সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"হঠাৎ প্রেম"(পর্ব_এক)

Written by Asif.
বর্ষার ছোঁয়ায়, আশে পাশে টা বেশ অচেনা লাগছে।
সব কিছু নতুন মনে হচ্ছে।
প্রায় ভোর রাত, বাস স্ট্যান্ড এ বসে আছি। শহুরে বাস গুলো আর এগুই না। এখান থেকে লোকাল বাসেই বাড়িতে যেতে হবে।
ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। টিনের চালির কারণে সেটা যেনো আরও ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে। চারিদিকে হারিকেন দিয়ে খুজলেও একটা কাক পক্ষীও পাওয়া যাবে না।
মাথা উপরে বেশ একটা ফাটাচিরা হলুদ বাল্ব জ্বলছে। একটু পর পর বন্ধ হচ্ছে,পুনরায় আলো ছড়াচ্ছে। যেটা খুবই সামান্য।
নিজেকে অন্তত রঙিন দেখতে পাচ্ছি।
আমার কানের পাশে  আর সামনেটাই টিনের ফুটো দিয়ে ফোটাই ফোঁটাই বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে মাঝে দুই এক ফোঁটা কানেও পড়ছে, সাথে সাথেই মুছে ফেলছি।
একটু পাশে সরে বসলে হইতো পরত না,কিন্তু ইচ্ছে করছে না।
হটাৎ কারোর কন্ঠে চমকে উঠি........
"আপনি কি জানেন বাস কখন আসবে?!"
একটা মেয়েলি কন্ঠ!!
পাশে তাকালাম।
আমার পাশেই,ঠিক একটু দূরে রাগী টাইপ এর একটা মেয়ে বসে আছে। যদিও ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছিনা । কিন্তু সে মুহূর্তে তাই মনে হলো।
"কি ব্যাপার! আপনি কখনো মেয়েলোক দেখেন নি নাকি?! এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো!?"
" দুঃখিত, আসলে আপনার প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।"
আমার কথা শোনে অন্য পাশে মুখ ঘুরালো।সত্যিই আমি বোকা। যেখানে নিজেকে এতক্ষন একা কল্পনা করছিলাম, এখন দেখি সেটা ঠিক না। কিন্তু উনি আসলেন কই থেকে! আমি তো একাই এখানে নামলাম।  এখন কেমন জানি একটু ভয় লাগছে।
তাই আর একটু দূরে গিয়ে বসলাম।
"কি করছেন আপনি?"
"কিছু না তো!"(আমি)
"তাহলে, দূরে গেলেন যে, আমাকে ভয় পাচ্ছেন নাকি!"(খিট  খিট করে হাসছে)
"আমি তো এখানে একাই ছিলাম, আপনি কই থেকে আসলেন!"(আমি)
"মাথামোটা, চাসমিশ কোথাকার আপনার সাথেই তো ঢাকা থেকে আসলাম। আপনার পিছনের ছিটে ছিলাম। আর আপনার সাথেই এখানে নেমেছি!"
"আমাকে একদম ওসব বলবেন না!"
"চোখে বিশাল একটা চশমা লাগাইছেন,তবুও দেখতে পান না! তাহলে কি বলব হূহ!?"
"আপনিও তো চোখে চশমা দিয়েছেন!?"(আমি)
"ওয়াউ,এটার দিকেও দেখি আপনার নজর, নিন আমার taw পরে নিন তবুও যদি ভালো দেখতে পান।"
"নাহ, লাগবেনা।"
আর বেশি কথা বাড়ালাম না।
ইতিমধ্যেই সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে, যদিও সূর্য এখনো দৃশ্যমান না। বৃষ্টিও একটু কমেছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে একটা বাস আসলো। মেয়েটা ইতি মধ্যেই বাসে উঠে পড়ছে। আমি বলে দিলাম যাব না।
পরের বাসে চলে যাবো। চাইনা দ্বিতীয়বার ওই মেয়ে আমার পিছনের ছিটে বসুক!  ঠিক সময় চুপ না হলে এতক্ষন আমার সাথে ঝগড়া করেই যেত।
পরের বাস খুব জলদি আশায়, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। স্টেশন থেকে দশ মিনিটের পথ। বাস থেকে নেমে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেই পুরানা একটা বাড়ি,আর সেটাই আমার।সব যেনো দেখতে পাচ্ছি।
এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে গেলাম। সবাই হইতো আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। অতঃপর সবার সাথে আলাপ শেষে আমার ঘরে চলে গেলাম।বাড়িতে আসলে দিন গুলি একদম কাটতে চায় না।বেশ বোরড লাগে। সেটা বিকেল হতেই ভালোভাবে বুঝতে পারছি।সবটা ভালো থাকলে হইতো একটু ভালো লাগতো। সারাদিন ঝুম বৃষ্টি। শুধু গুর গুর করেই চলেছে।
কেমন জানি নিজেকে বন্দী মনে হচ্ছে। বাহিরে কোথাও যেতেই পারছিনা। তাহলে হইত বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দেয়া যেতো।
রাতের খাবার সময় ,  একটা অচেনা মেয়েকে আম্মুর সাথে দেখলাম। মনে হলো যেনো ভোর রাতের ওই ঝগড়াতে পাজি টা।
নাও হতে পারে। কিন্তু আমার বাড়িতে একজন অচেনা কেউ, যাকে আমি চিনিনা। ব্যাপার টা একটু ঘোলাটে।
যাই হোক সেসব ভেবে আমার কাজ নেই। যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় ফিরতে হবে। আজ একদিন কে মনে হচ্ছে এক মাস। আর পারছিনা। 
কেউ যেন দরজার কড়া নাড়ছে......
"খোলা আছে......
"helloo মিস্টার!"
ভেবেছিলাম আম্মু হবে হইত,কিন্তু না। জলদি উঠে বসলাম।
"আপনি ওই অচেনা মেয়েটা না? যে আম্মুর পাশে ছিল আর আসিফের দিকে বার বার তাকাচ্ছিল?!"
"হুম,কিন্তু আসিফ টা কে! আর অচেনা!!! আমাকে আগে দেখেন নি বুঝি!?"
" আসিফ টা হলাম আমি, অ্যান্ড আমি কখনো আপনাকে জানিনা ।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আপনি এখন বিদায় নিন!"
" চাশমিশ, ভোরে বাস স্ট্যান্ড এর ঐটা তাহলে কে ছিল?
আপনার মাথা! আপনি আরও একশটা চশমা লাগান।
যত্তসব।"
রেগে মুখ টা বাঁকিয়ে চলে গেলো।
একটু রাগী হলেও অনেক কিউট দেখতে।
সেদিনের মত ঘুমিয়ে পরলাম। হালকা ঝুম ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। ঘুমনোর জন্য সব কিছু পারফেক্ট।
পরদিন সকালে কানের কাছে চাসমিস শব্দে ঘুম ভাঙলো।
বুঝিনা এই মেয়ের প্রবলেম কি। নিজেও তো চশমা ছাড়া চোখে দেখে না। আর অন্যকে চাসমিস বলে বেড়ানো হচ্ছে।
কিছু বললাম না। উঠে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।আজকে বৃষ্টি পড়ছে না। চারদিক বেশ উজ্জ্বল।
মনে হচ্ছে আজকের দিনটা বেশ ভালো যাবে। কিন্তু সেটা হলো না।
দুপুরের দিকে মিনহাজকে কল করে আমার বিষয় টা জানালাম। আর বললাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে কল করে যেনো বলে,"কালকের মধ্যেই ঢাকায় আসতে হবে। খুব জরুরি ব্লা ব্লা ব্লা"  যাতে আব্বু আম্মু কে বুঝিয়ে এখান থেকে ভাগতে পারি।
বিকেল বেলা আড্ডা দিচ্ছিলাম। আব্বুও ছিল।
মিনহাজ ফোন করে,আর আমার কথা মতই কাজ করে। ফোঁটা লাউড স্পিকারে থাকায় বিষয়টা আব্বুর কানে যেতে প্রবলেম হুলো না। ও একটু বেশীই বলছিল। কিন্তু আমি ফোঁটা কেটে দিলাম।
আব্বু বিসয়টা বুঝতে পারছে,সো আমাই কিছু বলতে হলো না। শুধু বললো, এতদিন পর আসলে। আর কিছুদিন থেকে গেলে ভালো হতো!"
আমি কিছু বললাম না। এর একদিন এখানে থাকতে পারবোনা আমি।ঠিক দুই বছর আগেও এমন ছিলাম না আমি। কিন্তু এখন!
পরদিন ঢাকায় চলে আসি। সকালের গাড়িতে উঠেছি। এখানে এসে প্রায় রাত।এখন ওনেকটা ভালো লাগছে।
ফ্ল্যাটে এসে ফ্রেশ হতেই একটা অচেনা নম্বর থেকে কল আসছে। পথম বার রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো।
দ্বিতীয়বার কলটা রিসিভ করলাম.....
"হুম"
"আপনি ঠিক ভাবে পৌঁছেছেন?"
"হুম,কিন্তু আপনি কে!"
"এখন তো কেউ না,কিন্তু একদিন হবো। আর যখন হবো তখনই বলবো আমি কে!"
বলে কল টা কেটে দিলো। আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।
to be continued.........


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...