সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-এক|


Hay? Liza?? Are you free tonight? I can pay you for the night----.

-কত দিবেন?? স্যার?

-উউউউউউ, May be 50k per night.

-ওকে, স্যার। কোথায় আসতে হবে ম্যাসেজ করে দিবেন---।। চলে আসবো।

লিজা ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে রাহাত মানে ওর বসের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এই প্রথমবার এমন একটা বিশ্রি কাজ করতে যাচ্ছে মেয়েটা। প্রথম অভিজ্ঞতা। তাই শক্ত থাকতে চেষ্টা করছে মেয়েটা। এখন টাকার যে বড্ড প্রয়োজন ওর।

রাহাতও মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে কাকে কাকে কয়েকটা ম্যাসেজ করলো। ফিরতি ম্যাসেজ দেখে ঠোঁটের কোণে তারও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। লিজাকেও একটা ম্যাসেজ করে ফার্ম হাউসের ঠিকানা দিয়ে চেয়ারে বসে গা এলিয়ে দিল। রাতের চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়লো আবার।

রাতে রাহাত ফার্ম হাউজে ওয়েট করছে লিজার জন্য। মেয়েটা এতো দেরিকরছে কেন!! ঠিকানাটা খুঁজে পাচ্ছে না নাকি!! কল করবে?? ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। আর রাহাতের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। বাঁকা হাসি ফুটিয়ে রেখেই দরজাটা খুলে দিল। লিজা ফার্মহাউসে ঢুকলো। মুখটা ভয়েই শুকিয়ে গেছে৷ কি করছে- ভুল কি ঠিক-কিছুই সারাদিন মাথায় আসে নি। এই শেষ মূহুর্তে এসে মনে হচ্ছে কাজটা না করলেও হত। দিহান কথাটা জানলে কি করবে!! কাজটা না করলে মা আর ভাইকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে কথাটা মাথায় আসতেই জোর করে একটা হাসি মুখে আনলো।।

-হ্যালো স্যার---।

-হেই লিজা? বাড়ি খুঁজে পেতে দেরি করে ফেলেছ??

-সরি স্যার।।আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।

-বাহ,এলেও দেরিতে আবার যাবেও জলদী??!?

-----------------------

-নার্ভাস??? Want some drinks??

-no sir. থ্যাংকস

-then let's get started ....তাড়াতাড়ি শুরু করা দরকার-----

কথাটা শুনে একটু কেঁপে উঠে রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি লম্বা মানুষটার মুখটা দেখলে মনে হয় এই মানুষটা কোনদিন কোন অন্যায় করতেই পারে না। মুখের খোঁচা দাড়ি যেন অন্য রকম একটা বিশেষত্ব এনে দিয়েছি মুখে। চুলগুলো এতোটা পারফেক্ট করে আঁচড়ানো যে বাতাসে এলোমেলো হচ্ছেই না। সাদা শার্টটার হাতা কনুই থেকে ফোল্ড করা।গলার টাইটা টেনে খুলতে খুলতে এগিয়ে আসছে লিজার সামনে। লিজা চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইলো। যেভাবেই হোক কাজটা ওর করতেইহবে।

একটু পর লিজা কোমড়ে রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল। ডান হাতে কোমড় পেঁচিয়ে ধরেছে। আর বাম হাতে লিজার চোখের সামনে তুড়ি বাজালো দুবার।।

-হ্যালো ম্যাডাম?? এভাবে চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে?? তোমার না তাড়া আছে?? show me something different.. You know...

লিজা চোখ খুলতেই দেখলো লোকটার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে আছে। রাহাত হালকা করে টেনে খাটে ধাক্কা দিয়ে ফেললো। লিজা নরম ফোমের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে টের পেল মানুষ নামের জানোয়ারটা এগিয়ে আসছে ওর দিকে। আর কতোটা সময় বাকি!! কখন শেষ হবে এই বাজে স্বপ্নটার!! লিজা আবার চোখ বুজে শুয়ে রইলো। রাহাতের খাটের কাছে আসা টের পাচ্ছে। কোট, টাই, শার্ট এসবের ছুড়ে ফেলার খসখসে শব্দগুলোও টের পাচ্ছে লিজা।

রাহাত সামনে বাড়বে ঠিক সেই মূহুর্তেই লিজার মোবাইলটা যেন সর্বশক্তি দিয়ে বেজে উঠলো। লিজা রাহাত দুজনেই চমকে উঠলো।

-রিসিভ করো।

-ইয়াপ। হ্যালো??--দিহান??-- আরে নাহ--- আমি?? আমি বসের সাথে আছি--কাজ পড়ে গেছে একটু-------।এই?? না--- না নিতে আসতে হবে না-- আমি-- আমি পারব চলে আসতে-----না না--আরে--?? স্যার প্রচন্ড ভালো মানুষ---He is a perfect gentle man---কাজ করছি তো--রাখো হুম---বায়।

লিজার কথাগুলো শুনে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রাহাত। 'He is a perfect gentle man' কথাটা বলার সময় বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠেছিল মেয়েটার ঠোঁটের কোণে। সাজ বলতে কেবল চোখের কালোকাজলটা। মায়াবী কালো কাজলে টানা চোখদুটো কারো কথা মনে করাচ্ছে রাহাতকে। তার মায়াবতীর চোখগুলোও তো এরকমই মায়া জড়ানো। আজও তো তার সেই মায়াবতীর চোখের গভীরতা মাপার কথা ছিল। মায়াবতীটাও তো অপর প্রান্তে ভীত ছেলেটার মতো উৎকণ্ঠা নিয়ে ওর জন্য রাত জেগে বসে থাকে প্রতিদিন। ওর চোখে সেই মায়াটা তো আজও আছে। তবে কেন অন্য কারো দেহের ঘ্রাণ নিতে ছুটে এসেছে সে!!

-স্যার? সরি--- We can start now.--------

-Just get out liza------

-What??!!

-I said get out. পারলে ছেলেটার কাছে ফেরত যাও---আর হ্যাঁ টাকার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তোমার এ্যাকাউন্টে কালই টাকা পৌঁছে যাবে--- নাউ লিভ----

-স্যার???

-কেউ ভালোবাসলে তাকে ধোঁকা দেয়া উচিত নয় লিজা---ভয় পেও না। এই ব্যাপারটা তোমার আমার মাঝেই থাকবে। চাকরিটা ছাড়তে চাইলে অবশ্য------

- না স্যার--

-ওকে যাও এখন।৷ আমি বাসায় ফিরবো।আমার মায়াবতীটা অপেক্ষা করছে।তুমি ফিরে যাও লিজা।যত বড়ই সমস্যা হোক না কেন নিজের সম্মানটা অনেক বেশি দামি।কথাটা মাথায় রেখো।।

লিজা কোনমতে ব্যাগটা হাতে তুলেই ছুটে বেরিয়ে গেল। আর রাহাতও শার্ট আর কোট টাই হাতে তুলে পড়তে পরতেই ছুটলো। যে অন্যায়টা করেছে তার কোন ক্ষমা আছে কিনা রাহাতের জানা নেই। তবু নিজেরসবটা দিয়ে চেষ্টা করবে নিজেকে বদলানোর৷ অন্তত তার মায়াবতীটার জন্য।।

আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছল রাহাত। বেশ অনেক রাতই হয়েছে। ১ টা বাজছে সম্ভবত। রুমে এসে মায়াকে খুঁজলো রাহাত। রুমে নেই মেয়েটা। ওয়াশরুম, বারান্দা, ছাদ সব জায়গায় খুঁজে এলো। কোথাও নেই। গেল কোথায় মেয়েটা!! ক্লান্ত হয়ে খাটে বসে পড়তেই বেড সাইড টেবিলে একটা ভাঁজ করা কাগজ পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া দেখে ওটা হাতে নিল। মায়ার হাতের লেখা।

"রাহাত,

তুমি যখন চিঠিটা পাবে তখন শুধু এই বাসা থেকে না তোমার জীবন থেকেও আমি বহু দূরে চলে গেছি। বহু আগেই চলে যেতাম। ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে বদলে দিতে পারব। নাহ। আমি ব্যর্থ। পারি নি তোমাকে বদলাতে। রুমের ডেকোরেশন দেখে অবাক হয়েছ না? গতকাল সারাদিনেও বাসায় আসো নি। এমনকি রাতেও না। আসলে জানতে পারতে-গতকাল আমাদের সেকেন্ড ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি ছিল। ডেকোরেশনটা নষ্ট করতে ইচ্ছে হয় নি। মনের কোণে ছোট্ট-শেষ একটা আশা ছিল। তুমি হঠাৎ এসে জাপটে ধরে আমাকে চমকে দিবে৷ আর বলবেঃ- তোমার জন্য আমি সব বাজে অভ্যেস ছেড়ে দিব।। নাহ-সেটাও হয় নি। আজও তুমি অন্য কারো কাছে গেছো। কারো দেহে তোমার হাত খেলা করছে। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। তোমাকে এভাবে আর অন্য মেয়ের সাথে দেখতে পারছি না আমি। ডিভোর্স লেটারে সাইন করে দিয়েছি। তুমিও সাইনটা করে দিও। তারপর তো তুমি মুক্ত। একেবারের জন্য সব বাঁধন থেকেই মুক্ত। মিছেমিছির সম্পর্কটা দিয়ে আর বেঁধে রাখবো না তোমায়।

ভালো থেকো।

ইতি,হতভাগী।"

রাহাত মায়ার চিঠিটা হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে রইলো। পাশেই রাখা আছে ডিভোর্স লেটারটা। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে মায়ার নাম। কাগজটা একটু ভিজেও গেছে। বোধহয় মায়ার চোখের পানিতেই।।

চলবে.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...