মায়া রেগেমেগে রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব সম্ভবত রাগের চোটে কথাই বলতে পারছে না। রাহাত সেটাও অবাক হয়ে দেখছে। মায়াবতীটা এভাবে রাগছে দেখে ভালো লাগছে খুব। আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি রাহাত মাহবুব চৌধুরীর সামনে গলা চড়িয়ে কথা বলার। অথচ এই মায়াবতী মেয়েটা সব নিয়ম ভেঙে দিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে৷ একেবারে চোখে চোখ রেখে। কেন যে ওর রাগী লাল টমেটোর মতো মুখটা দেখতে এতো ভালো লাগছে রাহাত বুঝতে পারছে না। কি আছে এই দাদিআম্মা মার্কা গেঁয়ো মেয়েটার মধ্যে?? কিসের এতো টান অনুভব করছে ওর জন্য??
-আপনার কি মনে হয় পি.এ হলেই এমন কোট, শার্ট, প্যান্ট পড়ে অফিসে আসতে হবে??
-সবাই আসে।
-সবাই আসলেই আমাকেও আসতে হবে??
-সবাই আসতে পারলে তুমি আসবে না কেন??
-সবাই যদি জব করতে এসে বসদের সাথে রাত। বসদের সাথে প্রেম করে তো আমাকে করতে হবে??
-তুমি চাইলে করতেই পারো।
-কি বললেন আপনি?? আমাকে কি আপনার এতোটা চিপ মনে হয়?? যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধনী বসকে বিয়ে করে তার সমস্ত সম্পত্তি নিজেরনামে করে নিবো??
-সেটা বলি নি। ----ভালোবেসে বিয়ে করে তো সারাজীবন আগলে রাখতে পারো??
-কি বললেন আপনি??
-হুম?? কই কিছু না।
-কি বললেন আবার বলুন??
-না না--। সত্যি কিছু বলি নি।
-পি.এ হিসেবে আমাকে যখন রাখবেনই না তো এতো কাহিনী করার তো কিছু নেই। কাল থেকে আমি আসবোই না। রাখেন আপনার শপিং।৷ আমি গেলাম।
-আরে?? এই না না না--। মায়াবতী? সরি। তোমার যা মন চায় নাও--। আমি আর কিচ্ছু বলবো না--। একটা কথাও না-----।। প্রমিস।।
মায়া হাতের ড্রেস দুটো নিয়েই আবার চলে গেল। রাহাত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এই মেয়েকে চোখের সামনে না দেখলে পাগল হয়ে যাবে ও নিজেই। হাতের কোট, সুট গুলো রেখে দিয়ে একটু হেঁটে হেঁটে আশপাশের ড্রেসগুলো দেখছে রাহাত৷ একটা শাড়ির দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল রাহাত। মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। নিজের পছন্দ মতো কেনাকাটা করে মায়ার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছে রাহাত। এই মেয়ের এতো সময় লাগছে কেন কে জানে!!? কি যে করবে বুঝতেই পারছে না। এর মধ্যে মায়া এগিয়ে আসছে দেখে এগিয়ে গেল রাহাত।।
-কোথায় হারিয়ে গেলে??
-কোন ড্রেসটা নিব বুঝতে পারছি না--।
রাহাত মায়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো দুটো থ্রিপিস জামা এখনো। রাহাত ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকলো।
-দুটোই নাও। সমস্যা কি?-দুটো ড্রেস দিয়ে কি করবো!!?
-দুটো মানে?? তুমি আর ড্রেস সিলেক্ট করো নি??
-এতো ড্রেস দিয়ে করবো??
-ওহ। এই মেয়ে?? মাথা কি খারাপ??
-মাথা খারাপ হবে কেন!! আজব?? আজ চাকরি পেতে না পেতেই এতো কেনাকাটা করে টাকা নষ্ট করবো নাকি??
-আল্লাহ!! এই মেয়েটার মাথায় কি চলে?? এই তুমি আসো তো??
রাহাত মায়ার হাত ধরে টেনে এনে শোরুমটার একটা সোফায় বসিয়ে দিল। ড্রেস দুটো নিয়ে একবার দেখলো। নিজে কয়েকটা সুতার কাজ করা ড্রেস নিয়ে কাউন্টারে দিয়ে এলো। আরো কিছু কিনলো ঘুরেঘুরে। তারপর বিল পে করে প্যাকেটগুলো গাড়িতে দিয়ে আসতে বলে মায়াকে নিয়ে বের হলো শোরুমটা থেকে।।
-বলো?? কি খাবে??
-কিছু না।
-আচ্ছা। চলো?? তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আসি।
-এই---- না না না।
-কি সমস্যা তোমার?? কথায় কথায় এতো না না করো কেন!!?
-আমি চলে যেতে পারবো--। কে দেখে কি বলে ফেলবে।
-যার যা ইচ্ছে বলুক। চলো এখন? শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে রাস্তায় কি টেক্সির জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি??
-শপিং ব্যাগ মানে??
-চুপ থাকো তো?? চলো?? বেশি বকবক করলে খবর আছে তোমার--।অনেকগুলো শপিংব্যাগ শোরুমের ছেলেটা গাড়িতে দেখে যাওয়ার পর রাহাত গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। এবারে সিটবেল্টটা মায়া নিজে পড়েছে। মায়া বাসার এরিয়ার নাম বলতেই রাহাত সেদিকে ড্রাইভ করছে। একটু পর পর মায়াকে দেখছে।৷ মায়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে৷ রাস্তার ব্যস্ত ভিড় দেখছে। আর রাহাত দেখছে তার মায়াবতীকে। চুলগুলো বেঁধে রাখা। তবুও খোলা জানালা দিয়ে আসা বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। রাহাতের ইচ্ছে করছে আলতো করে টেনে কাছে নিয়ে মায়াবতীর চুল খুলে দিতে। কিন্তু ভাবনাটা মাথা থেকে বিদায় করে আবার ড্রাইভিং করায় মন দিল।। একটা গলির সামনে আসতেই মায়া চেঁচিয়ে উঠলো।৷
-এই?? রাখেন রাখেন রাখেন??
রাহাত গাড়ি ব্রেক করে মায়ার দিকে তাকালো।
-কি হয়েছে মায়াবতী??
-স্যার আমি এখানে নামবো।
-এখানে নামবে কেন?? বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছি।
-না না না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ধরো?? এগুলো তোমার জন্য।
-এসব!!!
-চুপচাপ বাসায় যাও। কালকে অফিসের ফ্ল্যাটে উঠবে। নো মোর আরগুমেন্ট। সকালে পিয়নকে কল দিবা। এসে নিয়ে যাবে ফ্ল্যাটে।গট ইট?? বায়---।।
মায়া এতোগুলো শপিংব্যাগ নিয়ে গলিটার মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলে রাহাতও গাড়ি স্টার্ট দেয়।।
কতো সুন্দর একটা দিন কাটলো। সারাদিনের কাজ শেষ করে খাটে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবছে রাহাত। মেয়েটার আনকোরা সাদামাটা মুখটা চোখের সামনে ভাসছে বারবার। এর মধ্যে একবারও জুলির কথা মনে পড়ে নি রাহাতের। মায়ার জন্য যে জুলির সাথে রাতের প্ল্যানটার বারোটা বেজেছে-সেটা একেবারে ভুলেই গেল রাহাত। এখন তার সমস্ত সত্তা জুড়েযে শুধুই এক মায়াবতীর বসবাস। আর কারো জায়গা নেই সেখানে।।
চলবে.......
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন