ্লোরে থ হয়ে বসে আছে রাহাত। চোখের সামনে মায়ার মায়াবী মুখটা ভেসে উঠছে বারবার।
চোখের সামনে ভাসছে প্রায় আড়াই বছর আগের একটা দিন। রাহাত নিজের চেয়ারে বসে জুলিকে নিজের উপরে টেনে নিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে। ঠোঁটের কোণে পাগল করা হাসি। জুলিও খুব রহস্যময়ী হাসি ফুটিয়ে রাহাতের গলা পেঁচিয়ে ধরে নিজের লাল লিপস্টিকে রাঙা ঠোঁটটা এগিয়ে আনছে রাহাতের ঠোঁটের কাছে। ঠোঁট দুটো ছুঁই ছুঁই করছে এমন সময় কেউ দরজা একবার নক করেই দুম করে দরজাটা খুলেই রুমে ঢুকে পড়লো৷ জুলি থতমত খেয়ে রাহাতের উপর থেকে সরে এসে একটু সামলে দাঁড়ালো।
রাহাত মেজাজ গরম করে সামনের দিকে তাকিয়ে একটা মেয়েকে দেখলো। এই মেয়েটা নতুন। রাহাতের রুচিবোধের সাথে একদমই যায় না এই মেয়ে। তবু কিসের এক অদৃশ্য টানে মেয়েটার দিকে তাকালো রাহাত। কে এই মেয়ে!! আর এখানেই বা কেন এল হঠাৎ?? চোখ বুলিয়ে মেয়েটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে রাহাত। স্ক্যানার মেশিনে স্ক্যান করছে যেন মেয়েটাকে। আকাশি সাদা কম্বিনেশনের থ্রি পিস জামা পড়নে৷ এই অফিসের প্রত্যেকটা সাধারণ স্টাফও এই মেয়ের চেয়ে দামি কাপড় পড়ে অফিসে আসে। ব্যাপারটা খেয়াল হতেই বিরক্তি কাজ করলো রাহাতের। তার উপরে তার রোমান্সের চৌদ্দটা বাজিয়েছে মনে পড়তেই রাগে ভ্রু কুঁচকে গেল।।
-এই মেয়ে?? তোমার সাহস হয় কি করে এভাবে পারমিশান না নিয়ে আমার রুমে আসার??
-এই মেয়ে?? তোমার সাহস হয় কি করে এভাবে পারমিশান না নিয়ে আমার রুমে আসার??
-ম্যাম?? আপনি মে বি মিস জুলি? স্যারের পি.এ??
-ইয়েস-----।।
-ইউ আর ফায়ারড ফ্রম নাউ।। জাস্ট লিভ------।
-হু দা হেল আর ইউ?? হ্যালো মিস??
-স্যার আই এম ইউর নিউ পি.এ। আর ম্যাম?? প্লিজ, আপনার এখানে আর কাজ নেই। স্যারের কি কি প্রোগ্রাম পেন্ডিং আছে আমাকে বুঝিয়ে দিবেন আসুন------
-হোয়াদ্দা হেল স্যার!? আমাকে.....
-রিল্যাক্স জুলি,ওর কথায় কান দিও না তো। কোত্থেকে কোন পাগল এসে বলবে সে আমার পি এ আর আমিও সেটা মেনে নিব?? ইজ দিস এ ব্ল্যাডি জোক??---- হেই মিস?? হু দা হেল আর ইউ??
-স্যার?? আমি মায়া। আপনার নতুন পি.এ। বললাম তো।।
মায়া নামের মিষ্টি মেয়েটা জুলিকে একটু সাইডে সরিয়ে টেবিলের উপরে একটা ফাইল রেখে সামনে আসার সময় জুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। মেয়েটার কাজ দেখে রাহাত আর জুলি দুজনেই থতমত খেয়ে কি বলবে কয়েক মিনিটের জন্য ভুলেই গেল৷ মায়াও এই সুযোগে জুলির হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে দিল। ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হল যে রাহাত বা জুলি কেউ কিছু বলতেই পারল না। জুলি রেগে লাল হয়ে গেল ওকে রুম থেকে বের করে দেয়ায়।
-হেই?? আই উইল কিল ইউ ব্লাডি বিচ-----
-মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ মিস জুলি। আর এই রুমে ডোকার চেষ্টা করবেন তো আমি সিকিউরিটি ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করাবো অফিস থেকে------
কথাটা শেষ করার আগেই রাহাত মায়াকে চেপে ধরলো দেয়ালের সাথে। ভয়ে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলেও রাহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো মায়া। রাহাতের চোখ থেকে আগুন ঝড়ে পড়ার মতো অবস্থা।
-হেই মিস নিউ পি.এ?? তোমাকে এ্যাপয়েন্ট করেছে কে?? হ্যাঁ?? সো মি ইউর ব্লাডি এ্যাপয়নমেন্ট লেটার। জাস্ট দেখাও, নয়তো আমার মুড স্পয়েল করার শাস্তি তো তুমি পাবেই।
-স্যার????
-হেল উইথ ইউর স্যার। কে এ্যাপয়েন্ট করেছে এই দাদি আম্মাকে!! আমার পি.এ করে!!? জাস্ট আনসার মি?
রাগের চোটে মায়ার কাঁদকাঁদ মুখটা এতোক্ষণ খেয়াল করে নি রাহাত। মেয়েটার চোখে কি এক নেশা আছে। কিসের এক মায়া। আর টুপ করে এক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে পড়তেই অবাক দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো রাহাত। মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগ ধরে রাখতে পারল না রাহাত। মায়াবী চোখের মুগ্ধতায় হা করে তাকিয়ে রইলো।
-মিস্টার রাহাত মাহবুব চৌধুরী? ওকে আমি এ্যাপয়েন্ট করেছি। আজীজ মাহমুদ চৌধুরী। আজ থেকে জুলি ডিসমিস।
-স্যার???
-জাস্ট শাট আপ।৷ এন্ড গেট আউট মিস জুলি।। অফিস কাজের জায়গা। বসের সাথে রোমান্স করার জায়গা নয়, আউট।মানুষটার কথা শুনেই রাহাত মায়াকে ছেড়ে দিতেই মেয়েটা এক ছুটে লোকটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রাহাতের চোখ আবার লাল হয়ে উঠছে রাগে। জুলিও চলে গেছে। রাতের জন্য কত কি প্ল্যানিং করে রেখেছিল রাহাত। সব মাটি হয়ে গেল এই মেয়েটার কারণে। ভাবতেই রাগটা একেবারে মাথায় উঠেছে রাহাতের।
-ড্যাড?? আর ইউ ক্রেজি?? এই গাঁইয়া মার্কা মেয়েটা আর আমার পি.এ? জাস্ট সিরিয়াসলি? এর ড্রেস আপ দেখো?? আমাদের অফিসের সুইপারগুলোর ড্রেসও এর চেয়ে বেটার।হাহ, হেই মিস?? জাস্ট গেট লস্ট। আর জুলিকে গিয়ে সরি বলো যা করেছ তার জন্য। আউট।
-মায়া মা?? সামনে যে কেবিনটা দেখছ সেটাই আজ থেকে তোমার কেবিন।জাস্ট একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দু মিনিট তোমার স্যা-রের ব্যাপারটা মিটিয়েই আসছি। কাজ বুঝিয়ে দিব কি কি করতে হবে।
মায়া মুখে হাত দিয়ে কান্না চেপে ছুটে বেরিয়ে কেবিনটায় ঢুকে গেল। রাহাতের বাবা এবার রাহাতের দিকে তাকালেন।
-ড্যাড??
-এই মেয়েটার কারণেই আজ তোমার ড্যাড মানে বাবা তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। বেঁচে আছে।অবশ্য আমি মরে গেলেও তোমার কিছু যায় আসতো বলে মনে হয় না।তোমার প্রজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য আমার সমস্ত সম্পত্তি তো তোমার নামেই চলে যেত।
-ড্যাড!! কি যা তা বলছো?? কি হয়েছিল?? ফর গড সেইক, প্লিজ বলবা আমাকে??
-আমি জগিং থেকে ফেরার সময় হঠাৎ প্রেসার বেড়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম। মায়াই আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে।
-হোয়াট?? ড্রাইভার তো তোমার সাথে যায় ডেইলি?? এই অকর্মার ঢেঁকির চাকরি শেষ আজকে,
-হোয়াট?? ড্রাইভার তো তোমার সাথে যায় ডেইলি?? এই অকর্মার ঢেঁকির চাকরি শেষ আজকে,
-আর মায়াকে পি.এ না করলে তোমার প্রজেক্টের কথাও ভুলে যাও, মিস্টার রাহাত।
-ড্যাড?? ওকে। বাট ও তো এসব কিছুই বুঝবে না।
-সেসব তোমাকে ভাবতে হবে না। আগে কাজ কেমন দেখো, তারপর রায় দিও।
আজীজ সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আরেকবার ছেলের দিকে ফিরে তাকালেন।
-আর হ্যাঁ মাই সান।৷ জুলিকে যেন আমি আজকের পর আর অফিসে না দেখি। সি ইজ ফায়ার্ড মিনস ফায়ার্ড।।
বাবার চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে ধপ করে রুমের এক পাশে সাজানো সোফায় বসে পড়লো রাহাত। এবার কি হবে বুঝতেই পারছে না। প্রজেক্টটা ওর ড্রিম প্রজেক্ট। কি করবে ভাবতে পারছে না বেচারা। আর মায়াকে পি.এ ও মানতে পারছে না।
চলবে.........

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন