সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Unknown girl(part_seven)

ষষ্ঠ পর্বের পর থেকে.......
আন্টি,যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে এবার এগুলো ভুলে যান। ভবিষ্যতে যাতে এমনটি না হয় তা খেয়াল রাখুন।"
"সেতো রাখতেই হবে।এবাবা তুমি তো কিছুই খাচ্ছোনা।শুরু কর।"
  কিছুক্ষণ পর উশমিলের ঘুম ভাঙলেই রিনাদেবী অরুনাভোকে উশমিলের ঘরে নিয়ে যায়।উশমিল একটা কৃত্রিম হাসি দেয়।অরুনাভো জিজ্ঞেস করে,"কেমন আছো এখন?"
খানিক নির্বিকার ভাবে উশমিল বলে,"ভালো"।
রিনাদেবী ততক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন।অরুনাভো বুঝতে পারেনা সে কী বলবে? সামনে যে বসে সে তার উশমিল তো নয়।এতো তার মতন দেখতে কোনো জড় বস্তু।
অরুনাভোর বুকটা ভারি হয়ে আসে।অরুনাভো নানান গল্প বলতে শুরু করে উশমিলকে এই ভেবে যে যদি স্বাভাবিক আচরণ করলে উশমিল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।কিন্তু উশমিল শূণ্য দৃষ্টিতে  চেয়ে থাকে অরুনাভোর দিকে।
সেই সন্ধ্যেটা ব্যর্থ হয়ে যায় অরুনাভোর কাছে।বাড়ি ফেরার সময় সে পণ করে যে তার আগের উশমিলকে সে ফিরিয়ে আনবেই।অফিস থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন উশমিলের সাথে দেখা করতে শুরু করে সে।কখন উশমিলের পছন্দের ফুল কখন চকোলেটস,বই,শো-পিস এইসব কিনে নিয়ে যায়।
।উশমিল মাঝে মাঝে দুই একটা কথার উত্তর দেয় বেশিরভাগ সময় শূণ্যের দিকে চেয়ে থাকে।এইভাবে একমাস যায়।উশমিলের আচরণে এখন একটু পরিবর্তন এসেছে।সেই নির্লিপ্তভাবটা পুরোপুরি না কাটলেও এখন একটু বেশি কথা বলে নিজের রুম থেকে বেরোয় কাকিমার সাথেও আগের থেকে একটু বেশি কথা বলে।এইরকম একটা সন্ধ্যে বেলায় তিনজনে মিলে গল্প করছিল হঠাৎই উশমিলের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে থাকে।রিনাদেবী গিয়ে তার আদরের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে,
"কী হয়েছে উশি?"
মাকে জড়িয়ে উশমিল কেঁদে বলে,"মা,আই অ্যাম সরি!
বাইরের একটা ফাল্তু ছেলের জন্য তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি...  আর কখনও এমন করবনা আমি আবার আগের মতন হয়ে যাব।"
মাথায় আলতো করে ঠোঁট ঠেকিয়ে রিনাদেবী বলেন," পাগলি আমার। দোষ আমারও কিছু কম নয় রে সোনা"
মা-মেয়ের বিপরীতে বসে অরুনাভো দুজনের আলিঙ্গণ আর আবেগপূর্ণ মুহূর্ত দেখতে থাকে।নিজে একটু অস্বস্তিতেও পরে যে এটা ওদের মুহূর্ত ও এখানে একদম আউটসাইডার।অরুনাভো উঠে পরে।অরুনাভোকে উঠে পরতে দেখে উশমিল বাধা দিয়ে বলে,"কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"না ভাবলাম..."  অরুনাভোকে শেষ করতে না দিয়ে বলে,"এখানে বসে থাকো চুপচাপ"
সেই সন্ধ্যেটা ভালোই কাটে।অরুনাভো মনে মনে এক প্রকার শান্তি পায় যে সে তার লক্ষ্যের কিছুটা কাছে পৌঁছাতে পেরেছে।বাড়ি ঢুকতেই অরুনাভোর মা ছেলেকে বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,"তোদের অফিসে কোনো ওভারটাইম করতে হচ্ছেনা আজ সব জেনেছি আমি নীলেশের থেকে। কোথায় যাস তুই রোজ??"
"মা,সব বলব এমন কিছুই নয়।"
"কোয়েনার সাথে অন্যায় করা সত্বেও আমি তোকে কিছু বলিনি বাবা কিন্তু এখন মেয়েদের পেছনে এভাবে ঘুরে বেরাচ্ছিস?"মায়ের কথা শুনে অরুনাভো বুঝতে পারে নীলেশ উল্টো পাল্টা কিছু বুঝিয়েছে মাকে।
"নীলেশ তোমাকে কী বলেছে বলোতো?"
"কী আর বলবে যা তুই করে বেরাচ্ছিস তাই।শোন আমি আর চুপ করে বসে থাকবনা কাল থেকে তোর জন্য পাত্রী দেখা শুরু করছি বলে দিলাম"
"মা,আমি খেতে বসে তোমাকে  সব বোঝাচ্ছি তুমি এখন যাও"
 
  খেতে খেতে অরুনাভো সবটা বোঝায়।তার মা শুনে ছেলের জন্য চিন্তিত হয়ে বলেন,"সব মানলাম বাবা কিন্তু মেয়েটি যে তোকে ভালোবাসবে বা বাসে তা কিন্তু নিশ্চিত নয়।সেই হিসাবে তুই সময় নষ্ট করছিস।এখন তো মেয়েটা ভালো হয়ে গেছে খানিকটা এখন এই সব বন্ধ কর বাবা"।মায়ের বলা 'ভালোবাসবে কি বাসে' কথাটা সোজা যেন মনে এসে বিঁধে যায় অরুনাভোর।
সত্যি সে ভাবতে থাকে যে  এত কিছুর পর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই উশমিলকে পাওয়ার সেটা সে শুরুর থেকেও জানত।তবু সে দিনের পর দিন উশমিলের প্রতি তার প্রেমটাকে কেন প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে।আর এই এত দিনে উশমিলের প্রতি তার অনুভূতিগুলো সার-জল পেয়ে অনেকেটা বেরে গিয়েছে।আর মেয়েটা এই সমস্ত ব্যাপারে কথা বলার অবস্থাতেও নেই।সবে সবে একটা শক থেকে উঠেছে অরুনাভো নির্লজ্জের মতন তার কাছে ভালোবাসা দাবি করতে পারবেনা ।সারাটা রাত উশমিলকে নিয়েই ভাবতে ভাবতে কেটে যায় তার।অবশেষে অরুনাভো যে উশমিলের বন্ধুত্ব পেলেই খুশি হবে সেটা সে গেঁথে নেয় নিজের মনে।
ধীরে সময় এগোতে থাকল আর সাথে উশমিল স্বাভাবিক হতে লাগল।ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করেছে সে এবং টিউশানসগুলো অ্যাটেন্ট করতে শুরু করেছে।রোজ রোজ আর উশমিলের বাড়ি না যাওয়া হলেও প্রায় প্রতিদিনই কিংবা এক-দুইদিন অন্তর অন্তর উশমিল নিজেই অরুনাভোকে ডেকে নেয়,কখনও ,ঢাকুরিয়া লেকে,শপিং কমপ্লেক্সে,বাড়িতে বা মাঝেসাঝে এমনি  রাস্তায় হাটঁতে।অরুনাভো বুঝতে পারে যে উশভিল দুর্বল হয়ে পড়েছে তার প্রতি।
সবকিছুই খুঁটিনাঁটি তার অরুনাভোকে বলতে হয় এখন।উশমিল সরাসরি প্রকাশ না করতে চাইলেও একটা নামহীন সম্পর্ক চলতে থাকে দুজনের মাঝে।এইভাবে একটা বছর কেটে যায়।কিন্তু তাদের সম্পর্কে কোনো ছেদ পরেনা।সব একই গতিতে চলতে থাকে।
একদিন সন্ধ্যেবেলায়  উশমিল আর অরুনাভো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল।হঠাৎ উশমিল বলে উঠল,"আচ্ছা তোমার বাড়ির কেউ আমার কথা জানে?"  অরুনাভো একটু অবাক হয়ে উত্তর দেয়,
"মা জানে,কেন বলোতো?"
"না আসলে তুমি আমার ফ্যামিলির এত ক্লোজ ভাবছিলাম আমিতো তোমার পরিবারের কাউকেই চিনিইনা ব্যাস শুনেছি.. তাই আরকি।তা তোমার মাকে কী বলেছো আমার ব্যাপারে?"
অরুনাভো কেঁসে ওঠে। একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে,"বলেছি এরকম পার্কে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল তারপর আর যা যা হয়েছে তাই"
"তিনি শুনে কী বল্লেন?" অরুনাভো মনে মনে ভাবে যা বলে তা শুনলে আর কথা বলবেনা উশমিল।তাই বিষয়টা বদলানোর চেষ্ঠা করে।
"কী আর বলবে.. ছাড়ো ওসব. দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমাকে বাড়ি ফিরতে হবেতো"
"সে তো হবেই।কাল সন্ধ্যেবেলায় কোনো কাজ আছে তোমার? "
"না,কাল কোথায় যাবে আবার?"
"তোমার বাড়ি তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে"
"মানে? হঠাৎ এমন ইচ্ছে হওয়ার কারণ?"
"বারে...তুমি আমার মাকে চেনো বন্ধু পাতিয়ে ফেলেছো আমি তোমার পরিবারকে জানবোনা? চিনবোনা?"
"না তা কী বলেছি?..." অরুনাভোকে শেষ করতে না দিয়েই উশমিল বলল," ব্যাস তাহলে চুপ।কাল সন্ধ্যেবেলায় আমি আন্টির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি এটা ফাইনাল"বলে উশমিল চলে গেল।এইদিকে ঘোর চিন্তায় পড়ল অরুনাভো।মেয়েটা হঠাৎই এমন বেঁকে বসল কেন?মা তো রোজ আমাকে ওকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে বলে।মাতো ভাবে যে ও আমাকে ঘোরাচ্ছে।কাল যে কী হবে আল্লাহ জানে।বাড়ি এসে সে মাকে জানায় যে উশমিল আসতে চাইছে।তার মা এতটুকু কিছু বললেনা এই বিষয়ে শুধু বললেন ঠিক আছে।সম্ভবত সে মনে মনে পণ করে রাখলেন যে তিনি তার ছেলের মনের কথা ওই মেয়েকে কাল জানাবেনই জানাবেন তাতে যা হয় হোক।ছেলের ব্যাপারে উশমিলের বিষয়টি তিনি তার স্বামীর থেকে লোকাননি।এই কথাটিও লোকালেন না এবং স্বামীকে আদেশ দিলেন সে যেন সেই সময় বাড়ি থাকেন।
To be continued.......
 
  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...