সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Unknown girl(part_six)

পঞ্চম পর্বের পর থেকে.....
উশমিল একটু সামলাও নিজেকে"
উশমিল কাঁধে মাথা রাখা অবস্থায় অরুনাভোর দিকে তাকালো।চোখ দুটো লাল হয়ে এসেছে,কাজলটি চোখের ঘেঁটে গেছে।সেই অসহায় অবস্থা দেখে উশমিলের অরুনাভোর বুকটা ভারি ঠেকল।মনখারাপটা যন্ত্রণার রূপ নিল।উশমিল যে অরুনাভোকে জড়িয়ে আছে তা উশমিল বোঝার পরই হুট করে হাত ছাড়িয়ে নিল।
"আমি যখন ওর  কাছে এক্সপ্যালেনেশন চাইলাম,
[[সোজা বলল,'ও পিল্জ,টিপিকাল প্রেমিকা হওয়ার চেষ্টা করিসনা।আমি তোকে এমন কনো কথাতো দিইনি কোনোদিন শুধু তোর সাথেই উঠবো,বসবো,ঘুরবো আর শোবো!'
আমি অবাক হয়ে গেলাম জানো।আই থট,হি উড নেভার হার্ট মি..
আমি যখন  জিজ্ঞেস করলাম এইসবের মানেটা কি?
বলল,'সিনক্রিয়েট করিসনা উশমিল,আমি যে টাইম পাস করছিলাম তা তুই ভালো করেই জানিস! এত নাটক করার কি আছে??'
সারা শরীরটা না আমার জ্বলছিল রাগে,দুঃখে মনে হচ্ছিল সেইতো আমারই দোষ যে ভেবেছিলাম ও আমাকে সত্যি ভালোবাসবে প্রমোথের মত..."]]
মাথা নিচু করে মুখটা হাতের মধ্যে চেপে কেঁদে উঠল উশমিল।ওর ভেঙে পরা দেখে অরুনাভো ভেঙে পরছিল।ওকে ওভাবে দেখতে পারছিলনা অরুনাভো আর।ওর মাথায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কেমন একটা সংকোচ হচ্ছিল।কিভাবে ওকে সান্তনা দেবে অরুনাভো আজ নিজেকেও অসহায় লাগছিল অরুনাভোর খুব।অবশেষে মাথায় আলতো করে হাত বোলালো,
"কেঁদে নাও যত ইচ্ছা,যতবার ইচ্ছে কিন্তু যখন কান্না থামাবে আর কখন এই বিষয়ে ফিরেও তাকাবেনা।"
উশমিল অরুনাভোকে চেপে জড়িয়ে ধরল আর হাউ হাউ করে কাঁদদে শুরু করল।থেকে থেকে একটা কথাই বলছিল,"কেন হল এটা?
কেনই বা প্রমথ আমাকে ছেড়ে গেল?কেন!কেন! কেন!" এই 'কেন?'

উশমিলকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল।মনের আঘাত যে শরীরি আঘাতের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী তা অরুনাভো জানে।
উশমিল কেঁদেই গেল সারাটা সন্ধ্যে ধরে।বাড়ি একা যেতে দিলোনা আজ আর অরুনাভো তাকে।উশমিলের মুখের দিকে সেদিন তাকাতে পারছিলনা সে।ঠিকমত চলতেও পারছিলনা উশমিল।মুখটা দেখে মনে হচ্ছিল সব অনুভূতি চলে গেছে ওর মধ্যে থেকে।উশমিলের জ্ঞান ছিল সারাটা পথ তবে সে জড় বস্তুর মত শূণ্যে চেয়েছিল। উশমিলের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে ওকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল যখন অরুনাভো,বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল তার। যে ওর মাকে কী বলবে? আদৌ কি সে মেয়ের পার্সোনাল লাইফের ব্যাপারে জানে কিছু? আর তার নিজের পরিচয়ই বা কি দেবে সে।ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলেছিল সুন্দর মার্জিত মধ্যবয়স্কা ডঃ রিনা বেরা।দেখলে তাকে কেউই বলতে পারবেনা যে মহিলার পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। দরজা খুলেই মেয়ের অবস্থা দেখে সে চমকে ওঠে।
"উশি!"মেয়ের মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন দেখা গেলনা অবশ্য।মেয়েকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে টেনে নিলেন।উশমিল ততক্ষণে চোখটা বন্ধ করে নিয়েছিল।ঘোরের মধ্যেই সে এত দূর এসেছে অরুনাভোর ভরসায়।মেয়েকে জড়িয়ে অরুনাভোর দিকে তাকিয়ে বলল,
"তোমায় তো ঠিক চিনতে পারলামনা? কোথায় পেলে ওকে এই অবস্থায়? কী হয়েছে ওর সাথে? "
"আমি অরুনাভো।ওর বন্ধু বলতে পারেন।কারণটা ও নয় একটু স্বাভাবিক হলে আপনাকে বলবে।"
"মানে? কি এমন? কি হয়েছে ওর সাথে?" ওর মা ইঙ্গিত কোনদিকে করছেন তা অরুনাভো বুঝতে পারল।
"নানা আপনি যা ভাবছেন তা নয়।ওর একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল সে ওকে ঠকাচ্ছিল তা আজ জানতে পারে সে।সেই ঘটনার আকস্মিকতায় ও এরকমভাবে ভেঙে পরেছ।" কিছুক্ষণ ওর মা হাঁ করে তাকিয়েছিল অরুনাভোর  দিকে। অস্বস্তি লাগছিল। শেষে বলল
"আমি আসি এখন।ওর খেয়াল রাখবেন।ওকে বকতে মারতে যাবেননা তাতে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যেতে পারে।আসি এবার" বলে বেরিয়ে এসেছিল অরুনাভো।সারাটা রাত সে উশমিলের চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি।ফোন করেছিল বেশ কয়েকবার কেউ তোলেনি।সারাটা রাত এপাশ অপাশ করে পায়চারি করে কেটেছিল অরুনাভোর।হঠাৎ সেই রাতে তার কোয়েনার কথা মনে আসে।যে সে কি আদৌতেও তার সাথে ঠিক করেছিল? কোয়েনাও বুঝি এরকম তীব্র কষ্ট পেয়েছিল সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার পর।বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হতে শুরু করল অরুনাভোর ।একদিকে উশমিলের প্রাণহীন মুখশ্রী আর অন্যদিকে কোয়েনার চলে যাওয়ার আগে সেই করুণ দৃষ্টি।সেই রাতে সে স্পষ্ট বুঝেছিল কোয়েনার সেই চোখের চাহনির মানে।সে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিল যে তার অরুনাভো ছাড়া কেউ নেই।তাকে যেন অরুনাভো এইভাবে ফিরিয়ে না দেয় তাহলে তার জীবনে কিছুই থাকবেনা আর।সে যতই যা বলে থাকুক অরুনাভোকে সে আসলে খুবই ভালোবেসেছিল অরুনাভোকে।অরুনাভোর আফসোস হতে থাকে কোয়নার জন্য আর অন্যদিকে উশমিলের অবস্থা আরো তাকে বেদনা কাতর করে তোলে।
তিন-চারদিন কেটে গেছে সেইদিনের পর।উশমিলের নাম্বারে ফোন করলে রিনাদেবী ধরেন।ওনার থেকেই উশমিলেরর খবর নেয় অরুনাভো।তবে আজ দেখা করতেই হবে নইলে কিছুতেই শান্ত হতে পারবেনা অরুনাভো। অফিস থেকে সোজা উশমিলের বাড়িতে চলে আসল অরুনাভো।দরজা খুলতেই ডঃ রিনা বেরা বললেন,"এসো বাবা এসো।সেইদিন তোমায় একটা ধন্যবাদটুকুনও জানাইনি, তার জন্য কিছু মনে করোনা।এবাবা দাঁড়িয়ে রইলে যে.. এসো এসো"
বসার ঘরে অরুনাভোকে বসিয়ে উশমিলের মা আর নিজে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন।রিনাদেবীর সাথে পরিচয়টা এখন বন্ধুর মত হয়ে গেছে অরুনাভোর।এত তাড়াতাড়ি এবং সহজেই তিনি অরুনাভোকে আপন করে নিয়েছেন তা অরুনাভো কোনদিন ভাবতে পারেনি। মেয়ের পাশে সেদিন ছিল এবং সেই অবস্থায় তাকে একা ছেড়ে না দিয়ে বাড়ি দিয়ে গেছে যে সে তার জন্য হয়তো।রিনাদেবীর মধ্যে উশমিলের কিছু বৈশিষ্ট্য অরুনাভো স্পষ্ট লক্ষ্য করতে পারে।তিনি উশমিলের মত মানুষজনকে সহজে আপন করে নেন এবং নিজের জীবন সম্পর্কে উশমিলের মতই ভীষণই খোলাখুলি কথা বলেন। একা একা নিজের মেয়ে আর কাজকে নিয়ে তিনি নাঝেহাল হয়ে পরেন মাজেসাঝে তখন মেয়ের দিকে নজর দিতে পারেন না আর এর জন্য তিনি নিজেও ভীষণ অনুতপ্ত।উশমিলের এই অবস্থার জন্য সে নিজেকেই দায়ি  মনে করেন তা অরুনাভো তার সাথে কথা বলেই বুঝতে পারে।কিছুক্ষণ পর খাবারের একটা ট্রে নিয়ে এলেন রিনাদেবী।কিন্তু অরুনাভোর মনটা আনচান করছিল উশমিলের অবস্থা জানার জন্য।এইসব ফরম্যালিটিস না করলেও তার চলত।অরুনাভো একটু দায় পরা হাসি হাসল।
"উশমিলের অবস্থা জানার জন্য মন কেমন করছে তো?ও ঘুমোচ্ছে এখন বাবা।একটু পড়েই উঠবে তখন দেখা করে নিও।"
"আচ্ছা। ও কেমন আছে এখন?"
"স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে ওর।তুমি না থাকলে যে মেয়েটা আমার সেদিন কী করত কে জানে? অশেষ ধন্যবাদ তোমায়!"
"একি বলছেন আন্টি।ধন্যবাদ বলার কিছু নেই.."
"সেইদিন রাত্রে বুঝতে পারলাম যে মা হিসাবে কতটা ব্যর্থ আমি।মেয়ের জীবনে কি চলছে তা পর্যন্ত জানিনা? ছোট থেকে ওকে যদি ওর মা হিসাবে প্রাপ্য সময় আর ভালোবাসা দিতাম আজ হয়ত এটা হতনা জানো।আমারই দোষ। একটা দুটো কথা ছাড়া আজকাল আর কথা বলেনা ও।আমি ওর আর প্রথমের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতাম।কবে কিভাবে ভেঙে গেল তাও জানতাম কিন্তু তখন আমি আমার ডির্ভোস নিয়ে ব্যস্ত।ও যেই ভরসাটা আশ্বাসটা আমার থেকে চেয়েছিল মা হিসাবে তা দিতে পারিনি।" রিনাদেবীর গলাটা কেঁপে উঠল ।
To be continued..........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...