লেখক:আসিফ ইকবাল!
ষষ্ট পর্বের পর থেকে.....
আজ আগেভাগে আমাকে বাসায় দেখে তাফা একটু অবাক হলো। তা বেশ বুঝতে পারছি। "কি হলো তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?".........
___এমনে তো ৭ টার আগে বাসায় আসেন না। তো আজ কি হলো huh?(তাফা)
___কেনো!!আমিকি আসতে পারিনা?
___হম,পারেন।(ধীরে বললো)
ও আমার সামনে দাড়িয়ে ছিল। ওকে টেনে আমার কাছে বসিয়ে নিলাম।
"তোমাকে অনেক মিস করছিলাম,তাই চলে আসলাম!আর ছুটিও নিয়েছি কয়েকদিন। তুমি খুশি তো?"
"নাহ,একদম না!যান ফ্রেশ হয়ে নিন।আর আমাকে ছাড়ুন" বলে তাফা চলে গেলো।ওকে দেখে বুঝতেই পারছিনা যে,খুশিহয়েছে নাকি অখুশি। মেজাজ টা কেনো জানি খারাপ হয়ে গেলো।
তার পর আর কি,
ফ্রেশ হয়ে আমার রুমের দিকে চললাম। জানিনা তাফা কোথায়!
অনেকবার ডাকছিও কিন্তু কোনো সাড়া নেই।
আমার রুমে এসে দেখি তাফা গোছাগোছি করছে। কিছু না ভেবেই ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ও কিছুটা চমকে গেছে।আর আমাকে ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
___কি হচ্ছে এসব!ছাড়ুন বলছি!(তাফা)
___নাহ, ছাড়বো না!কি করবে করো!
___আপনি এমনিতেই সকালে যেটা করেছেন,সেটার জন্য আপনাকে মাফ করবনা। যদি না ছেড়ে দেন,তাহলে এক্ষুনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।(তাফা)
___ছাড়লে তো যাবে!!
ও, নিজেকে ছাড়িয়ে নিল,ওকে দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে গেছে।তাই ছেড়ে দিলাম।
___শুনুন,
আপনি আমাকে বিয়ে করছেন।আমি না! সো কখনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। বা আমাকে ছোবার!
আপনিই তো বলেছেন,আপনি আমাকে বিয়ে করেছে,যাতে আমি কখনো এখন থেকে চলে না যাই।আর আমি তাই করবো।(তাফা)
___কিন্তু আমি তো তোমার বর!!
___হম,কিন্তু আমি একটু কম মানি,😀 (বলে একটা হাসি দিয়ে আমার রুম থেকে চলে গেলো)
ওর কথার তেমন কিছু বুঝলাম না! কিন্তু এটা স্পষ্ট বুঝলাম যে,ও চায়না আমি ওকে স্পর্শ করি। ঠিক আছে ও যেমন চায় তেমনি হবে। ও না চাইলে ওকে কখনো স্পর্শ করবনা। মনটা একটু খারাপ হলে গেলো। দোষটা আমারই। ওকে তো আমিই ভালোবেসেছি আর আমিই বিয়ে করেছি। ও তো আমাকে ভালোবাসে না। যেভাবেই হোক!ওকে আমি বিয়ে করেছি,তাই ও ওর সব দায়িত্ব পালন করে,এটুকুই মাত্র।
আর তাফার সামনে যাইনি, জানিনা ও কি করছে। যখনই দেখি বই পড়ে। এখনো হইতো তাই।ভেবেছিলাম জলদি বাসায় যাচ্ছি। তাফার সাথে সময় কাটাতে পারব। একা একা খুব বোরিং লাগছে। অফিসে থাকলে যেভাবেই হোক সময় কাটত।
একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কখন যে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে জানিনা.....
সকালে যখন চোখ খুললো,,দেখি তাফা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,কিছুক্ষনের জন্য একটু ভয় পেয়েছিলাম!
আর ওকে দেখে মনে হই খুব রেখে আছে, গাল দুটো একদম লাল হযে গেছে।
___গতকাল আপনার কি হয়েছিল?এত ডাকলাম সাড়া দিলেন না। আর সন্ধ্যা বেলা কেউ ঘুমই? আর রাতে আপনিই কিছুণ খান নি।
___ঘুমের ঔষধ খেয়েছি,তাই ! আর ক্ষুধা ছিলনা তাই খাইনি!
এখন সামনে থেকে সড়,আর আমাকে উঠতে দাও।
___হম,তাই বলে.......
আর ওকে কথা বলার সুযোগ দিলাম না।
আজ সকাল টা কেনো জানি একটু আলাদা। ঘুম থেকে উঠেই তাফাকে দেখছি।হইতো তার জন্য দিনটা আজকে ভালো কাটবে। ফ্রেশ হয়ে একটু বাহিরে হাটতে চলে গেলাম। ভেবেছি এখন আর তাফার সাথে বেশি কথা বলবেনা। থাকনা ও নিজের মতো। যাই হোক বউ তো আমার!
আজকে আমরা গ্রামে যাচ্ছি!তাই আগে ভাগেই ট্রেইনের টিকিট কিনে ফেললাম। আমার চাচাতো বোনের বিয়ে। সেই শেষবার একটা পিচ্চিকে দেখে আসছি!আর একদিন পর নাকি ওর বিয়ে।ভেবেই কেমন জানি লাগছে।
তবুও বেশ ভালোলাগছে। কতদিন পর গ্রামে যাবো। সবকিছু হইতো অনেক টা বদলে গেছে। আর কেনই বা বদলাবেন। আমি কি আগের মতই আছি নাকি! দ্রুত বাসায় চলে গেলাম। প্যাকিং করতে হবে তো!!
কলিং বেল চাপতেই তাফা দরজা খুলে দিল। ডাইনিং এ খবর নিয়ে বসে ছিল হইতো।
___আপনি এতক্ষন কই ছিলেন? সেই সকাল বেলা বেড়িয়েছেন।আর এখন আসলেন।(তাফা)
___এমনিতেই,,কিছু পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো, তাদের সাথে একটু সময় কাটালাম।
___হম,এখন জলদি যান,,ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন।(তাফা)
___হম.....আসছি...
তারপর দুজনেই খেতে বসলাম।
তাফার রান্না সত্যিই অসাধারণ। হাহা,,বউয়ের রান্না কার না ভালোলাগে। এটাই তো বাকি জীবন খেতে হবে তাই না! দেখছি আজকে তাফা অনেক কিছু রান্না করছে.....বুঝতে পারছিনা...ব্যাপার কি।
___আচ্ছা তাফা, আজ খাবারে এত কিছু কেনো?
___আপনার জন্য!(তাফা😊)
___মানে?
___আপনি গতকাল রাত্রে কিছু না খেতে শুয়েছে!তাই এখন এগুলু সব আপনাকে খেতে হবে!
___আমি পাগল! নাহ আমার মাথা খারাপ। আমি কখনোই খেতে পারবোনা সব। আর আমি গতকাল আসার সময় আমার কলিগের সাথে খেয়েছিলাম তাই রাত্রে কিছু খাইনি!
___ওকে,আর মিথ্যা বলতে হবে না।খেতে থাকুন!খাবার সময় কথা বলতে নেই!(তাফা)
___হম,,আর শোন!আমরা আজ গ্রামে যাচ্ছি! সন্ধ্যা ৮টাই ট্রেইন।
___ঠিক আছে। আমি সব গুছিয়ে নিন। কিন্তু আমায় আগে বলেন নি কেনো .(তাফা)
___এমনিতেই!।ওকে!আমার খাওয়া হয়ে গেছে....
তার পর উঠে চলে আসলাম। ওহ এখনো খাচ্ছে। পাগলীটা খেতে কেনো যে এত লেট করে বুঝিনা।কেনোঁজানি খুব ভালো লাগে,খুব ভালোলাগে যখন তাফা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে..ও সত্যিই অদ্ভুত.....
saradinta বেশ ভালই কাটলো। সবসময় তাফার চারপাশে ঘোরা,ওর দিকে তাকিয়ে থাকা আর ওর রেগে যাওয়া।এসবই!
সন্ধ্যা বেলা সব গুছিয়ে বেরিয়ে পরলাম। আর আধা ঘণ্টা পর ট্রেইন।আর স্টেশন বেশি দূরে na । তাই বেগ পেতে হলো না ।তাফা আজকে ঠিক আগের মত একটা নিল নিকাব পড়েছে....
আবারও সেই অপরিচিতা কে দেখে ভালো লাগছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।
স্টেশনে অনেক ভিড়! এটাই দিনাজপুর যাওয়া শেষ ট্রেইন। তাই হইতো।
আমি তাফার হাত ধরতে চাইলাম।কিন্তু না করে দিল। অথচ ও আমার শার্ট শক্ত করে ধরে আছে,যাতে হারিয়ে না যায়।😁😁
আমার বেশ অদ্ভুত লাগছে।
অবশেষে আমরা ট্রেইন উঠে পরলাম।
"দ্রুতযান" যেটা দিনাজপুর যাচ্ছে!আজ ওটা একটু লেটে ছাড়বে।
ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে,অনেক বিরক্তিকর!!
চিরাচরিত নীয়মে তাফা জানালার পাশে বসে আছে আর আমি ওর পাশে।আমার ডান পাশে এক মধ্য বয়সি মহিলা।
প্রচন্ড গরমে আমার অবস্থা খারাপ। বুঝতে পারছিনা, তাফা কিভাবে আছে। ওকে দেখে মনেই হচ্ছে না, যে ওর গরম লাগছে...
এই প্রচন্ড গরমে প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা পর ট্রেইন চলতে শুরু করল। এখন একটু ভালো লাগছে? তাফা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আর আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে।ট্রেইনে ওঠার পর একবারও আমার সাথে কথা বলেনি।
দিনাজপুর যেতে প্রায় দশ ঘণ্টা লাগবে,
তাফা ইতিমধ্যেই আমার কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, এই প্রথম ওকে ঘুমোতে দেখছি। বেশ লাগছে তো!!!
আজ কত দিন পর গ্রামে যাচ্ছি। এই সাত বছরে কত কিছুই না বদলে গেছে।অনেক চেনা মুখ এখন আর হইতো চিনতে পারবোনা মনে পড়ছে হাজারো কথা,
মনে পড়ছে মুহির কথা।
সেই!!! সাত বছর আগে যার প্রেমে পড়েছিলাম। ow হইতো আমাকে ভালোবাসতো। আজ সময়ের গভীরতায় সব কিছু হারিয়ে গেছে...
আচ্ছা,আমি ওকে দেখে চিনতে পারব তো! কেনো পারবোনা?অবশ্যই চিনতে পারবো। তাকে আবারও দেখে সাত বছর আগের পুরনো প্রেম হইতো আবারো জেগে উঠবে.........
to be continue...........

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন