সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-চার|


মায়া রেগেমেগে রাহাতের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব সম্ভবত রাগের চোটে কথাই বলতে পারছে না। রাহাত সেটাও অবাক হয়ে দেখছে। মায়াবতীটা এভাবে রাগছে দেখে ভালো লাগছে খুব। আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি রাহাত মাহবুব চৌধুরীর সামনে গলা চড়িয়ে কথা বলার। অথচ এই মায়াবতী মেয়েটা সব নিয়ম ভেঙে দিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে৷ একেবারে চোখে চোখ রেখে। কেন যে ওর রাগী লাল টমেটোর মতো মুখটা দেখতে এতো ভালো লাগছে রাহাত বুঝতে পারছে না। কি আছে এই দাদিআম্মা মার্কা গেঁয়ো মেয়েটার মধ্যে?? কিসের এতো টান অনুভব করছে ওর জন্য??

-আপনার কি মনে হয় পি.এ হলেই এমন কোট, শার্ট, প্যান্ট পড়ে অফিসে আসতে হবে??

-সবাই আসে।

-সবাই আসলেই আমাকেও আসতে হবে??

-সবাই আসতে পারলে তুমি আসবে না কেন??

-সবাই যদি জব করতে এসে বসদের সাথে রাত। বসদের সাথে প্রেম করে তো আমাকে করতে হবে??

-তুমি চাইলে করতেই পারো।

-কি বললেন আপনি?? আমাকে কি আপনার এতোটা চিপ মনে হয়?? যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধনী বসকে বিয়ে করে তার সমস্ত সম্পত্তি নিজেরনামে করে নিবো??

-সেটা বলি নি। ----ভালোবেসে বিয়ে করে তো সারাজীবন আগলে রাখতে পারো??

-কি বললেন আপনি??

-হুম?? কই কিছু না।

-কি বললেন আবার বলুন??

-না না--। সত্যি কিছু বলি নি।

-পি.এ হিসেবে আমাকে যখন রাখবেনই না তো এতো কাহিনী করার তো কিছু নেই। কাল থেকে আমি আসবোই না। রাখেন আপনার শপিং।৷ আমি গেলাম।

-আরে?? এই না না না--। মায়াবতী? সরি। তোমার যা মন চায় নাও--। আমি আর কিচ্ছু বলবো না--। একটা কথাও না-----।। প্রমিস।।

মায়া হাতের ড্রেস দুটো নিয়েই আবার চলে গেল। রাহাত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এই মেয়েকে চোখের সামনে না দেখলে পাগল হয়ে যাবে ও নিজেই। হাতের কোট, সুট গুলো রেখে দিয়ে একটু হেঁটে হেঁটে আশপাশের ড্রেসগুলো দেখছে রাহাত৷ একটা শাড়ির দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল রাহাত। মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। নিজের পছন্দ মতো কেনাকাটা করে মায়ার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছে রাহাত। এই মেয়ের এতো সময় লাগছে কেন কে জানে!!? কি যে করবে বুঝতেই পারছে না। এর মধ্যে মায়া এগিয়ে আসছে দেখে এগিয়ে গেল রাহাত।।

-কোথায় হারিয়ে গেলে??

-কোন ড্রেসটা নিব বুঝতে পারছি না--।

রাহাত মায়ার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো দুটো থ্রিপিস জামা এখনো। রাহাত ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকলো।

-দুটোই নাও। সমস্যা কি?-দুটো ড্রেস দিয়ে কি করবো!!?

-দুটো মানে?? তুমি আর ড্রেস সিলেক্ট করো নি??

-এতো ড্রেস দিয়ে করবো??

-ওহ। এই মেয়ে?? মাথা কি খারাপ??

-মাথা খারাপ হবে কেন!! আজব?? আজ চাকরি পেতে না পেতেই এতো কেনাকাটা করে টাকা নষ্ট করবো নাকি??

-আল্লাহ!! এই মেয়েটার মাথায় কি চলে?? এই তুমি আসো তো??

রাহাত মায়ার হাত ধরে টেনে এনে শোরুমটার একটা সোফায় বসিয়ে দিল। ড্রেস দুটো নিয়ে একবার দেখলো। নিজে কয়েকটা সুতার কাজ করা ড্রেস নিয়ে কাউন্টারে দিয়ে এলো। আরো কিছু কিনলো ঘুরেঘুরে। তারপর বিল পে করে প্যাকেটগুলো গাড়িতে দিয়ে আসতে বলে মায়াকে নিয়ে বের হলো শোরুমটা থেকে।।

-বলো?? কি খাবে??

-কিছু না।

-আচ্ছা। চলো?? তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আসি।

-এই---- না না না।

-কি সমস্যা তোমার?? কথায় কথায় এতো না না করো কেন!!?

-আমি চলে যেতে পারবো--। কে দেখে কি বলে ফেলবে।

-যার যা ইচ্ছে বলুক। চলো এখন? শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে রাস্তায় কি টেক্সির জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি??

-শপিং ব্যাগ মানে??

-চুপ থাকো তো?? চলো?? বেশি বকবক করলে খবর আছে তোমার--।অনেকগুলো শপিংব্যাগ শোরুমের ছেলেটা গাড়িতে দেখে যাওয়ার পর রাহাত গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। এবারে সিটবেল্টটা মায়া নিজে পড়েছে। মায়া বাসার এরিয়ার নাম বলতেই রাহাত সেদিকে ড্রাইভ করছে। একটু পর পর মায়াকে দেখছে।৷ মায়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে৷ রাস্তার ব্যস্ত ভিড় দেখছে। আর রাহাত দেখছে তার মায়াবতীকে। চুলগুলো বেঁধে রাখা। তবুও খোলা জানালা দিয়ে আসা বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। রাহাতের ইচ্ছে করছে আলতো করে টেনে কাছে নিয়ে মায়াবতীর চুল খুলে দিতে। কিন্তু ভাবনাটা মাথা থেকে বিদায় করে আবার ড্রাইভিং করায় মন দিল।। একটা গলির সামনে আসতেই মায়া চেঁচিয়ে উঠলো।৷

-এই?? রাখেন রাখেন রাখেন??

রাহাত গাড়ি ব্রেক করে মায়ার দিকে তাকালো।

-কি হয়েছে মায়াবতী??

-স্যার আমি এখানে নামবো।

-এখানে নামবে কেন?? বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছি।

-না না না।

-আচ্ছা ঠিক আছে। ধরো?? এগুলো তোমার জন্য।

-এসব!!!

-চুপচাপ বাসায় যাও। কালকে অফিসের ফ্ল্যাটে উঠবে। নো মোর আরগুমেন্ট। সকালে পিয়নকে কল দিবা। এসে নিয়ে যাবে ফ্ল্যাটে।গট ইট?? বায়---।।

মায়া এতোগুলো শপিংব্যাগ নিয়ে গলিটার মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলে রাহাতও গাড়ি স্টার্ট দেয়।।

কতো সুন্দর একটা দিন কাটলো। সারাদিনের কাজ শেষ করে খাটে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবছে রাহাত। মেয়েটার আনকোরা সাদামাটা মুখটা চোখের সামনে ভাসছে বারবার। এর মধ্যে একবারও জুলির কথা মনে পড়ে নি রাহাতের। মায়ার জন্য যে জুলির সাথে রাতের প্ল্যানটার বারোটা বেজেছে-সেটা একেবারে ভুলেই গেল রাহাত। এখন তার সমস্ত সত্তা জুড়েযে শুধুই এক মায়াবতীর বসবাস। আর কারো জায়গা নেই সেখানে।।

চলবে.......

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...