সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: চার)

লেখক:আসিফ ইকবাল।
চিরকুট টা দেখার পর মনে মনে একটু খুশিই হলাম।
আপদ টা চলে গেছে। ওর জন্য আজকে কত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়ছে।
ওর রুমে দেখি,ওর কাপড়ের ট্রলিটা রেখে গেছে....
ওগুলি ফালাই দিতে হবে। বাড়তি ঝামেলা।
তবে ওকে মন থেকে ধন্যবাদ জানায় যে ও আমার জন্য রান্না করে রেখে গেছে....এটা খুব ভালো। কিন্তু মনে হইনা ও কিছু খেয়েছে।আজকে খুব ক্লান্ত তাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে গেলাম।
ঘুম আসছে না। শুধু অপরিচিতার কথা মনে পড়ছে। মেয়েটা কোথাও গেলো। ও তো ভালোভাবে রাস্তাও চেনেনা। জানিনা কি করছে। যা ইচ্ছা করুক আমার ওসব ভেবে লাভ নেই। ও তো কিছু দিনের জন্য আমার এখানে ছিল। আর এখন চলে গেছে।তাতে আমার কি!
অনেক্ষন ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। ঘুমাতে পারছিনা। ঘড়িতে দেখি ১১টা বাজে। শুধু অপরিচিতার কথা মনে পড়ে। ওর মায়াবী চোখ দুটো সামনে ভেসে আসছে। জানিনা কেনো! কিন্তু ওকে ভালোবেসে ফেলছি,সেটা এই কিছু সময়ে বুঝতে পারলাম।আর থাকতে পারছিনা। ওর কাপড়ের ট্রলি টা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ওকে খুঁজতেই হবে... আশা করি এখনও বেশী দূর যেতে পারেনি.....
অনেক খুঁজলাম, কোথাও নেই। রীতিমতো আমার কান্না পাচ্ছে, ওকে হারিয়ে ফেললাম না তো! ওর কিছু হলো না তো!হটাত মনে পড়লো যেখানে ওকে প্রথম দেখেছিলাম। ওখানে থাকতে পরে....
হম,আমি যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনি.  অপরিচিতা রাস্তার পাশের বেঞ্চি তে বসে আছে।  নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।  মনে হচ্ছে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছে.....
___অপরিচিতা???অপরিচিতা???(কোনো সাড়া নেই)
আবার ডাকলাম..... তাফা???
এবার আমার দিকে মুখ ঘোরালো। ও কাদছে।ওর চোখ দুটো আমাকে তাই  জানান দিল!ও কিছুটা অবাক হযে বললো.....
___আপনি এখানে? কে আসতে বলেছে আপনাকে? আপনি চলে যান,আমি আপনার সাথে যাবনা। কিছুদিন থাকতে দেবার জন্য ধন্যবাদ।(একনাগাড়ে কথা গুলি বললো,আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে)
___আরে,কে বললো আমি তোমাকে নিতে আসছি। তোমার ট্রলি টা রেখে আসছো।ওটাই দিতে আসলাম।(বলে ওর হাতে ট্রলি টা গুজে দিলাম)
ওহ,কিছুটা অবাক হইয়েছে। হইত অন্য কিছু আশা করছিল।
___হম,ধন্যবাদ।(অপরিচিতা)
বলে অন্য দিকে মুখ ঘোরালো।
___ওকে আমি চলে যাচ্ছি ভালো থেকো।(কথাটা বলে পাশের অন্ধকারে লুকিয়ে পরলাম,একটু মজা করা যেতেই পারে)
ও,পিছন ফিরে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে,,,,কিন্তু কেউ নেই,
কিছুক্ষন পর তাফার সামনে গিয়ে বসলাম। ও একটু অবাক হলো। কিন্তু কিছু বলছেনা......
____, তাফা,,আমার সাথে যাবে?
____(ও কিছু বলছে না)
____জানোই তো,একা থাকি। বাহিরে খেতে হই, ইচ্ছে করে না হোটেলে খেতে। তাই ভাবলাম তোমাকেই নিয়ে যাই,কি বলো! আর তোমার রান্নাও অনেক ভালো। 
____হম,,,,
____আমার সাথে চলনা প্লিজ, প্লিজ,,,আর কখনো তোমায় যেতে বলবনা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ তাফা।
____নাহ,হবে না আপনি যান,(অনেকতো অভিমানী কণ্ঠে)
____ওহ,অনেক request করলে এরকম হবে এটা স্বাভাবিক।
তারপর আমি নিজের রাস্তা ধরলাম। পিছন ফিরবো ঠিক তখনই। তাফা আমার শার্ট টেনে ধরলো।
____কিহ, তুমিনা আমার সাথে যাবেনা?
____এখন যাবো(তাফা)
____তখন না,বললে যাবে না??
____বেশী অনুরোধ করছিলেন তাই ওমন বলছিলাম।(তাফা)
ওহ,মনে হয় একটু হেসে দিল,কিন্তু আমি তার হাসিটা দেখতে পেলাম না। কেমনে দেখবো? দেখা গেলে তো........
অতঃপর ওকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
ওকে কেনো আমার কাছে নিলাম,সেটা অপ্রকাশিত থেকে গেলো। 
ও রাত্রে কিছু খায়নি। তাই ওর ঘরে খাবার দিয়ে আসলাম।
___তাফা,শোনো?
___kih বলেন?
___আর কখনো কাদবে না। আর এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে। বুঝেছ?
___হম,বুঝছি(তাফা)
ও,একেবারে বাচ্চাদের মতো। জানিনা কি এমন হয়েছে যার জন্য ওকে আমার কাছে আসতে হলো....
ওকে খাবার দিয়ে। আমি আমার রুমে আসলাম। এবার হইত ঘুমোতে পারবো ভালোভাবে।
তাফা র জন্য আমার জীবন টা যেনো আরও সুন্দর হয়েছে।
রিনা ভাবির দৌলতে এখনকার সবাই জানে তাফা আমার বউ,আর মা বাবাও তাই জানে। তাই আমাদের একসাথে থাকতে তেমন কোনো প্রব্লেম হইনা।
ওর,সাথে দিন গুলি অনেক ভালই কাটছে, আগে ছুটির দিন গুলোতে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতাম। এখন তা আর হইনা, তাফাকে নিয়ে ঘুরতে যাই। ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, আর আমাকেও এখন নামায পড়তে হয়। না হলে না খেয়ে থাকতে হয়।
ওর ছেলেমানুষী ভাবগুলো আমাকে ওর প্রতি আরো বেশি দুর্বল করে।  ওর সাথে থেকে আমার মধ্যেই অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি।
হম, তাফা কে,অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ওকে বলবো কিভাবে ভেবে পাচ্ছিনা।  আর আমি বাসায়  দিনে কিছু সময় মাত্র থাকি। ওর সাথে তেমন কথা হয়না। ছুটির দিন গুলিতে শুধু ওর কথায় শুনতে হয়,,বুঝিনা কেনো! ও এত চঞ্চল। সরা সপ্তাহের জমে রাখা সব কথা আমাকে weekend এ বলে। আমারও যে কিছু বলার থাকতে পরে,,সেটার কোনো দাম নেই....
আর,আমারও শুনতে ভালোলাগে। খারাপ লাগে তা না।
দৃশ্যপট, অফিস।
কাজে,মন বসছে না। মাথায় তাফা চেপে বসে আছে। শুধু ওর কথা মনে পড়ছে। খুব বেশি বলতে চাওয়া কথাগুলি চেপে রাখলে এমন হাওয়া স্বাভাবিক।
আজকে কেনো জানি, সকালে তাফা আমার সাথে তেমন কথা বলেনি।অন্যদিন কত কিছু বলে। এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর ফোন টাও রেখে আসছি বাসায় ভুল করে....
হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
অফিসের  ল্যান্ডলাইন থেকে  আমার ফোন কল দিলাম। কয়েকবার রিং হলো কেউ ধরছে না।
অবশেষে ফোনটা রিসিভ হলো। তাফা ফোন ধরছে.....
___আস্সালামু আলাইকুম।(তাফা)
___walaikumussalam.. তাফা  এটা আমি.....
___হম,জানি। আপনি  এতে ভুলককার কেনো? মনে করে ফোনটাও সাথে নিয়ে পারেন না!(তাফা)
___হম,আমি এমনি। তাফা একটা কথা বলি?
___এখন বলতে হবে না। বাসায় এসে বলবেন। আমি ফোন রাখবি...
___আরে নাহ,দাড়াও ,,,
___huh....
___তাফা, আমি তোমাকে ভালোবাসি.....(কোনোভাবে কথাটা বলে ফেললাম)
___huh...
___কি হলো কিছু বলো?  তোমার সামনে থাকলে বলতে পারিনা। তাই এভাবে বললাম। কিছু বলো প্লিজ। অনেক ভালোবাসি তোমাকে....কিছু তো বল?
___ ••••••••••(ওঃ ফোনটা কেটে দিলো। কিছু বললো না।)
to be continued..........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...