সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার মায়াবতী |পর্ব:-নয়|


রাহাত এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে দেখে মায়া একেবারে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালে আসলেই একেবারে পিঠ ঠেকে গেছে ওর। আর যাওয়ার জায়গাও নেই। কি করবে কার কাছে সাহায্য চাইবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আধৌ সাহায্য করার মতো কেউ আছে কিনা সেটাই বেচারি জানে না। রাহাতও ভ্রু কুঁচকে মায়ার ভীত মুখটা দেখছে। ঘেমে মুখ একাকার। মুখের পাশের এলোমেলো ছোট্ট চুলগুলো মুখে লেপ্টে গেছে। দেখতে একেবারে ভীত মায়া হরিণীর মতো লাগছে মায়াকে। মায়ার এই রূপটাও রাহাতকে যেন আরো বেশি করে টানছে ওর দিকে।

-মায়া?? ভয় পাচ্ছো কেন??

-না না না,স্যার। ভ-ভ-ভয়-পাব-পাবো কেন!!??

-ভয় না পেলে এভাবে তোঁতলাচ্ছো কেন?? আজব তো??

-আপনি এভাবে এভাবে সামনের দিকে -সামনের দিকে এগিয়ে আসছেন-আসছেন কেন??

-তুমি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছো তাই। সামনে এসো??

-সামনে!!!! সামনে তো??

-সামনে কি মায়াবতী??

-সামনে তো আপনি দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। সামনেও দেয়াল। পিছনেও দেয়াল।

-আমি দেয়াল???

-না না,না মানে স্যার!!

রাহাত আরো এগিয়ে এসে মায়ার দুপাশে দেয়ালে হাত দেখে মায়ার মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। মায়া প্রথমে ভয় পেয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল। অনেকক্ষণ পরেও কিছু ঘটছে না বুঝতে পেরে চোখ মেলে তাকালো। চোখ মেলতেই রাহাতের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। মানুষটা নেশা ধরানো চাহনিতে মায়াকে দেখছে৷ রাহাতের নেশা ধরানো দৃষ্টিতে হাজারো দুষ্টুমি মিশে আছে, সাথে হয়তো অনেক খানি ভালোবাসাও। তবে সেখানে কোন ললুপতা নেই। রাহাতের দৃষ্টি অন্য সবার মতো মায়ার শরীরের বিশেষ কোন অঙ্গ উৎসুক চোখে গিলছে না। কাজল টানা মায়াবী চোখে চোখ রেখে রাহাত মায়ার চোখের গভীরতা মাপায় ব্যস্ত।।

ততক্ষণে মায়ারও ভয়টা কেটে গেছে। এই মানুষটা আর যাই হোক ওর কোন ক্ষতি করবে না সেটা মায়া বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মানুষটা কি চাইছে সেটাই বুঝতে পারছে না বেচারি। তাই নিজেও হা করে তাকিয়ে আছে রাহাতের মুখের দিকে। রাহাতও সুযোগ পেয়ে শাড়ির মধ্যে দিয়েই মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিল। মায়া এতোটা অবাক হলো যে নিজের বুকের ধুকপুকানিও কানে এসে বাজছে ওর। এই লোকের কাহিনী কিছুই বুঝতে পারছে না। আবারও নেশা ধরানো চোখে তাকিয়ে আছে। মায়াও সব ভুলে রাহাতকে দেখছে অবাক হয়ে৷ সাদা শার্টের হাতাদুটো আজও ফোল্ড করা। আর নেভি ব্লু প্যান্টের সাথে ম্যাচিং করে টাই ঝুলছে। খোঁচা দাঁড়িতে আর একটু সিল্কি চুলের নাচানাচিতে একেবারে অসম্ভব কিউট লাগছে মানুষটাকে। মানুষটা কেন এতোটা কাছে এসে ওর ভিতরে এভাবে ঝড় তুলছে সেটাই বুঝতে পারছে না মায়া।

এক হাতে মায়াকে কাছে টেনে অন্য হাতে মায়ার গালে হাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরে দেখছে রাহাত।

-মায়াবতী??

-হুম??

-একটা পারমিশন চেয়েছিলাম।

-মা-মানে??

-বুঝতে পারো নি?? মনে করিয়ে দিই আবার??

-(চুপ)

-তোমার সাথে রাতের পাগলামিতে মেতে উঠতে চাই। ভালোবাসার সাগরে হারাতে চাই। মিস মায়াবতী???

-কি, কিসব বলছেন?? স্যার!!??

-সত্যি বলছি। তবে শুধু একটা রাত বা আজকের জন্য নয়। জীবনের বাকি প্রত্যেকটা দিন-প্রত্যেকটা রাত তোমাকে চাই আমার। প্রতিদিন ভোরে ভোরে চোখ খুলে তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে বুকে টেনে নিতে চাই। প্রতিদিন রাতে তোমাকে বুকে জাপটে ধরে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলতে চাই। তুমি বিপদে পড়ার আগে বুকে আগলে রাখতে চাই ভালোবেসে। তুমি ভয় পেলে আদরে সে ভয় ভাঙিয়ে দিতে চাই। কারণে অকারণে হুট করে জাপটে ধরে ঘাবড়ে দিতে চাই তোমাকে। তুমি রাগ করলে আমার উষ্ণ স্পর্শে তোমার সে রাগ আমি ভাঙাতে চাই। অভিমান করলে তোমার নিচের ঠোঁট আঁকড়ে অভিমানের বরফ গলাতে চাই। তোমার সারাদিনের ক্লান্তির পর শরীরে আলতো পরশ বুলিয়ে সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতে চাই। অবসর ছুটির দিনগুলোতে ঘরের প্রতিটা পরতে পরতে তোমার আমার ভালোবাসার গল্প সাজাতে চাই। আর চাই যত মান অভিমানই হোক না কেন দিনশেষে তোমার ওই কাজল কালো চোখে ডুব দিয়ে তার গভীরতা মাপবো আমি। তুমি অবাক চোখে তখনো আজকের মতো আমাকে দেখবে। আজকের মতো লজ্জায় লাল হবে প্রতিদিন প্রতিটা রাতে। আমার ছেলেমানুষি পাগলামিগুলো সহ্য না হলে চুল টেনে ধরবে। বা আজকের মতো হাতটা খামচে ধরবে৷ সত্যি বলছি মায়াবতী তখনো খুব করে জ্বালাবো। তবে একটুও বলবো না তোমার এই স্পর্শে কতোটা মাতালতা জাগে তোমাকে কাছে পাওয়ার।।

-(চুপ)

-মায়াবতী??

মায়া কথা বলার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছে। ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে। লজ্জা পেয়ে সত্যি সত্যিই লাল হয়ে গেছে বেচারি। আর রাহাতের হাতটাও শক্ত করে খামচে ধরেছে। এই লোকটা এতো খারাপ কেন বুঝতেপারে না মায়া। এভাবে কথা বলে বুকের ভিতরে তুফান তোলার কোন মানে আছে??

-মায়া??

-হুম???

-ক্যান আই কিস ইউ??

মায়া একবার কেঁপে উঠে চোখ বুজে ফেললো। রাহাত হেসে মায়ার মুখটা তুলে ধরে অপলকে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়া কোনমতে চোখ খুলে রাহাতের দিকে তাকালো।

-বাকিটা অধিকার নিয়ে করবো মায়াবতী। যেদিন তুমি লাজুক লাজুক মুখ করেও আমার কাছে নিজে থেকে ধরা দিবে। এখন বলুন তো মিস মায়াবতী?? মিসেস রাহাত মাহবুব চৌধুরী হতে কি রাজী আছেন?? সারাজীবন এই পাগলাটে লোকটার পাগলাটে কাজকর্ম হজম করতে পারবেন তো?? ভুল করলে ভালোবেসে শুধরে দিবেন তো? দিনশেষে মায়াবতী আমার হবেন তো আপনি??

-স্যার???

-কল মি রাহাত,মায়াবতী।

-মানে!!!

-তুমি না চাইলে জোর করবো না।

রাহাত মায়াকে নিজের হাতের বন্ধন থেকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ালো।। মায়া এক পলক রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়ে ছুট লাগালো। এই লোকের সামনে আর এক মিনিট থাকলেই হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভবনা আছে। দরজার কাছে এসেই কি মনে হতে রাহাতের দিকে একবার ফিরে তাকালো মায়া। রাহাত মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া মুখ টিপে একটু হাসলো।

-রেজিগনেশন যখন দিয়েছি তখন আপনার পি.এ র চাকরিটা করবো না আর..............

-...................

-আপনার বাবাকে বলবেন বাসায় এসে আমার মায়ের সাথে বাকি কথা বলে যেতে.....

কথাটা বলেই মায়া ছুটে বেরিয়ে গেল। রাহাতও অবাক চোখে মায়ার ছুটে পালিয়ে যাওয়া দেখলো। কি বলেছে সেটার মানে বুঝতেই তার কয়েক মিনিট লেগে গেল।
রাহাতের হুঁশ ফিরতে নিজেও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। একান্তে কথা বলার জন্য মায়াকে নিজের ফার্ম হাউজে নিয়ে এসেছিল রাহাত। জায়গাটা শহর থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। পথ ভুল করে কোন দিকে চলে যাবে এই মেয়েটা কে জানে!! ভাবতে ভাবতেই মায়াকে ফার্ম হাউজের গেইটের সামনে দাঁড়ানো দেখতে পেল রাহাত। নিজে নিজেই হেসে ফেললো রাহাত। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত মায়া। রাহাত গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে মায়ার কাছাকাছি এসে হর্ন বাজালো। মায়ার আঁতকে উঠে চোখ খোলা দেখে জোরেই হেসে ফেললো। মায়া রাগ করে হাঁটা শুরু করলো। ভাবটা এমন যে সে একাই চলে যাবে। তবু রাহাতের সাথে যাবে না। রাহাতও মায়ার পিছন পিছন ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর হর্ন বাজাচ্ছে। আর শব্দ করে হাসছে৷ মায়া বিরক্ত হয়ে রাহাতের গাড়ির জানালার কাছে আসলো।।

-কি সমস্যা??

-একা একা কোথায় যাওয়া হচ্ছে মায়াবতী??

-আমি একাই চলে যাবো বাসায়,হুহ...

-তাই?? তো একা একা এতোদূর থেকে শহরে ফিরতে পারবেন ম্যাডাম??

-মানে!!

-গাড়িতে উঠে এসো। আমরা শহর থেকে বেশ অনেকটাই দূরে আছি মায়াবতী। হারিয়ে গিয়ে আমাকে কষ্ট দিতে হবে না। এসো না??আশেপাশে তাকিয়ে মায়াও ভয় পেয়ে ঢোক গিললো। আসলেই এই জায়গাটা ওর পরিচিত নয়। তাড়াতাড়ি তাই গাড়িতে উঠে বসলো। আর মায়ার তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে আসা দেখে রাহাত আবার হাসতে লাগলো। রাহাতের হাসি দেখে মায়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। এই লোকটা বেশি খারাপ। এত্তোগুলা খারাপ। একে তো ভয় পাইয়ে দেয় সারাক্ষণ। তারপর এভাবে হেসে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। খারাপ খারাপ। খুবই খারাপ লোক একটা!! এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল মায়া। মুখ ঘুরিয়েই রাহাতকে দেখতে পেল। রাহাত মায়ার একটা হাত ধরে রেখে সামনের দিকে তাকিয়েই ড্রাইভ করছে।

-এই খারাপ লোকটার সাথেই আজীবন থাকার জন্য রেডি হয়ে যাও মাই ডিয়ার মিসেস মায়াবতী। তোমাকে আমার সুখে থাকার কারণ হয়ে এভাবেই পাশে থাকতে হবে সারাজীবন।

মায়া মুগ্ধ হয়ে রাহাতকে দেখছে। লোকটা ওর প্রত্যেকটা মনের কথা পড়ে ফেলে কেমন করে?? কখনো কি ওকে মুখ ফুটে কিছু বলতে দিবে না এই মানুষটা??

________________সাত দিন পর__________________

আজ রাহাত আর তার মায়াবতীর বিয়ে। গত সাতদিন আগেই বিয়ের কথা হয়েছে। বিয়ের সব এরেন্জমেন্ট, কেনাকাটা, অফিস-সব মিলিয়ে ভিষণ ব্যস্ত সময় কেটেছে রাহাতের। মায়াবতীকে একটা বারের জন্যও চোখের দেখাটাও দেখতে পায় নি। আলাদা বাড়িতে হলুদ আর মেহেদীর অনুষ্ঠান হয়েছে। তাই হলুদে পরী হয়ে মায়াবতীকে কেমন লেগেছে সেটা না দেখেও কল্পনা করে নিয়েছে রাহাত। বিয়ের স্টেজটাও দুজনের আলাদা। বিয়ের সব ফরমালিজি শেষ হবার আগে দেখা হবে না মায়াবতীকে ভাবতেই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাহাতের। সে যে তার মায়াবতীকে একটা নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে এটা কি মানুষগুলো বুঝতে পারে না?!

বিয়ের কবুল আর রেজেস্ট্রির পর মায়াকে পাশে পেল রাহাত। লাল টুকটুকে পরী হয়ে বসে আছে মায়া। মাথায় পাতলা কনে ওড়নায় মুখ ঢাকা। মুখটা তুলে তাকাচ্ছেই না। মাথা এমন ভাবে নিচু করে রেখেছে মন হচ্ছে না আর মুখ তুলে চাইবে রাহাতের দিকে।। রাহাতও তাই ভালো করে দেখতে পারছে না বলে একটু পর পর তাকাচ্ছে মায়ার দিকে। আর সবাই সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে দেখে নিজেও হালকা হেসে ফেললো রাহাত। মেয়েটা রাহাতকে কতোটা বদলে দিয়েছে সে কি জানে!!সন্ধ্যায় আত্মীয়রা মুখ দেখার অনুষ্ঠানে নিয়ে বসালো রাহাত আর মায়াকে। একে অন্যকে সরাসরি দেখতে পারবে না। আয়নায় দেখে বলতে হবে কে কি দেখছে। সেই মতো করেই মায়া আর রাহাতকে স্টেজে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এতোক্ষণে মায়ার ঘোমটা সরিয়ে সেই পাতলা ওড়না দিয়ে রাহাত আর মায়া দুজনকেই আবার ঢেকে দেয়া হল। সামনে ইয়া বিশাল এক আয়না।

আয়নার ভিতর দিয়েই রাহাত তার মায়াবতীকে দেখতে পাচ্ছে। টকটকে লাল গোলাপ ফুল আঁকা বেনারসি পড়নে মায়ার। গা ভর্তি গয়না, চোখে কালো মোটা করে আইলাইনারের টান, আর চোখের নিচে মোটা কালো কাজলের ছোঁয়া, নাকে চেইন টানা নথ, আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। সব মিলিয়ে মায়াকে কোন অংশে রাজরাণী থেকে কম লাগছে না। রাহাতের হা করে তাকিয়ে মায়াকে দেখা দেখে সবাই দুষ্টুমিতে মেতেছে।

-ভাইয়া?? বাকিটা সারা রাত ভরে দেখিয়েন। এখন বলুন তো আয়নায় কাকে দেখা যায়???

-আয়নায় আমার মায়াবতীকে দেখা যায়।

-ওহো, মায়াবতী!!

এবার মায়ার পালা৷ মায়া দুরুদুরু বুকে চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকালো। আয়নার মধ্য দিয়েই দুজনের চোখাচোখি হতেই মায়া একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেল। একটা শীতল স্রোত যেন একেবারে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল মায়াকে। মানুষটাকে একেবারে সাদামাটাভাবে দেখলেই যে কোন মেয়ের একটা হার্টবিট মিস হয়ে যাবে। আর বিয়ের পাগড়ী শেরওয়ানিতে দেখে তাহলে মায়ার কি অবস্থা বোঝার কথা। গাঢ় খয়েরী রঙে সেজেছে রাহাত। শেরওয়ানীর খয়েরী রঙের সাথে সোনালী রঙের পাজামা আর পাগড়ী। পাগড়ি, শেরওয়ানী, বর ওড়না সব কিছুতেই সাদা পার্লের কাজ করা। সব মিলিয়ে কমপ্লিট রাজকুমার।।

-এই যে নতুন বউ?? আয়নায় কাকে দেখা যায়??

----------মায়াবতীর স্বপ্নের রাজ্যের রাজাকে দেখা যায়।

রাত দশটায় খাওয়া দাওয়া শেষ করে মায়াকে নিয়ে রাহাতদের বেলী আর গোলাপ ফুলে সাজানো গাড়িটা রওনা দিলো। এর আগে মায়ার মা আরভাই মিহান রাহাতকে ধরে কেঁদে ফেললেন। এই চুপচাপ মেয়েটা নিজের মনের কষ্টটা কাউকে দেখাতে চায় না, বুঝতে দিতে চায় না। ওকে যেন রাহাত আগলে রাখে সেটাই বারবার করে বললেন। রাহাতও তাদেরকে আশ্বস্ত করলো, সে তার মায়াবতীকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়িতে পাশে বসা মায়াকে দেখছে রাহাত। মেয়েটা অন্ধকার শহরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা থমথমে করে বসে আছে। রাহাত কিছু না বলে মায়ার ডান হাতটা নিজের বাম হাতে চেপে ধরতেই মায়া তাকালো রাহাতের দিকে। একটু হাতটা টেনে কাছে টেনে নিয়ে নিজের কাঁধে মায়ার মাথাটা রাখলো রাহাত।

-আমার মায়াবতীটার মন খারাপ??

-উঁহু -----------

-বিয়ের পরে নাকি মেয়েগুলো কেঁদে কেটে একেবারে মিনি পেত্নী হয়ে যায়। তা তুমি দেখছি গুম হয়ে বসে আছো। কাহিনী কি??

-কিসের কাহিনী??

-মেকাপ নষ্ট হওয়ার ভয় পাচ্ছ? তেমন হলে পার্লার থেকে আবার সাজিয়ে আনবো। তবু একটু কেঁদে হলেও ঠোঁটে আগের সেই হাসিটা ফিরিয়ে আনো। প্লিজ??

মায়া রাহাতের কথায় হেসে ফেললো। এই লোকটার পাগলামি কথায় সবসময়ই ওর মনটা হালকা হয়ে যায়। মায়া কাঁধে মাথা রেখেই রাহাতের মুখের দিকে তাকালো। রাহাত অপলকে মায়াকে দেখছে। মায়াবতীটার ঠোঁটের কোণের হাসিটা দেখতে ভালো লাগছে রাহাতের। মায়ার হাতটা আবার একবার আলতো করে চেপে ধরে ভাবছে রাহাত। আজ থেকে নতুন একটা জীবন শুরু করবে সে তার মায়াবতীকে নিয়ে। ফেলে আসা জীবনের সমস্ত ভুলগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন এক পথচলা শুরু হবে রাহাতের। শুধু তার মায়াবতীটাকে নিয়ে।

চলবে.............
|
কেমন লাগলো?
সেটা জানতে বেশ আগ্রহী আমি!😊

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...