সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"হঠাৎ প্রেম"( পর্ব_তিন)

Written by Asif
দ্বিতীয় পর্বের পরে......
রাত্রে মিনহাজ সামান্য ঝামেলা করলেও সেটা সামলে নেওয়া গেছে। কিন্তু আমি ভাবছি ওই মেয়ের কথা।
আম্মুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,"যে ও কে?"
উত্তরে আম্মু বলছিল,"তোর ইমদাদ আংকেলের মেয়ে,কিছুদিন এখানে আছে"
কিন্তু ভাবার বিষয় যে আমি কোনো ইমদাদ আংকেল কে চিনি না। আর এই মেয়ে এতে সাহসই বা কোথা থেকে পায়!
এমন হাভ ভাব দেখায় যেনো আমাকে কয়েক বছর ধরে চেনে।
কিছুদিন মিনহাজ বিষয় টা নিয়ে বেশ পেঁচিয়েছে আর নিধিও।
কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। ওই মেয়েকে সেদিনের পর থেকে আর কখনো দেখিনি। না দেখলেই ভালো।
সব কিছু আগের মতোই চলছে, ভার্সিটিতে যাওয়ায়। ইচ্ছে করলে ক্লাশ করা আর না করলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা।
মিনহাজ,নিধি আর আমি একটা কফি শপে বসে আছি। এই দিন দুপুরে কেনো যে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো কিছুই বুঝলাম না।
আর এদের সাথে থাকলে আমার যেনো নিজেকে মনে হয় কাবাবে হাড্ডি। মাঝে মাঝে রাগ ওঠে দুজনের ন্যাকামো গুলি দেখে।কিন্তু কি করব,করার তো কিছু নেই।
হঠাৎ ফোঁটা বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখি অচেনা একটা নাম্বার। আমাকে সাধারণত অচেনা কেউ ফোন করেন না। তাই ধরলাম না। কল টা কেটে পকেটে ঢুকাবো এমন সময় আবার কল আসলো। আর বারংবার এমনটাই হচ্ছে.......
"কিরে ফোন উঠাচ্ছিস না কেনো?"(নিধি)
"রং নাম্বার!"
"নাকি ঐ মেয়েটা, আমরা থাকাই কল উঠাচ্ছিশ না।"(নিধি)
"দূর কিযে বলিস, ওনাকে আমি চিনিনা। আর আমাকে ফোন করবে কেনো!"
আরেকবার চরমভাবে ফোনটা কেঁপে উঠলো। এবার নিধি ফোঁটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে রিসিভ করাই শেষ।
ওদের কথপোকথন টা ছিল এররকম......
"আপনি ওই আপুটা না? সেদিন যার চড় খাবার পর আসিফ কে গালে হাত দিতে দেখেছিলাম!?"
".,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,.,(ওপাশের কথা শুনতে পাচ্ছিনা)
"ওহ,হা। আমি ঠিক ধরেছি......."
আমি বার বার ওর থেকে ফোনটা নেবার চেষ্টা করায় নিধি টেবিল থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল। মনে আমি যেতে পারবনা।  মেজাজটা রীতিমতো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর এই মিনহাজ টাও খিক খিক করে হাসছে। গার্লফ্রেন্ড পাশে থাকলে বন্ধুও বন্ধুকে চেনেনা, হায়রে দুনিয়া!浪
নিধির কথায় এটা স্পষ্ট যে ফোনের ও পাশে ওই পাগল মাইয়াটা ছারা আর কেউ না।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর নিধি একটা রাগী লুক নিয়ে ফিরে আসলো।
"তলে তোলে এত্ত কিছু আর আমরা কিছুই জানিনা!"(নিধি)
"যা ভাবছিস সেটা না, দে আমার ফোন দে...."
"এবার সত্যিটা বলে ফেল! তাতে তোরই মঙ্গল।"(মিনহাজ)
বলছিনা!? আমি ওই মেয়েকে চিনি না।
তারপর সেখান থেকে উঠে আসলাম।  বাহিরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে! কিন্তু এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না। সারাদিন বললেই ওই দুটো আমার কথা বিশ্বাস করবে না।
সোজা বাসায় চলে আসি। একদম ভিজে গেছি। সন্ধ্যার দিকে জ্বর না এসে যায়। ফ্রেশ হয়ে ভাবছি একটু ঘুমাবো। বাহিরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। জানালা দিয়ে কেমন জানি ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকছে। এটা ঘুমনোর জন্য সেইরকম একটা পরিবেশ।
শুয়ে কথা টা মাথার উপরে দিতেই ওই মেয়েটার কথা মনে পড়লো। রাগ টা যেনো আবারও বেড়ে গেলো কয়েক গুণ। বুড়ো হয়ে গেলাম,তবুও কখনো কোনো মেয়ের সাথে নিজেকে জড়ায়নি। আর আজকে কিনা আমার সবচেয়ে কাছেন বন্ধুরা আমাকে অবিশ্বাস করছে। তাও আবার একটা অচেনা,অজানা মেয়ের কারণে!
আমাকে ব্যাপারটার একটা শেষ বের করতেই হবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে ওই নম্বর টাই কল করলাম। যেটা থেকে কল আসছিল। সাথে সাথেই রিসিভ করল। মনে হয় আমার কলের জন্যই অপেক্ষা করছিল।
"এই মেয়ে আপনি কে বলুন তো!? আর আমাকে এভাবে জলাচ্ছেন কেনো?"
"তুমি এতো জোরে কথা বলছো কেনো?"
"তাহলে কিভাবে বলব শুনি?"
"একটু ভালোভাবে। আর সেদিন তোমায় চড় দেবার জন্য দুঃখিত!"
"সেদিন বাস স্ট্যান্ড এ আপনার সাথে আমার দেখা হাওয়া টাই ভুল ছিল।"
"নাহ,ওটা নিয়তি ছিল।"
"দূর,আমাকে আর কখনো ফোন করবেন না। আর আমার সামনে ও আসবেন না প্লিজ।"
"আসবো, একশোবার আসবো। তুমি পারলে আটকাবে আমায়,"
"কেনো আমার সাথে এরকম করছেন,বলুন তো? নিধিকেও কিসব আজেবাজে বলছেন!"
"ভালোবাসি!"
ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে গেলো। শেষ কথাটা অদ্ভুত ছিল।
আবার কল করবার ট্রাই করলাম কিন্তু ফোন অফ করে রাখছে। কি আজব।
সেদিনের পর থেকে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। নাহিদা দিনে কয়েকবার ফোন করত। কখনো ফোন উঠতাম না। আবার কখনো উঠিয়ে কথা বলিনা,শুধু ও বলে। ওর কথায় বোঝা যায় ও সবসময় আমাকে ফলো করে। কিন্তু সেই টিএসসির ঘটনার পর ওকে আমি আর কখনও দেখিনি।
~~
রবিবার ভার্সিটির  এনুয়াল শ্রীমণি ছিল।
দুই লাভ বার্ড কে সাথে নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু ওরা যে কই উড়ে গেছে আল্লাহ জানে। সারি সারি দার করানো ফাঁকা চেয়ার গুলির একটাই বসে আছি। মূল অনুষ্ঠানের এখনো অনেক দেরি। একা একা বোরড লাগছে। চারপাশে অনেক মানুষ শুধু আমার পাশেই কেউ নেই। সো, ফোনটা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে লগ ইন করলাম।
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কেউ আমার হাত ধরে টানছে। সামনে মাথা তুলতেই দেখি নাহিদা!
" তুমি এখানে ! আর সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজে চলেছি।"
আমি উত্তরে কিছু বলতে পারলাম না,শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কেনো জানি চোখ ফিরাতে পারছি না। ও আমার হাত ধরে টানছে।
" চলো তোমাকে আমার ফ্রেন্ড দের সাথে মিট করাই দেই!"
কিছুক্ষণ পর আমি নিজেকে একটা গার্লস গ্রুপের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। নাহি বলতে শুরু করল.....
"ও পিহু,ও লতা আর পাশে রিধিতা ব্লা ব্লা ব্লা........."
সবাই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর একজন বলে উঠলো,"শেষ পর্যন্ত একটা চাষমিশ কেই পেলি!"
ঠাট্টা মিশ্রিত কথা টা যেনো সুই এর মতো ছুচালো হয়ে আমার কানে ঢুকলো।
"হুম,তাতে তোর কি!?"
নাহি আমার হাতটা ধরে ফেললো আর ঘরে ওর গালটা লাগিয়ে দিল।এতক্ষনে আমার হুশ ফিরেছে.....
"এটা কি করছেন আপনি huh!?(আমি)
".......(আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো)
দেন ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,"তোরা এখন ভাগ,আমাদের একা থাকতে দে।")
তারপর আমাকে টেনে পাশে নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসলাম। ও এখনো আমার  হাতটা শক্ত করে ধরে আছে...
"ছাড়ুন আমাকে প্লিজ!"(আমি)
"তুমি এতো বোকা কেনো?"(হাতটা ছেড়ে দিয়ে।)
"মনে?
"কিন্তু আমি খুব খুশি যে, আমার হবু বরটা আগে কোনো রিলেশনে ছিল না।"(হাসতে হাসতে কথাটা বললো!)
"এসব কি বলছেন আপনি!"
" তুমি একটা মেয়ের কথাও ঠিক ভাবে বোঝনা। বোঝনা কেনো ভালোবাসি তোমাকে!"
আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম,কি বলব বুঝতে পারছি না।
"কি হলো,কিছু বলছিনা কেনো!"
"দেখুন আপনার সাথে আমার জাস্ট কিছু দিনের পরিচয়।পরিচয় বললে ভুল হবে, আজ দিয়ে চার বার দেখা হলো এটুকুই। আর আপনি বলছেন ভালোবাসেন।"
"কেনো! কেউ কাউকে একবার দেখেই ভালোবাসতে পারেনা বুঝি!"
"নাহ, পারেনা..."
"কিন্তু আমি পারি। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যদি না করো তাহলে ভালো হবে না বলে রাখলাম।"
তার সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়া দেখছি। কি অদ্ভুত।
কিন্তু আমার মনেহয়, একবার দেখে নই, অন্তত চার বার দেখেই কেউ কারোর প্রেমে আচ্ছা মতো পরতে পারে।
,
,
,
,
সেদিনের পর আর কখনো নাহিদা কে দেখিনি। নিধি ও কিছু বলতে পারে না। ওর নাম্বার টাই অনেক বার কল করছি,কিন্তু প্রতিবারই কেউ বলেছে,"নাম্বার টা ভুল!" অবশেষে না পাওয়ার একটা হয়েই আছে এখনো।
to be continued..........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...