সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-দশ|


রাত ১২ টার দিকে রাহাত সব কাজ সেরে রুমে এসে একেবারে হা হয়ে গেল। রাহাতের রুমটা ফুলের গন্ধে মো মো করছে। সারা রুমটা কাঠবেলি আর গোলাপ দিয়ে সাজানো। আর রুমের মাঝামাঝিতে থাকা খাটটাও ফুলে ফুলে ভরা। কাঠ বেলী, বেলী আর গোলাপের ছড়াছড়ি। ফুলের লম্বা লম্বা শিকল করে সেটা দিয়ে ওদের বাসরের খাট সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝামাঝিতে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আঁকা। আর সেই ভালোবাসার চিহ্নের একটু সামনে মাথা নিচু করে ঘোমটা মাথায় জবুথবু হয়ে বসে আছে একটা লাল টুকটুকে পরী।

রাহাত ঘোরের মাঝেই দরজাটা বন্ধ করলো। দরজা বন্ধের শব্দে মায়ার কেঁপে ওঠাও দেখলো। কোনমতে খাটের সামনে এস দাঁড়ালো৷ মায়াও খাট থেকে গুটিগুটি পায়ে নেমে রাহাতের সামনে দাঁড়ালো।সাথে সাথেই মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এক পাঁক  ঘুরলো রাহাত৷ রাহাতের হুট করে এমন কাজে মায়া খেঁই হারিয়েই রাহাতের গলা জড়িয়ে ধরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে মায়াকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসলো রাহাত। কোন কথা হচ্ছে না দুজনের। চুপ করে একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ গুনছে যেন।।

একটু পরে স্বাভাবিক হয়ে মায়ার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরালো রাহাত। তার মায়াবতীকে এতোগুলো দিন পর দেখে বার বার অন্য একটা ঘোরে চলে যাচ্ছে রাহাত। তাও আবার এই বিয়ের সাজে যখন মায়াবতীকে লাল পরীর চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না। পরীটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে রাহাতের। বেশি কিছু না ভেবেই এগিয়ে এসে আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

-মায়াবতী?? সত্যিই কি তোমাকে আমি পেয়েছি? নাকি এখনো স্বপ্নদেখছি??

মায়া মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। আবার রাহাতের দিকে চোখ পড়তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।

-পরী?? একটা কথা বলি??

-হুম।

-কখনো ফেলে যাবে না বলো? যত ভুল করি অধিকারের শাসন দিয়ে শুধরে দিও। রাগ করে দূরে ঠেলে দিও না কখনো।

-হুম।

-আর ম্যাডাম?? সারাদিন আপনি যেখানে ইচ্ছে যান, যা ইচ্ছে করেন, বেড়ান-- আমার সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতি রাতে আমার মায়াবতীটা আমার বুকে থাকা চাই।

-(চুপ)

-লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। বিয়ের পরে কোলবালিশের দায়িত্ব শেষ। বউকে চাই প্রতিদিন।

-বারে। মায়ের কাছে যাব না আমি??

-যাবে না কেন! অবশ্যই যাবে। তবে আমার ঘুমের সময়ের আগে তোমাকে বুকে চাই। এখন সেটা কি করে করবে সেটা তুমি জানো।

-আচ্চা।

-মায়াবতী?? বউ সেজে এত্তোগুলা আদুরে লাগছে পরীটাকে। কিন্তু এতো ভারি মেকাপে আর বেশিক্ষণ থাকলে তো স্কিনের ক্ষতি হবে সোনা। এখন যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও।

-আচ্ছা।

মায়াকে লাগেজ থেকে শাড়ি বের করায় হেল্প করে নিজেও ওয়ারড্রপ থেকে একটা প্যাকেট নিলো রাহাত। মায়া ওয়াশরুমের দিকে পাবাড়িয়েছে।

-মায়াবতী??

-হুম??

-এটা তোমার জন্য। যখন আমার কাছে পরীটা ধরা দিতে চাইবে তখন যেন এটা পড়ে।। বলতে হবে না কিছু আর। আমি বুঝে নিব বাকিটা।

-মানে!!

-হুট করে পরীটাকে ধরে নিয়ে এলাম। একটু সময় তো দেয়াই যায়।

মায়া লাজুক হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। রাহাতের দেয়া প্যাকেটটা বুকে জাপটে ধরে নিজেকে আয়নায় দেখলো একবার। প্যাকেটটা খুলেই মায়ার হার্ট বিট ডাবল হয়ে গেল। হালকা গোলাপি রঙা একটা নাইটি। হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত পোঁছবে লম্বায়। তার উপরে টু পিসের নাইটিটা যথেষ্ট পাতলা ফিনফিনে রকমের। দেখামাত্রই মায়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এটা পড়ে কখনো রাহাতের সামনে দাঁড়াতে হবে!! ভাবতেই বেচারি লজ্জায় পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে। প্যাকেটে নাইটিটা রেখে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো মায়া। গায়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে প্যাকেটটা আবার হাতে নিয়ে দেখলো মায়া। কি করবে বুঝতেই পারছে না। লজ্জায় পড়তে পারছে না। আবার না পড়লে মানুষটা কষ্ট পাবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না। এর মধ্যেই দরজায় নক করলো রাহাত।

-এই যে মায়াবতী?? শাওয়ার নিতে নিতে ঘুমিয়ে গেলে নাকি??

-নাহ,মানে।

-আরে পাগলী? এখন ওটা পড়তে হবে না। তুমি তোমার মতো করে সময় নাও।

-(চুপ)

-তাড়াতাড়ি এসো না??

মায়া শাড়ি পড়ে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। হাতে রাহাতের দেয়া প্যাকেট আর গায়ের গয়নাগাটি। জিনিসগুলো রেখে টাওয়ালটা চুলথেকে খুলে চুল মোছায় মন দিলো মায়া। এদিকে রাহাত হা করে মায়াকে দেখছে। লাল বেনারসি বদলে একটা নতুন পাটভাঙা তাঁতের শাড়ি পড়েছে মায়া। লাল রঙা শাড়িটার সোনালি পাড়ে দেয়া। মুখে কোন সাজ নেই। নেই গায়ে কোন গয়না। তবুও মেয়েটার মুখটা দেখে এতো মায়াবী লাগছে!!

রাহাত এগিয়ে এসে মায়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে হাতের টাওয়ালটা নিল।। মায়া এবারও লজ্জা পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আলতো করে মায়ার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো রাহাত।

-মায়াবতী?? গিফ্ট পছন্দ হয়েছে??

মায়া লাজুক হেসে মাথা নাড়লো। রাহাতও মায়ার চুল মোছার ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমিতে মাতলো। চুল মোছা শেষ হলে টাওয়ালটা রেখে মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। বিছানায় মায়াকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো। মায়াবতীর সাথে দুষ্টুমি করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল রাহাত।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই রাহাত টের পেল মায়া ওর হাতটা সরিয়ে উঠে যাচ্ছে। জাপটে ধরার আগেই মায়া বিছানা থেকে নেমে পড়লো। রাহাত চোখ না খুলেই মায়ার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। একটু একটু করে এক পা দু পা করে সরে যাচ্ছে মেয়েটা।

-এই মায়াবতী?? কই যাও?? কাছে এসো?

-উহু।

-আমি উঠে ধরতে পারলে খবর আছে কিন্তু।

-আচ্ছা?? ধরে দেখাও। আমি ধরা না দিলে কখনো ধরতে পারবে তুমি??

-তাই নাকি??

-বিশ্বাস না হলে ধরো?? এসো??

চোখ দুটো কোনমতেই খুলতে পারছে না রাহাত। যেন একে অন্যকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে আবেশে। আর এদিকে মায়াটাও ধীরে ধীরে দূর থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে। কেন যেন রাহাতের মনে হচ্ছে মেয়েটাহারিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ডাকতে গিয়েও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না এবার রাহাতের। তবু শেষ একবার চেষ্টা করলো শক্তি দিয়ে।

-মায়া???????

নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে মায়ার নামটা ডাকার পর রাহাতের ঘুমটা ভেঙে গেছে। চোখ খুলতেই রাহাত দেখলো সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। হাতে মায়ার লেখা চিঠিটা। আর পাশেই পড়ে আছে ডিভোর্স লেটারটা। রাহাত কোনমতে বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে সময় দেখলো। ৭ টা বাজে। মোবাইলের কন্ট্রাক্ট লিস্ট থেকে মায়ার নাম্বারটা সার্চ করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো রাহাত। মায়া, মায়াবতী, বউ-বহু নাম দিয়ে সার্চ করেও যখন নাম্বারটা খুঁজে পেল না ততক্ষণে রাহাতের মাথায় হাত। বিয়ের আগে যে ছয় মাস মায়া রাহাতের পি.এ ছিল তখন মায়ার নাম্বারটা নিবে নিবে করেও নেয়া হয়নি। দরকারও পড়ে নি। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেয়েটা তো রাহাতের সামনেই ছিল। আর বিয়ের পর এই দু বছরে মায়া বাসার ল্যান্ডলাইন থেকেই রাহাতকে কল করেছে৷ কখনো কথা হয়েছে। ভালোবাসা-বাসি হয়েছে। আর কখনো ব্যস্ত থাকায় কথা হয়নি। নাম্বারটাও তাই দরকার পড়ে নি রাহাতের।

নাম্বারটা জোগাড় না করতে পেরে রাহাত ভাবতে বসলো কি করবে। সবচেয়ে প্রথমে যে কথাটা খেয়াল হলো সেটা হলো-বাবার সাথে গিয়ে মায়ার ব্যাপারে কথা বলা। বুদ্ধিটা পছন্দ হলো না রাহাতের। কারণ রাহাত জানে মায়া রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে কথাটা ওর বাবা জানলে এক গাট্টি বকা দিবে আর কথা শোনাবে৷ তবুও মায়াকে খুঁজে পেতে সব করতে রাজি এখন রাহাত। কোনমতে এক পা দু পা করে বাবার রুমে এসে ঢুকলো রাহাত। ঢুকেই আঁতকে উঠলো। বাবা রুমের রকিং চেয়ারে চোখ বুজে বসে আছে। ঘুমাচ্ছে কি জেগে বুঝতে পারছে না রাহাত। তবু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো রাহাত।

-ড্যাড???

-বাহ!! বাসায় এসেছ?? তা হঠাৎ আমার কাছে কি মনে করে?? তোমার প্রজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য আরো ক্যাশ লাগবে??

-ড্যাড??!! মায়া।

-ওহ আচ্ছা!! মায়া চলে গেছে জেনে গেছ!! কি!! এতো অবাক হচ্ছো কেন তুমি?? এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। গতকাল সকালে মায়া গেছে। আমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই গেছে। আমিই বলেছি ও যেন চলে যায়। একটা অকৃতজ্ঞ- চরিত্রহীন লোকের সাথে নিজের জীবনটা জড়িয়ে কেন পড়ে থাকবে মেয়েটা!! যার কাছে ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই!!

-স-স-সকালে!!! সকালে চলে গেছে মানে!!

-হ্যাঁ সকালে।। গত তিনদিন তো বাসায় আসার দরকার হয় নি তোমার। গেল পরশু তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল। মেয়েটা সারাটা দিন সারাটা রাত তোমার অপেক্ষায় ছিল। তুমি তো তোমার মতো ব্যস্ত। কত কাজ তোমার। ঘরের বউয়ের জন্য কি আর সময় আছে তোমার!! ......এখন খুশি তো তুমি?? মেয়েটা চলে গেছে। চলে গেছে আমার মা টা।

-বাবা?? আমার মায়া!!??

-খবরদার এই ন্যাকা কান্না আমার সামনে করবে না রাহাত। তোমার এই কান্না দেখে অন্তত আমার মন গলবে না।বিদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন করে ফিরার পর তোমার ক্লাব, মেয়ে, আড্ডা এসব দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো লক্ষী একটা মেয়ে বউ হয়ে জীবনে আসলে তুমি বদলে যাবে৷ তাকে সম্মান করতে শিখবে। তার সাথে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিবে। কিন্তু কি করলে তুমি??! একটা বছর বহু কষ্ট করে নাটক করে ভালো সেজেছিলে না তুমি??

-বাবা!!!

-জুলির সাথে তোমার বাড়াবাড়ি দেখে কি করবো ভাবতে পারছিলাম না। নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। সেই সময় আমি মায়াকে দেখি। মেয়েটা কোথাও একটা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিল। আমাকে নিয়ে হসপিটালে ছুটোছুটি করতে করতে ইন্টারভিউটাই মিস হয়ে গেল পাগলীটার। জানা নেই চেনা নেই একটা মানুষের জন্য কতটা পাগলের মতো টেনশন থেকে কাজটা করেছে সেটা আমি দেখেছি।। তখন বুঝতেও পেরেছি যেতোমাকে শুধরাতে পারলে পৃথিবীতে একমাত্র মায়াই পারবে। মায়াকে আমিই বলেছিলাম জুলিকে তোমার রুম থেকে বের করতে পারলে তবেই ওর চাকরিটা কনফার্ম হবে।

-তারমানে!!

-হ্যাঁ,আমিই মায়াকে তোমার পি.এ করে এনেছি। তোমার পি. এ হওয়ার পর ওর বাসায় গিয়ে ওর মা আর ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলে এসেছি তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে। তোমার কি মনে হয় ও তোমার সব কাজকর্ম এমনি এমনি হজম করত!! মায়া জানত তোমার সাথে ওর বিয়েটা হবে। তাই যখন তখন তুমি যেখানে নিতে মেয়েটা যেত। তোমার বাজে অভ্যাগগুলো ওর সংস্পর্শে বদলে গেল। ক্লাব, মেয়ে, আড্ডা সব ছেড়ে দিয়েছিলে। আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা আসলেই তোমাকে ভালো একটা মানুষ করে দিতে পেরেছে। কিন্তু তুমি কি করলে রাহাত!! নিজের রূপটা দেখিয়েই দিলে!! মেয়েটাকে বিয়ে করেই রূপ বদলে গেল তোমার!!

-বাবা!! আমি আসলে...

-কি আসলে!!! একটা বছর তো ঠিকই ছিলে রাহাত। তোমার ড্রিম প্রজেক্টও শুরু হল!আর তুমিও আগের রূপে ফিরে এলে। বাহ!! কিন্তু তুমি কি জানো এই প্রজেক্টে আমি ইনভেস্ট করেছি মায়ার কথাতেই!! আর তুমি সেই মেয়েটাকেই......

-বাবা!! আমি কিচ্ছু চাই না আর। আমি আমার মায়াকে চাই। প্লিজ?? ওকে এনে দাও না?? প্লিজ?? প্লিজ ড্যাড!!!

-আগেরবার সহজেই পেয়ে গেছিলে তো-তাই ওর কদর করতে পারো নি। এবার নিজে ওকে খুঁজে নিয়ে এসো। ভালোবাসার মানুষের অবহেলাগুলো কতটা গভীর হয়ে বুকে গিয়ে লাগে সেটা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না। তাই তোমার যদি মনে হয় তুমি সত্যিই মেয়েটা ভালোবেসে সব ছাড়তে পারবে তবেই ফিরিয়ে এনো মায়াকে। নয়তো আবার দুদিনের জন্য মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি??

-মায়া কোথায় বাবা!!

-সেটা তুমি খুঁজে বের করবে। আমি বলবো কেন!!?

-বাবা?? প্লিজ??

-সহজে পেলে তার মূল্য দিতে কেউ পারে না রাহাত। আমিও পারি নি। তোমার মাও আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। পাগলের মতো ভালবাসতো সে আমাকে। তাকে ধরে রাখতে পারি নি। নিজের কাজ নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে। তোমার মা যেখানে গেছে-সেখান থেকে আমি চাইলেও তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না। কিন্তু তুমি মায়াকে ফিরিয়ে আনো-চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আগে।

-বাবা??

-যাও এখন।

-বাবা!! মায়ার নাম্বারটা!!

-বাহ!! ফ্যানটাস্টিক!! মায়াকে তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে তুমি রাহাত!! দুই বছর মেয়েটার সাথে সংসারও করলে!! অথচ নাম্বারটাও জানো না!!!
হা হা হা........

-ড্যাড??

-জাস্ট গেট আউট রাহাত। নিজে পারলে খুঁজে বের কর। আউট,তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।বেরিয়ে যাও। দূর হও আমার রুম থেকে।

রাহাত বের হয়ে নিজের রুমে চলে এলো। বাবার কথায় কিছুই মনে করে নি ও। কারণ ওর বোকামির জন্য কথা তো শুনতেই হবে ওকে। কি করবে, বা মায়াকে কোথায় খুঁজবে কিছুই বুঝতে পারছে না রাহাত। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। রাতে দু ঘন্টাও ঘুম হয় নি। সেই ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে রাহাতের। তবু মাথার মধ্যে দপদপ করছে রাহাতের। বিছানায় কোন মতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো রাহাত। মায়াবতীটাকে তো তার চাই ই চাই। কোথায় খুঁজবে বা খুঁজে পেলে কি করে মায়ার রাগ- অভিমান ভাঙাবে বা মায়াকে খুঁজে না পেলে কি করবে সেটা নিয়ে আগে ভাগে প্ল্যানিং করার চেষ্টা করলো রাহাত। নিজের মনকে গুছিয়ে রাখলে নয়তো সামনের সমস্যাগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে সুবিধা হবে।

চলবে........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...