সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-পাঁচ|


দেখতে দেখতে কয়েকটা মাস কেটে গেল। রাহাতেরও যেন তার মায়াবতীর ঘোর লেগে গেছে। আগে তার রাতটা কাটতো নাইট ক্লাবে বন্ধুদের সাথে ড্রিংকস আর আড্ডা এসব করে করে। আর দিনটা শুরুই হতো কোন কোকিল কণ্ঠীর কল রিসিভ করে৷ আজকাল এসব আর হয় না। সকাল হতেই নাস্তা করে অফিসে ছোটে রাহাত। রাতে ৯টা বাজলে মায়াকে নিয়ে বের হয় অফিস থেকে। ওকে ফ্ল্যাটে ড্রপ করে বাসায় যায়। আড্ডা, ড্রিংকস, মেয়ে, ক্লাব সব যেন পিছে ছেড়ে এসেছে রাহাত। শুধু এই মায়াবতীটার জন্য?? ভাবতেই অবাক লাগে রাহাতের।

রাহাত অফিসে নিজের রুমে বসে এসব ভাবছে আর নিজের মনেই হাসছে। কি জাদু করেছে এই মেয়েটা ওকে?? মেয়েটা সামনে না থাকলে যেন সময়টা কাটতেই চায় না। রাতটা যে কি করে কাটায় সে কেবল রাহাত নিজেই জানে। এই যে এখনও সময়টা কাটছে না। মেয়েটা কখন রুমে গেছে!! আসে না কেন?? রাহাত হাতের ঘড়িতে সময় দেখলো। আধা ঘন্টার কিছুটা বেশি হচ্ছে। এখন আসতে বললে না মেয়েটা রেগে যায়!! বলা যায় না!! এ মেয়ের যা রাগ!! কথায় কথায় খালি 'কাল থেকে আর অফিসে আসবো না' বলে হুমকি দেয়। উফ!!

রাহাত টেলিফোনটা কানে তুলে ১ প্রেস করলো। কলটা হতে হতে একসময় কেটে গেল। রাহাত ও মনের আনন্দে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে লাগলো। গোনা শেষ হতেই রাহাতের ভ্রু কুঁচকে গেল আপনাআপনিই। এর আগে এমন কখনো হয় নি৷ প্রতিবার রাহাত কল করে ১০ পর্যন্ত গুনে শেষ করার আগেই মায়া রুমে এসে হাজির হতো। আজ হঠাৎ কি হলো!! আবার কল করবে কিনা চিন্তা করতেই ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো রাহাতের।ল্যাপটপটা অন করে মায়ার রুমের সিসিটিভি ক্যামেরার সাথে লিংক করায় মন দিল। মায়া যেদিন ফ্ল্যাটে উঠলো সেদিন অফিসে আসতে পারে নি। সেদিন মায়াবতীকে দেখার জন্য রুমে ক্যামেরা ইনস্টল করিয়েছে রাহাত। সময়ে অসময়ে মেয়েটাকে দেখতে পারার লোভে।

রুমের ফুটেজ চালু হতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো রাহাতের। কি দেখছে সে!! মায়াবতীটাকে দেয়ালের সাথে জাপটে ধরে আছে কেউ একজন। আর মায়াবতী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।। কিন্তু সামনের অমানুষটার থেকে নিজেকে কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না। ধস্তাধস্তির আওয়াজের পাশে একটা শব্দ কানে এসে লাগলো রাহাতের।

-ছাড়ুন আমাকে।।

এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ার দরজার সামনে চলে এলো রাহাত। দরজাটা লক করা ভিতর থেকে। রাহাত কয়েকবার দরজা জোরে জোরে ধাক্কালো।

-মায়া?? মায়াবতী? দরজা খোলো?

কয়েক মিনিট পরে দরজাটা খুলে গেল৷ রাহাত দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই মায়া একছুটে এসে রাহাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মুখ লুকালো। রাহাত মায়াকে একটু আড়াল করে সামনের দিকে তাকালো। ছেলেটার কপালের একপাশ ফুলে গেছে। আর ফ্লোরে একটা ফুলদানি ভেঙে পড়ে আছে। রাহাত গায়ের কোটটা খুলে মায়াকে পড়িয়ে দিল। এক সেকেন্ডের জন্য মায়ার মুখটায় চোখ পড়েছে ওর। চোখে মুখে আতঙ্ক। চুল এলোমেলো হয়ে আছে। আর গালে আঙুলের ছাপ বসে আছে।৷ রাহাত এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে আনলো। সাথে চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি সব চলছে।

রাহাতের আওয়াজ শুনে অফিসের সবাই বসার রুমটায় এসে জোট হয়েছে। রাহাত টেনে এনে ছেলেটাকে সবার সামনে এনে ফেললো। ছেলেটা হুমড়ি খেয়ে সোফার উপর পড়লো। রাহাত রাগের চোটে কথাই বলতে পারছে না। কেউ ভয়ে ওর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছে না। রাহাত মায়ার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

-গার্ডস?? এ যেন এখান থেকে এক পা ও নড়তে না পারে। ফাস্ট এইড দাও। আমি আসছি একটু পরে-।রাহাত রুমটার দরজা দিয়ে বের হতেই সবার কথা ফুটলো যেন। আলোচনা শুনে রাহাত থমকে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে গেল।

-দ্বীপ স্যার?? কি হয়েছে? আর রাহাত স্যারই বা এমন করছে কেন??

-আর বলো না। আমি কাজ করছিলাম। নতুন পি.এ টা আমাকে রুমে যেতে বলায় আমি ওর রুমে গেলাম। মেয়েটা বদের হাড্ডি।৷ দরজা বন্ধ করে নিজেই কাহিনী শুরু করেছে। এর মধ্যে স্যার কেন এলেন কে জানে!! স্যার আসতেই এই মেয়ের ভরং একেবারে বদলে গেল। স্যারের কাছে আমাকে কালার করেছে। স্যারকে তো জানো?? উনি রেগে গিয়ে এসব।

রাহাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মায়ার রুমে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা এখনো একই জায়গায় শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাহাত আলতো করে তার মায়াবতীর গালে হাত ছোঁয়াতেই মায়া আঁতকে উঠে তাকালো রাহাতের দিকে।।

-এই মায়াবতী?? আমি তো??

-স্যার??

-এসো তো?? এখানে বসো।

রাহাত মায়াকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে কি মনে হতেই উঠে দাঁড়ালো।

-তুমি ১ মিনিট অপেক্ষা করো?? আমি এক্ষুণি চলে আসবো--।।

-------------------------

-ভয় নেই। আর কেউ আসবে না।

রাহাত নিজের রুম থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়েই ছুটে আবার মায়ার রুমে চলে এলো। মায়া মাথা নিচু করে কাঁদছে দেখে রাহাত হাঁটু গেড়ে মায়ার সামনে বসে পড়লো। মায়ার হাতটা আলতো করে তুলে ধরলো। হাতে আঁচড়ের দাগগুলো থেকে রক্ত ঝরছে দেখে রাহাতের নিজেরই চোখে পানি চলে এলো। মাথা নিচু করে মায়ার হাতে স্যাবলন লাগাতে শুরু করেছে রাহাত।।
-মায়া?? কি হয়েছিল?

----------------------------------

-বলবে আমাকে প্লিজ?? তোমাকে যে কষ্ট দিবে তাকে খুন করে ফেলবো আমি। কিন্তু তার আগে সবটা জানা দরকার আমার।

-আপনার দেয়া ফাইলটা চেক করছিলাম রুমে বসে।মোটামুটি কাজ শেষের দিকে এমন সময় দ্বীপ স্যার রুমে আসেন। আজেবাজে কথা বলছিল আপনার আর আমার নামে। আমি উনাকে রেগে গিয়ে চলে যেতে বলেছিম উনি চলে যাচ্ছিলেন। পরে খেয়াল করলাম না গিয়ে উনি দরজা লক করে দিয়েছেন।।আমার সাথে জবরদস্তি করার চেষ্টা করে। আপনার কলটা রিসিভ করতে পারি নি। আপনার দরজায় ধাক্কানোর শব্দ শুনে আর কিছু না ভেবে ফ্লাওয়ার ভাসটা হাতের কাছে পেয়ে মাথায় মেরে দিয়েছিলাম।

-মায়া?? শান্ত হও প্লিজ??

-আমি আর অফিসে আসবো না কাল থেকে। রেজিগনেশন দিয়ে দিব আজকেই। সরি স্যার।

রাহাত আলতো করে মায়াবতীকে বুকে টেনে নিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল। কিছু বলার ভাষা ওর নেই। কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ার হাতটা চেপে ধরলো রাহাত।

-চলো??

-কোথায় স্যার??

-চুপ একদম।

রাহাত মায়াকে নিয়ে বোর্ডরুমে এলো। একটা মাইকে এ্যানাউন্স করলো সবাইকে এই মূহুর্তে বোর্ড রুমে আসতে। আর পিয়নকে বলে এসেছে ওর ল্যাপটপটা নিয়ে আসতে। সবাই একে একে রুমে আসছে।। আর রাহাত নিজের ল্যাপটপটা প্রজেক্টারে কানেক্ট করছে। চোখ মুখ থমথমে হয়ে আছে। কেউ ভয়েই কিছু বলছে না। মায়াকে দেখেও সবাই নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করছে। মুখ তুলে একজনকে ইশারা করতেই দ্বীপকে নিয়ে এলে গার্ডরা। চোয়াল শক্ত করে প্রজেক্টরটা চালু করলো রাহাত। আর সবাই হাকরে দেখছে কি হচ্ছে।। সব থেকে বেশি ধাক্কাটা খেয়েছে দ্বীপ নিজে।। এতোক্ষণের এতো কাহিনী এভাবে মাঠে মারা যাবে বেচারা ভাবতেই পারে নি।

বোর্ড রুমে আসা প্রত্যেকটা মানুষ হা করে প্রজেক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে। সাউন্ড নেই ফুটেজটাতে। তবুও সবটা সবার কাছে স্পষ্ট। কারো বুঝতে এক দন্ডও দেরি হচ্ছে না ঠিক কি হয়েছিল মায়ার কেবিনে। দ্বীপের নিজে থেকেই মায়ার কেবিনে যাওয়া, কথা কাটাকাটি, দ্বীপের বেরিয়ে যাওয়ার নাটক, ফিরে এসে রুমের দরজা লক করা, মায়ার সাথে জবরদস্তি করা, হাতাহাতি, আর শেষে দ্বীপের মাথায় মায়ার ফুলদানি ভেঙে দরজা খুলে দেয়া এতটুকু পর্যন্ত সবটা সবাই হা করে দেখলো। কেউ একটা কথাও বলতে পারলো না। এমন একটা অমানুষের সাথে একই অফিসে কাজ করছে ভাবতেও মেয়ে স্টাফদের গা শিউরে উঠছে।

এতোক্ষণ সবাইকে কি সুন্দর হাতে রেখেছিল দ্বীপ। জাস্ট একটা ভিডিও ওর সব পর্দা ফাঁশ করে দিলো। এভাবে ধরা খেয়ে যাবে সে একবারও ভাবে নি। আর ওই রুমের সিসিটিভি ফুটেজ রাহাতের কাছে কি করে এলো সেটাও দ্বীপ বুঝতে পারছে না। দুর্বল গলায় কিছু বলার জন্য মুখ খুললো দ্বীপ।

-সব এই মেয়ের কারসাজি। এই ভিডিও নকল। কাউকে টাকা দিয়ে করিয়েছে।

-তাই নাকি মিস্টার দ্বীপ?? তা কাকে টাকা দিয়ে এই ভিডিও বের করেছে উনি?? আমাকে?? কজ এই সিসিটিভি ফুটেজ তো আমার ল্যাপটপ থেকে নেয়া। দেখছেন না??

-স্যার??

-সবার উপরে নজর রাখাটা অফিসের বসের দায়িত্ব। সিসিটিভি দিয়েপ্রত্যেকটা রুমকে তো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয় কি?? অফিসে কে কি করছে সেটা তো আমার জানার দরকার।।

-স্যার? আসলে।

-আর কত মিথ্যে বলবেন? আপনি জানেন আপনি কি করেছেন--। বাকিদেরও তো জানা দরকার। ওয়েট। মায়া??

রাহাত মায়ার হাত ধরে টেনে সবার সামনে দাঁড় করালো।।

-এই মেয়েটাকে দেখুন সবাই। আজ ওর জায়গায় কিন্তু আপনাদের মধ্যে যে কেউই হতে পারতো। তাই না?? তখন কি করতেন?? সিসিটিভি ফুটেজ টা না হয় নকল বলবেন কিন্তু এই মেয়েটার গায়ের চোটগুলো?? দাগ গুলো?? এসব মিথ্যে?? সব সময় আমরা বলি মেয়েরা হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়-কজ তারা কিছু বলে না বলে। আসলে কথাটা মোটেও ঠিক না। মেয়েরা এই রকম হ্যারাসমেন্টের শিকার হয় আশেপাশের আপনাদের মতো মানুষদের কারণে। যারা মেয়েদের অসম্মানটা দেখেও না দেখার ভান করে। আর উল্টো মেয়েটাকে টিজ করে যে সে পুরুষদেরকে শরীর বিলিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনাদেরকে আর কি বলবো?? গার্ডস,উনাকে থানায় দেয়ার ব্যবস্থা করো।

গার্ডদেরকে লাস্ট কথাটা বলেই মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এলো রাহাত। একেবারে গাড়িতে বসিয়ে হাত ছেড়েছে মায়ার। মায়াও হা করে এতোক্ষণ ধরে এই মানুষটাকে দেখছিল। মানুষটা অনেকটা রেগে গেছে। তাই সাহস করে কিছু বলতেও পারছে না মায়া। কি বলবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না বেচারি।।

-মায়াবতী?? বেশি কষ্ট হচ্ছে?? ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই??

-নাহ। লাগবে না। বাসায় যাবো স্যার।

-হুম। কিন্তু এভাবে??

-হুম। এভাবে বাসায় গেলে মা হয়তো টেনশন করবেন। কিন্তু কি আর করবো বলুন??
সবই আমার কপাল!

-চুপ। তুমি চুপ করে বসে থাকো। আমি ব্যবস্থা করছি।

-কি ব্যবস্থা??

রাহাতের লাল চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা আর শেষ করতে পারলো না মায়া। মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো। রাহাত ড্রাইভের ফাঁকে ফাঁকে মায়ার মুখটা দেখছে। মায়াবতীটা ক্লান্ত হয়ে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। কি ভেবে রাহাত গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে ড্রাইভে মন দিলো। অনেকক্ষণ পর মায়ার ঘুম ছুটলো কারো ডাকে। চোখ খুলে দেখলো রাহাত ডাকছে।

-এই মায়াবতী?? উঠো না?? কতোক্ষণ ধরে ডাকছি। কি ঘুম রে বাবা!!??

-স্যার?? এটা কোথায় আনলেন!!

-আরে বাবা। আমাদের বাড়িতে। এই অবস্থায় বাসায় ফিরলে কাল থেকে তোমাকে হয়তো আর অফিসেই আসতে দিবে না। সেই রিস্ক বাবা আমি নিতে পারবো না।

-মানে??

-মানে হলো। আপনি এখন কিছুক্ষণ এখানে রেস্ট করুন। ড্রেস চেইঞ্জ করুন। খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবেন।

-কিন্তু স্যার?? আপনার বাড়ির সবাই। কেউ কিছু মনে করবে না??

-মনে কে কি করবে!! বাবাই তো আছে। যিনি তোমাকে জবটা দিলেন।

-ওহ,আর।

-একটু চুপ থাকো না বাবা। এসো??

মায়া গাড়ি থেকে নেমে আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে পা রাখলো। রাহাত ওর পাশে পাশে হাঁটছে। মায়াবতীটা আজ প্রথম ওর বাড়িতে এলো। যদিও মেয়েটাকে এভাবে বাড়িতে আনতে হবে ভাবেই নি রাহাত। তবুও ভালো লাগছে রাহাতের। মায়াবতীটা যা দেখছে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। সেই অবাক মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে রাহাত। পৃথিবীর সমস্ত সুখের বিনিময়ে এই মায়াবতীটাকে তার চাই ই চাই।রাহাত মায়াকে একটা রুমে বসিয়ে আলমারি আর ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো। নিজে বাবার সাথে কথা বলতে গেল। বাবাকে সবটা জানিয়ে না রাখলে কখন কি হবে তার ঠিক নেই। মায়া ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আলমারিটা খুলে জাস্ট হা করে তাকিয়ে রইলো। পুরো আলমারি জুড়ে শাড়ি আর শাড়ি। এতো শাড়ি হয়তো কোন শাড়ির দোকানেও পাওয়া যাবে না। শাড়ি পড়ার যাবতীয় খুঁটিনাটি জিনিসগুলোও একসাথে ভাঁজ করা।মায়া একবার ঢোক গিললো। এই বাড়িতে রাহাত আর তার বাবা ছাড়া নাকি কেউ থাকে না। তবে এই এতো শাড়ি সাজ পোশাক এলো কোথা থেকে!! কার এগুলো!!

ভাবতে ভাবতেই সব কটা শাড়িতে হাত বুলাচ্ছিল মায়া৷ একটা শাড়িতে চোখ আটকে গেল। কলা পাতা রঙা একটা জামদানি শাড়ি। দেখেই মায়ার পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দেখেই অনেক দামি মনে হচ্ছে শাড়িটা। সবগুলো শাড়িই দামি। পড়া ঠিক হবে কিনা কিছুই বুঝতে পারছে না বেচারি। এর মধ্যেই দরজায় নক পড়লো।

-মায়াবতী?? কই হলো??

-স্যার??

-কি হলো?? কোন প্রবলেম??

-স্যার। শাড়ি পড়বো??

-হুম। তোমাকে তো পুরো আলমারিটাই দিয়ে দিলাম। নাকি চয়েজ হচ্ছে না? আরো লাগবে নাকি শাড়ি??

-এতো দামি শাড়ি ।

-শাড়িগুলো তো তোমাকেই পড়তে হবে।

-জি??

-তাড়াতাড়ি চেইঞ্জ করে বেরিয়ে এসো না?? খেতে হবে।

-আসছি ।

শাড়িটা সুন্দর করে পড়ে বের হলো মায়া। দরজা খোলার শব্দে এগিয়ে এসেই মায়াকে দেখে থ হয়ে গেল রাহাত। এ কাকে দেখছে সে?? একেবারে কোন রকমের সাজ নেই মুখে। শুধু কলাপাতা রঙা জামদানি আর খোলা চুল। তাতেই মায়াবতীকে আরো মায়াবী লাগছে রাহাতের। চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে রাহাতের।। এদিকে রাহাতের এমন চাহনিতে লজ্জায় মাথাই তুলতে পারছে না মায়া।

চলবে.............

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...