সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Unknown girl(part_four)

তৃতীয় পর্বের পর থেকে....
"আজকালকার ছেলেমেয়েরাও রবীন্দ্রনাথের গল্প পড়ে? ভালোলাগলো দেখে"কথাটা বলেই অরুনাভো ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে।
"আজকালকার ছেলেমেয়ে বলে রবীন্দ্রনাথকে পড়বনা,জানবনা তা হয়না
"একদম ঠিক কথা।"
"আপনার বয়স কত?"(মেয়েটা)
"হ্যাঁ?"
"বয়স? এজ?"(মেয়েটা)
"ও! ছাব্বিশ"
"এমন ভাবে বললেন কথাটা যেন আপনার বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে"(মেয়েটা)
(Uh মেয়েটা তো বেশ ঝাঝাঁলো ।অবশ্য না হলে কী সেদিন মেট্রোতে অমন ভাবে বলতে পারত।)
"আপনি কী করছেন?পড়াশুনা না চাকরি?"
"এম.এ ইন সাইকোলজি,ফার্স্ট ইয়ার আর আপনি?"(মেয়েটা)
"চাকরি করছি।"
মেয়েটি বই বন্ধ করে অরুনাভোর দিকে হ্যাফ ঘুরে বসল।
"বুঝতে পেরেছি আপনি এখন আমাকে আর পড়তে দেবেন না তাই তো?নানান কথা বলে বিরক্ত করবেন তাই তো?"(আবার মেয়েটা)
"এমা! না না...সরি! আপনি পড়তে পারেন।আমি ডিস্টার্ব করবনা"।অরুনাভো খানিটা অপমানিত বোধ করে।
"না না,ইটস ওকে।বলতে পারেন আমার ভালোই লাগে এভাবে অচেনা মানুষদের সাথে কথা বলতে।এই পার্কে এইভাবে অনেক চেনাজানা মানুষজন পাতিয়েছি আমি।"মেয়েটার মাথায় ক্র্যাক্র আছে নাকি অরুনাভোর সাথে খিল্লি করছে  সে।অরুনাভো একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে।
"পাগল ভাবছেন আমাকে নিশ্চয়ই? মানুষের নানান হবি থাকে আমার তেমনি এটা।ঘাবড়াবেননা।" বলে খানিকটা হেসে ওঠে সে। "বাই দ্যা ওয়ে আমি উশমিল , অ্যান্ড ইউ?"
"অরুনাভো । আজব হবি আপনার দেখছি।এইরকম তো শুনিনি আগে কারুর থেকে"
"হবির আবার আজব হওয়ার কী আছে? হবি ইজ হবি"
মেয়েটার সাথে কথা বলে অরুনাভোর বুকের  ভার নেমে যায়।এতক্ষণ যে সে কোয়েনার ব্যাথা নিয়ে অস্থির হচ্ছিল তা কেটে যায় অনেকটা। মেয়েটা বাইরে থেকে বেশ ঝাঝাঁলো কিন্তু আসলে খুবই ভালো আর মিশুকে।
মেয়েটার সাথে কথা বলে জানতে পারে মেয়েটার ব্যাপারে এবং জানাও সে নিজের ব্যাপারে।মেয়েটির বাড়ি উদয়নগর তবে সে বড় হয়েছে হাকিমপুর।
তাদের পৈত্রিক বাড়িতে।মা বিখ্যাত  গাইনোকোলজিস্ট ডঃ রিনা বেরা।আর বাবা রাতুল বাবু।তিনি পৈত্রিক ব্যাবসা দেখভাল করেন।তার মা বাবার আইনত বিচ্ছেদ হয়েছে  দু-বছর হল।এই দুবছর সে এই উদয়নগর থাকে মাঝে মাঝে সে হাকিমপুর যায় বাবার সাথে দেখা করতে।মেয়েটির প্রিয় রঙ হল আকাশি।সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে খেতে তার মায়ের হাতে রান্না,যেকোনো কিছু।কি আজব!
তার প্রিয় বন্ধু হল শ্রীজিৎ।মেয়েটি কথা বলতে যে ভীষণ ভালোবাসে তা এতক্ষণে অরুনাভো বুঝে গেছে।বাপ রে এই মেয়েটার কী বিচিত্র হবি।এইভাবে সমস্ত অচেনা মানুষদের নিজের ব্যাপারে এত বলা উচিত নয় যা দিন কাল পরেছে!অবশ্য ওর এই বিচিত্র হবির জন্য আজ একটা অসম্ভব কাজ সম্ভব হল।অরুনাভো ভাবে এর আগে যে ওদের দুবার দেখা হয়েছে তা কী ও খেয়াল করেছে? প্রথমটায় না করলে দ্বিতীয়বার তো করাই উচিত।তবে জিজ্ঞেস করতে পারলনা অরুনাভো কিছু এই বিষয়ে।
-------------------------------------------------●●●
আপনি এইভাবে যেতে দিলেন কেন তাকে?আপনি এত বছর তার সাথে ছিলেন এত কথা দিয়েছিলেন তার পরেও?"
"বোঝাতে পারবনা।তবে মনটা বিষিয়ে গেছিল রোজকার ঝগড়ায় তাই।আজকে যদিও সকালবেলা কোয়েনাকে বিয়ের সাজে অন্য কারুর পাশে দেখে আমার ভালো লাগছিল না.."
মেয়েটি আমাকে শেষ করতে না দিয়েই ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।
"অনেক দেরি হয়ে গেছে দেখছি! আমাকে যেতে হবে এবার। বাই,নাইস মিটিং ইউ।" বলে সে চলতে শুরু করল।
"বলছি ফার্দার কনট্যাক্ট কি করে করব আপনার সাথে?"নির্লজ্জ মনে হল অরুনাভোর নিজেকে।মেয়েটা দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে মুখে-কপালে হাত দিয়ে কি একটা ভাবল।
"মুখপুস্তিকা কবে কাজে আসবে?অ্যাড করে নেবেন।" বলে মেয়েটি হাটাঁ দিল।খুব সন্তুষ্ট লাগল অরুনাভোর।সারাটাদিন যা ভেবেছিল তার উল্টোটা কাটল।মিষ্টি আমেজের উপর কেটে গেল দিনটা।পার্ক থেকে বেরিয়ে আগে পকেটে যে সিগারেটের প্যাকেটা ছিল তাতে চার পাচঁটা অবশিষ্ট থাকলেও সে ছুঁড়ে ফেলে দিল।আর একটা হাসি দিয়ে মনে মনে পণ করল আর খাবেনা যখন ওর এত কষ্ট হয়।
কি বোকামো শুরু করল অরুনাভো এটা।সিগারেট খাওয়া কেউ তার ছাড়াতে পারেনি কোনোদিন, কোয়েনাও না।মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা তো আছেই।সারাটা রাস্তা মেয়েটার বলা কথা,হাসির আওয়াজ,ডান হাতের অনামিকায় পড়া একটা সোনার আংটি,নারীত্ব পূর্ণ তার হাত,ঠোঁটের গোলাপি রঙ,চোখের চাহনি-সমস্ত কিছু বারবার ভেসে উঠতে লাগল অরুনাভোর চোখের সামনে।এসেই সে নীলেশকে ফোন করে সমস্তটা জানালো।
নীলেশ সব শুনে অবাক হয়ে বলল,"লাকি ইউ!সত্যিই  মিরাকেল।তবে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করিসনা বা এগোসনা ভালো করে পরখ না করে।"।নীলেশের কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে গেল।যেই অ্যাপটা সে বেশ কয়েকদিন ইউস করবেনা ভেবেছিল সেইটাই খোলার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ল অরুনাভো।'উশমিল ' নামটা টাইপ করতে করতে ভাবতে লাগল মনে মনে 'উশমিল আর অরুনাভো'-জাস্ট পারফেক্ট লাগছে শুনতে।
ইশ! কি বাচ্চা ছেলেদের মত আচরণ করছে সে।উশমিলের প্রোফাইলটা খুলে সে 'অ্যাড' বাটনে কিল্ক করে একটু ঘাটতে লাগল।যথেষ্ট পশ ফ্যামিলির মেয়ে সে।অরুনাভোকে আরো এক-দু বছর খাটতে হবে তার এক্সপেনসেস ওঠানোর জন্য হয়তো।তবে তা কয়েকমাসেও পসিবেল করে ফেলতে পারে সে,তাতে চাপ নেই।উশমিলের প্রচুর ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব আছে।এত ছেলেদের সাথে ছবি দেখে অরুনাভো কিছুটা চিন্তায় পরে আর এই শ্রীজিৎ ছেলেটা মনে হয় চিপকে থাকে ওর সঙ্গে।শ্রীরাজের সাথে প্রতিটা ফোটো দেখে গা জ্বলতে থাকে অরুনাভোর।দু-ঘন্টা পর ফাইনালি নোটিফিকেশন আসে অরুনাভোর বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করার।অরুনাভো উত্তেজনায় লাফিয়ে ফেসবুকটা ওপেন করে মেসেজে কিল্ক করে।উশমিল আগে থেকে টেক্সট করে রেখেছে।
উশমিল: হ্যালো,সরি ওভাবে উঠে চলে আসার জন্য আসলে আমার একটু কাজ ছিল।
আর অরুনাভোর জীবন এক নতুন মোর নেয় সেই মুহূর্তে।
to be continued.......

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...