সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-ছয়|


রাহাতের অপলক চাহনি দেখে মায়া লজ্জায় মুখটাও তুলতে পারছে না। এমন না যে এই মানুষটা শাড়িতে আজকে ওকে প্রথম দেখছে। প্রতিবারে শাড়িতে মায়াকে দেখে এভাবেই হা করে তাকিয়ে থাকে। আর এই অবাক চাহনিতেই মায়া লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে যায়। মায়া বেশ অনেকক্ষণ পর মুখ তুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষটা একইভাবে অপলকে ওকে দেখছে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মায়া রাহাতকে কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা!! মায়ার ডাক মনে হয় রাহাতের কান পর্যন্তই পৌঁছচ্ছে না। মায়া এবার রাহাতের সামনে এসে রাহাতের একটা হাত ধরো ঝাঁকি দিতেই রাহাতের ঘোর কাটলো।
-স্যার???
-হুম?? কি?? কি??
-কতোক্ষণ থেকে ডাকছি আপনাকে?? শুনতে পান না??
-চোখের সামনে একটা পরী এসে দাঁড়ালে কে আর কি শুনতে পায় বলো??
-কি??
-কই কি!!
-এতোক্ষণ এতো তাড়াহুড়ো করে ডেকে এখন চুপ করে গেলেন কেন?
-ওহ। এসো এসো?
-কোথায়??
-এতো কথা বলো কেন??
রাহাত মায়াকে নিয়ে আরেকটা রুমে গেল। এই রুমটাও সুন্দর করে গোছানো। রুমের মাঝামাঝিতে খাট পাতা। একপাশে বারান্দা আর অন্য পাশে ওয়াশরুম। দেয়ালের গা ঘেষে ওয়ারড্রব আর আলমারি। খাটের পাশেই বেড সাইড টেবিল আর বিছানার সামনাসামনি তিনজনে বসার একটা সোফা। রুমের বেড কাভার, পর্দা হতে শুরু করে সব কিছুই ডার্ক ব্রাউন মেরুন কালারের। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। এসব দেখতে দেখতেই রাহাত মায়ার একটা হাত আলতো করে ধরে এনে খাটে বসিয়ে নিজে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে পাশে বসলো। প্লেটের ভাত মাখানো হলে এক লোকমা মায়ার মুখের দিকে তুলে ধরলো। মায়া অবাক চোখে রাহাতকে দেখছে।
-এই যে মায়াবতী?? হা করো?
-(চুপ)
-কই?? হা করো?? খেয়ে একটা ব্যথার ওষুধ খেতে হবে তো??
-এটা কার রুম স্যার??
-এটা কার রুম আবার!! আমা......,আমার।
-আর আমি যে তখন গেলাম!! ওটা??
-এতো প্রশ্ন কেন করো??
-বলুন না??
-বলছি না হা করো?? কথা কম বলক হা করো??
- খাবো না। বাড়ি যাব।।
-বেশি বাড় বেড়ো না মায়াবতী। কথা না শুনলে হাত পা ভেঙে এখানেই বসিয়ে রেখে দিব বলে দিলাম।
-কেন?? আমি আপনার কে?? পি.এ ও তো রাখছিলেন না।
-তুমি বুঝবেও না তুমি আমার কে।
-কে বলুন??? ------উমম!!
মায়া আর কিছু বলার আগেই রাহাত ওর মুখে এক লোকমা ভাত পুরে দিলো।
-কথা কম বলো।
-হুহ। অসহ্য......
-হা...???
মায়াকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজে নিজেই কথা শুরু করলো রাহাত।
-আসলে। ওই রুমটা ছিল মায়ের। মা শাড়ি খুব পছন্দ করতেন। যেমন পছন্দ করে পড়তেন শাড়িগুলো তেমনি যত্ন করেও রেখে গেছেন।
-কার জন্য স্যার??
-তোমার জন্য.......
-হ্যাঁ???
-কার জন্য আর রাখবে ছেলের বউয়ের জন্য রেখেছে,
রাহাত মায়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে আবার খাইয়ে দিতে লাগলো। মায়াও মাথা নিচু করে আর প্রশ্ন না করে খাচ্ছে চুপচাপ।
-এই?? মায়াবতী? আর একটু ভাত নিই??
-না না। স্যার, আর খেতে পারবো না।
-জিজ্ঞেস করায় মানা করছো??
-নাহ স্যার। আর পারবো না।
-আচ্ছা ।
রাহাত নিজে হাত ধুয়ে মায়ার মুখ মুছিয়ে দিয়ে প্লেটটা রাখলো। তারপর মায়ার হাতে একটা ওষুধ ধরিয়ে দিলো। মায়া একবার ওষুধ দেখছে আর একবার রাহাতকে।
-কি সমস্যা?? খাও না কেন?
-এই ওষুধটা একদম পচা। আগেও খেয়েছি। মুখের ভিতরে লাগলেই তিতা তিতা। ইইইই।
-হা হা হা....আচ্ছা আগে একটু পানি নাও। আর টুপ করে ওষুধটা মুখে দিয়ে গিলে ফেল। মুখেও লাগবে না তিতাও লাগবে না.....হা হা হা।
-খারাপ...মানুষের সমস্যাটা না বুঝেই খালি হাসে, হুহ.....
-খেতে বললাম না??
-হুম,খাচ্ছি তো??
আরো মিনিট পাঁচেক বসে থেকে মায়া আসলেই টুপ করে ওষুধটা গিলে ফেললো। আর রাহাত ওর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। মায়া সেটা দেখে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রাহাত লাঞ্চ করে মায়াকে বাসায় দিয়ে এলো। পুরোটা রাস্তা চুপ করে জুবুথুবু হয়ে বসেছিল মায়া। চোখে মুখে আগের সেই ছেলেমানুষি কৌতূহল খেলা করছে না। মায়ার দিকে তাকাতেই বারবার চোখাচোখি হচ্ছে দুজনের। দুজনেই তখন মুচকি হেসে অন্য দিকে ফিরছে। সারা রাস্তা এসব করেই কাটলো ওদের।
মায়াকে ওর ফ্ল্যাটে দিয়ে এসে রাহাত দেখলো মায়ার জন্য কেনা ওষুধগুলো বাসাতেই রয়ে গেছে। ভেবে রাখলো পরেরদিন মায়া অফিসে আসলে দিয়ে দিবে।
পরে দুটো দিন কাটলো। মায়া অফিসে আসে নি। রাহাত কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটাকে না দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। কল যে করবে সেই নাম্বারটা পর্যন্ত নেই। নিজে নিজেরই চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে রাহাতের। শেষ মেষ আর থাকতে না পেরে মায়ার ফ্ল্যাটে গিয়েই হাজিরহলো রাহাত। দরজা খুলে সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে আগে কখনো দেখে নি রাহাত। আসলে মায়ার পরিবারের কাউকেই আগে দেখে নি ও আগে। কে কে আছে সেটাও জানে না। তাই এখন ছেলেটাকে চিনতেও পারলো না। আর কি বলবে কিছুই বুঝতে না পেরে চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলো বেচারা।
চলবে.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...