সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: এক)

লেখক:আসিফ ইকবাল।
রাস্তার পাশের দেওয়াল ঘেঁষে হেঁটে চলেছি। বেশ নিস্তব্ধ সবকিছু। এতো রাতে এর থেকে আর কি বা,বেশি আশা করা যায়। আমি আর আমার একাকিত্ব,এর থেকে বেশী কিছু না।
চোখ দুটো বার বার বন্ধ হলে আসছে,হইত ওদের ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ওরা তো জানেনা,এখানে ঘুমোনো যাবে না। বাসায় যেতে হবে।কাছে টাকাও ছিলো না যে রিকশা কিংবা বাসে যাবো।কোন যে হতভাগার আমার মানিব্যাগ টা দরকার পড়ছিল। তাই না বলেই নিয়ে গেছে। কি আর করার হেঁটেই রওনা দিয়েছি। আজ একটু বেশি কাজ ছিলো।তাই অনেক রাতে ছুটি পেলাম। 
শরীর টা বেশ ক্লান্ত , পাশে কেউ থাকলে হইত আমায় মাতাল বলতো।
মাতাল!
রাস্তার মৃদু আলোকসজ্জা ব্যাপারটাকে যেনো আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
____এইযে শুনুন?
ক্ষীণ মেয়ে কণ্ঠে ভেসে আসা শব্দটা রীতি মত আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। ওদিকে কান দিয়ে আমার লাভ নেই। হইত কোনো রাতপরী।
আমি হাঁটছি,,,,
পিছনে কারোর পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
চার দিকের এত নিস্তব্ধতা আমার কানকে যেনো আরো সজাক করে দিয়েছে।
পিছনে ফিরে দেখি, চাদর মুড়ি দিয়ে একটা অবয়ব। পাগল হবে হইত,এই অসহনীয় গরমে চাদরে জাপটে আছে। সম্মুখ ফিরে আবার হাটতে শুরু করলাম,পথ যেনো শেষ হবার নামই নিচ্ছে না।
অবশেষে আমার বাড়ির দরজা টা দেখতে পাচ্ছি। একাই থাকি আমি। বাবা মা গ্রামে থাকেন।শহর থেকে একটু বাহিরে ছোট একটা আধমরা ফ্ল্যাটে থাকি। মালিক বেশ শখ করেই বানিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে নাকি মাঝে মাঝে জিনের দেখা মেলে। তাই তিনি আর এখানে থাকেননা। ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন।  জিনের বাড়ী হওয়ায় সামান্য ভাড়াতে পেঁয়েছি। 
তবে এখানে আদৌ জিন আছে কিনা। সেটা আমার জানা নেই।
আর আমার মতো চাকুরিজীবীদের জন্য  এটা বেশ ভালো।
___শুনুন, আমায় আজ রাতে আপনার বাসায় থাকতে দিবেন?
দরজা খুলে ঢুকতে যাবো এমন সময় , পিছন থেকে  আগের শোনা সেই  মেয়ে কণ্ঠে শব্দ টা ভেসে আসল। পিছন ফিরে দেখি সেই চাদরে ঢাকা অবয়ব।
___না, আপনি যেতে পারেন।
___দয়া করুন,আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। আমার যাওয়ার জাইগা নেই। শুধু আজ রাত টা থাকতে দিন।(অপরিচিতা)
___আমি কিছু জানিনা।(বলে ভিতরে ঢুকে দরজা লক করে দিলাম)
খুব ঘুম পাচ্ছে।  একটু পানি খেয়ে শুয়ে পরলাম।
কে যেনো দরজা তে নক চলছে রীতিমতো। হইত  সেটা ওই অপরিচিতা।
কিছুতেই থামছে না।  মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। আজ ঘুমোতে না পারলে সকালে উঠতে পারবনা। সেটা আমার জন্য মোটেও ভালো না।
___আপনি দরজা না খুললে ,আমি এভাবেই নক করবো।আপনাকে ঘুমুতে দিবো না।(অপরিচিতা)
বেশ আশ্চর্য তো। কোত্থেকে কোন পাগল  এসে ঘুমোতে দিচ্ছে না। ধুর...........
___একটা  মেয়ে এত রাতে  রাস্তায় রাস্তায় ঘুরুক আপনি কি চান? দয়া করে দরজা টা খুলুন। আমায় আজকের রাত টা শুধু থাকতে দিন।(অপরিচিতা)
কানের দুপাশে বালিশ গুজে দিলাম যেনো শব্দ না আসে।
বুঝতে পারছিনা এ শুধু আমার দরজাতেই কেনো নক করছে।পাশে তো আরও অনেকে আছে।
কিছুতেই হচ্ছে না। শব্দ বেড়েই চলেছে। কি পাগল রে বাবা।
আর কিছুনা ভেবে,  দরজা টা খুলে দিয়ে  আবার শুয়ে পরলাম।
আমার রুমেই বাহিরে এমন কিছু নেই যা চুরি হতে পারে।
বেশ ঘুম পাচ্ছে......
২.
সকালে উঠে দেখি ও ড্রয়িং রুমের মেঝেতে শুয়ে আছে। আমি রাত্রে যেটাকে চাদর মনে করছিলাম,ওটা আসলে নিকাব ছিলো।
দেখে মনে হচ্ছে মেঝেতে একটা কালো আর নীল কাপড়ের স্তূপ পরে আছে।
ওকে আর ডাকলাম না। একটা চিরকুট ওর পাশে দিয়ে দিলাম।
"আপনি উঠে পড়লে, দয়া করে এখন থেকে চলে যাবেন এবং আমাকে উদ্ধার করবেন। চাবিটা দরজার কোনে রেখে দিয়েন।"
অতঃপর,আমি চলে গেলাম। রাস্তায় কিছু খেয়ে নেবো।একটু লেট হয়ে গেছে,ইতিমধ্যেই।
রাত্রে ফিরে দেখি,দরজা খোলা!
তার মানে সে যাইনি।
ভিতরে ঢুকে দেখি টিভি দেখছে.....
____এইযে,মিস।আপনাকে না চলে যেতে বলেছিলাম। গত কাল রাত্রের জন্য শুধু থাকতে দিয়েছি।কিন্তু রীতিমতো ত আপনি আমার ঘরে চেপে বসেছেন। এক্ষনি আমার বাড়ি থেকে বের হন বলছি।(অনেকতো রেগে কথা গুলি বললাম)
____শুনুন?আমি গতকাল থেকে কিছু খাইনি।অনেক ক্ষুধা লাগছে।(অপরিচিতা)
আরেহ,বাহ আমি ওকে। চলে যেতে বলছি। আর ও কিনা বলছে ক্ষুধা লাগছে।বেশ আশ্চর্য তো।
___আচ্ছা আমি এনে দিচ্ছি,কিন্তু তার পর আপনি চলে যাবেন ।
সত্যিই ও গতকাল থেকে কিছু খেতে পারেনি। বাড়িতে কিছু ছিল না। একা মানুষ তাই হোটেল থেকেই খেয়ে আসি সবসময়।
ওকে খাবার এনে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ও চুপচাপ বসে আছে। কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে আমার বয়সি।কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই। চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওকে দেখে একটু বিরক্ত লাগছে।
___এবার আপনি চলে যেতে পারেন।
___আপনি সবসময় যেতে বলেন কেনো? এত রাতে আমি কৈ যাবো? (অপরিচিতা)
___সেটা আমি কিভাবে জানবো যেখান থেকে এসেছেন সেখানে যান। সেটা আমার জানার বিষয় না।
___কিহ (রীতিমতো কেদে দিয়েছে)
___ইহ,এটা করবেন না,প্লিজ। এটা না!  আপনি দয়া করে চলে যান।  এখানে আমি একা থাকি। আর একটা মেয়ে, আপনি এখানে থাকলে লোকজন খারাপ বলবে।
___আমার কোথাও যাবার জাইগা নেই।আর আমি রাস্তাঘাট ঠিক মত চিনি না।(অপরিচিতা।
___আপনি আপনার ঘাড়েই উঠলেন কেনো বলেন তো। আসে পাশে  অনেক দয়ালু মানুষ আছেন।
___জানিনা...(অপরিচিতা)
___আপনার পরিবার কই থাকেন? বলেন? আমি রেখে আসছি আপনাকে।
___পরিবার বলতে শুধু বাবা ছিলো। তিনিও এখন আর নেই।
বলে কাদতে শুরু করলো.......
বুঝেছি, ও এখান থেকে যাবেনা। আর,
আজ কাল ঘরের বাহিরে টা অনেক হিংস্র। ওর একা বাহিরে ঘোড়া ঠিক হবে না।তাই আর কিছু বললাম না।
___আচ্ছা আপনি কিছুদিন এখানে থাকতে পারেন,কিন্তু আমার সামনে কম আসবেন।(আমি)
থাকতে তো বললাম,কিন্তু তার পর ও কই যাবে।বিষয়টা আমাকে অনেক চিন্তিত করছে।সেদিনের মতো। ওকে ঘুমোতে বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
to be continued.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...