সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: দশ)

লেখক:আসিফ ইকবাল!
নবম পর্বের পর থেকে.........
ঠিকঠাক বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো।যদিও রাফার বিদায়ী বেলায় চাচীআম্মা, মা , চাচার চোখের দিকে চাওয়া যাচ্ছিল না।কিন্তু তাদের অনেক খুশি মনে হচ্ছে। আর দুঃখী হবার তো কোনো কারণ নেই!
আরেকটু সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসলে বাড়ি বেশ ফাঁকা hoye গেলো। দূরের আত্মীয়রা যারা ছিল ইতিমধ্যেই চলে গেছেন। তবে কিছু নিকট আত্মীয় এখনো আছেন। এখন বেশ ভালোলাগছে। লোকজনের ভিড় অনেক টা কমে গেছে।
সব শেষে রুমে গিয়ে একটু বসলাম। তাফার কথা মনে পড়ছে।
ওকে আমি ঠিক ভাবে বুঝতে পারিনা। আমাদের বিয়েটা হইতো একটি অন্য ভাবে হয়েছিলো। কিন্তু আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। আর আমার এরকম বিয়ে কোনো কালেই পছন্দের বিষয় ছিল না। তাফাকে আসলেই আমি বুঝতে পারিনা। আমার মনে হয় না ও আমাকে ভালোবাসে। হম,আমি ওকে বিয়ে করেছি এটা ঠিক। আমার বউ হিসেবে ও ওর সব দায়িত্ব পালন করে। তবে বার বার মনে হয় ও হইতো বিয়ে রাজি ছিল না। আর আমাকে বাধাও তো দিল না। দিবেই বা কি করে! ওর তো যাবার কোনো জায়গা নেই। চেনাজানা বলতে শুধু আমিই। তাই হইতো আমাদের বিয়েটা জোর করে মেনে নিয়েছে.....
এসবই ভাবছিলাম!
কিছুক্ষণ পর মা আমার রুমে আসলেন।
আমাকে খেতে যেতে বললেন। আমি একবার বলেছি যে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু আমার কথায় কান দিলেন না!
"জলদি চলে আয়!"
বলে চলে গেলেন। আমি হইতো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি।
তাই যেতেই হবে যখন,দেরি করলাম না।
বাড়ির সবাই আছেন এখানে। এখন ঠিক বুঝতে পারছি আমাকে এখানে খেতে ডাকা হইনি।
"সাগর,এদিকটায় বস!" বাবা বললেন।
"হুম"
একটু পর তাফা এসে আমার পাশে বসলো। মুহি অন্য পাশে বসে আছে।ওকে দেখে আমি ঠিক বুঝতে পারছি,ও কি ভাবছে।
একবার   তাফার দিকে তাকালাম, ও মাথা নিচু করে বসে আছে। তার পর বাবা শুরু করলেন.......
আমাদের বিয়ের বিষয় টা তিনি সবাইকে জানালেন। তাকে অনেক দুঃখিত মনে হচ্ছে। চাচা একবার আমার দিকে আর চোখে তাকালেন। তার পর উঠে চলে গেলেন। মনে হয় বিষয়টা ভালোভাবে নেন নি। যাই হোক ভুলটা তো আমারই। তবে বাকিরা সবাই খুশি হয়েছে। কিছুক্ষণ পর মুহি আমার পাশ থেকে উঠে দাড়ালো। তার পর আমার আর তাফার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো। ফর্সা মুখটা একেবারে লাল হোয়ে গেছে।
"ওদের খেতে দাও" বলে বাবাও উঠে চলে গেলেন ।
তবে অন্যদের দেখে বেশ খুশি মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাফা কে নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দিয়েছে।
তারপর সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করলাম। বাহিরের কেউ ছিল না বলে তাফাও আমাদের সাথেই খেলো।
তারপর আমি আমার রুমে চলে আসলাম।  কেমন জানি একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। বাবা হইতো কিছু বলছেন না, কিন্তু তাকে না বলে বিয়ে করায় হইতো কষ্ট পেয়েছেন। আর চাচাও
আমাদের বিয়েটা ভালোভাবে নেন নি।
কিছুক্ষণ পর তাফা আসলো আমার রুমে..............
ওকে কেমন জানি বিষন্ন মনে হচ্ছে। আর ও আমার রুমে কেনো! জিজ্ঞাসা করলাম.....
"তুমি এখানে যে!"
"হুম,আজকে এখানেই শোবো!"
(ওর কথায় একটু ভেবাচেকা খে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বললাম)
"কিন্তু, আমি কখনো কারোর সাথে বেড শেয়ার করিনি। একা শুয়ে অভ্যাস! তুমি অন্য কোথাও যাও!"
(আমি যে এমনটা চাইনা, টা নয়! কিন্তু একটু ভাব তো নেওয়া যেতেই পারে)
"উহ, ঢং! আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো। আপনি চাইলে অন্য কোথাও যেতে পারেন"
তার পর সোজা শুয়ে পড়লো। আমি কিছু বলার আগেই।
আমি আর কি করবো! তবে আজকে যে ঘুম আসবেনা এটা ঠিক ভালোভাবে বুঝতে পরছি।
আজ ওর হঠাৎ এখানে আসার কারণটা বুঝতে পারছি না।
মা, হইতো পাঠিয়েছে। তাই না করতে পারেনি। বিয়ে পর একসাথে এটাই আমাদের প্রথম রাত।
তাফা ঘুমিয়ে পরছে।
কি অদ্ভুত ভাবে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা!  কিন্তু আমার ঘুম আসছে না।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করছি। পাশের ডিম লাইট টা জ্বালিয়ে রাখছি যাতে ওকে দেখতে পায়।
তাকিয়ে আছি!হম,সেই কতক্ষন থেকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।তবু চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না।
বউটা যখন আমারই! সারাজীবন দেখতে পাবো। এই প্রত্যাশায় কিছু ক্ষন পর  অন্য দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে পরলাম।
মাঝরাতে বুঝতে পারলাম,পাগলীটা আমায় জড়িয়ে রাখছে।
আর কত নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে.. ওর দিকে একবার তাকিয়ে ঘুমায় গেলাম।
সকাল ৪ টা ৩০.......
তাফার  ঝাকা ঝাঁকিতে ঘুম ভেংগে গেল। ও প্রতিদিন এই সময় উঠে পরে। আমি ঠিক ভাবে চোখ খুলে তাকাতে পারছিনা।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললাম কি হয়েছে....? 
"অনেক কিছুই হয়েছে, এখনই চোখ খুলুন। নইলে পানি ঢেলে দেবো।"
"(ওর কথা শুনে মনে হলো, খুব রেগে আছে। তাই উঠে পরলাম)"
"আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেছেন কোন সাহসে? আপনাকে না বলেছি আমাকে স্পর্শ না করতে? আমি আপনার অনুগ্রহে থাকি বলে আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন না।"
"আমি তোমার বর, সো! এটা আমার পক্ষে।"
"হুম,কিন্তু আমি একটু কম মানি!"
তার ও চলে যাচ্ছিলো; কিন্তু আমি ওর হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললাম,"বাহিরে যাচ্ছ, নিকাব পরবে না? আমি চাইনা আমার বউকে অন্য কোনো ছেলে দেখুক।
"হম,আমাকে ধরবেন না প্লিজ। নইলে আমি কেদে দিব,"
"ওকে ছেড়ে দিচ্ছি তোমাকে কাদতে হবে না! আর শোনো। আজকে আমরা শহরে যাচ্ছি।
" হুম;
তারপর ওকে ছেড়ে দিলাম। ও চলে গেলো।
অতঃপর ফজরের নামাজ পড়ে আবার একটু শুয়ে পরলাম।
বেশ ঘুম পাচ্ছে!
সেটাও কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানিনা। কখন পর মা এসে ডেকে দিল। এবার উঠে পরলাম। দ্বিতীয়বারের জন্য ফ্রেশ হয়ে একটু বাহিরে হাটতে  গেলাম।
গত রাত্রে বাবা কে বলেছি যে আমরা আজকে যাচ্ছি। প্রথমে যেতে না করলেন! কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সমস্যার কারণে আর কিছু বললেন না।  ইতিমধ্যেই অনলাইন ট্রেইনার টিকেট কিনে ফেলেছি। ১১ টাই ট্রেইন।
তবে   আজ একটি বারের জন্যও মুহি কে দেখতে পেলাম না। খালাকে জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন,"ওর কিছু কাজ ছিল তাই গত রাত্রেই বাসায় চলে গেছে!"
হম,হইতো আরও কোনো কারণ ছিল। ওর জন্য একটু খারাপ লাগছে।
সকালের খাবার শেষে, সবার থেকে দ্বিতীয় বারের মতো অনুমতি নিয়ে , আমরা রওনা দিলাম। নিথীণ আমাদের স্টেশন পর্যন্ত ছেড়ে আসলো।  দিনের বেলা লং জার্নি আমার একদম পছন্দ না। তবে আমার বউটার উৎসাহ দেখে ভাবনাটা মাথা থেকে উধাও হয়ে গেলো.....
to be continue.............

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...