সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাইসা 😍


রাইসা কাঁদছে । যাকে বলে অঝরে কাঁদতে থাকা । কিন্তু তাতে কারো কিছু আসে যায় না । রুমটি বাহির থেকে বন্ধ । ১৬ তে পা দিবে দিবে মেয়েটির ব্যাগে যদি তার মা লাভ লেটার পায় তাহলে এটা করাটাই তো স্বাভাবিক ।
.
কিন্তু টিন এইজের একটা মেয়ের মাথায় এই যুক্তিই বা কেন কাজ করবে ?
.
পরনে এখনো স্কুল ড্রেস । কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে । আর কিছুক্ষণ পর তার জন্মদিন । সে ঠিক করেছিলো কাল স্কুল পালিয়ে সারাদিন রবির সাথে ঘুরবে । প্রথম ভালবাসার হাত ছুঁবে ।
.
আশাটা অপুর্ণ থাকলো ।
.
খট খট খট খট খট
.
রাইসা আধবোজা নয়নে তাকালো জানালায় , রবি ! জানালার ওপাশের খোলা বারান্দার , গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে । অজানা এক ভয়ে দৌড়ে এলো বারান্দায় ।
.
তিনতলায় উঠলে কেমনে ? এত রাতে কেন এসেছো ? জানো বাসায় চিঠিটা পেয়ে গেছে ?
.
সুসস
.
রাইসা চুপ হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো
.
এত প্রশ্ন করছো কেন ? এসেছি এটাই তো বড় কথা । জানতো আজ তোমার জন্মদিন ?
.
বিস্ময় তার চোখে মুখে , এত দুঃখে সে সবই ভুলে গেছে ।
.
আলতো করে হাত ছুঁলো রাইসার । আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ বুজে ফেলল সে । স্রষ্টাকে শত কোটি ধন্যবাদ একটা মানুষ আর একটা মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারে না বলে । না হলে রবির সামনে সে লজ্জায় সে মরেই যেত ।
.
চোখ বুজে আছে সে , অনুভব করলো তার শুকিয়ে আসা অশ্রু গুলো এক হাতে মুছে দিচ্ছে রবি । হাতটা তার ঠোঁটের উপর এসে থামনো । রাইসা চোখ খুলবার সাহস করলো না । বুক থরথর কাঁপছে ।
.
মেয়ে চোখ খুলো , আমাকে দেখো
.
না ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো রাইসা । রবি হাসলো । চোখ বুজে থাকলেও রাইসা বুঝতে পারছে রবির মাথাটি আস্তে আস্তে তার দিকে ঝুকে পড়ছে ।
.
কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সে । এবার রাইসা চোখ খুলল । এক জোড়া মায়াময় চোখ তারদিকে তাকিয়ে আছে ।
.
তোমার জন্য কবিতা একটা লিখেছি , শুনবে ?
.
হাসলো সে , মাথা ঝাকালো , শুনবে । ছোট একটা পৃষ্টা বেরুলো রবির পকেট হতে ।
.
.
.
.
তোমার চোখে আছে এক মায়া
যেন কালো কাজলে রাঙিয়েছে এক সুন্দরীতমা
.
চশমা পড়া , সিল্কি চুল
হাসিতে বেলুনছড়া হয়েছে সুমধুর ,
প্রান্ত থেকে প্রান্ত ভরে গেছে ফুলে
তারই এক বিন্দুতে আছো পাপড়ির আড়ালে
.
মেয়ে তুমি শুনছো ?
তুমি বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপদেখার অনুভূতি ,
তুমি আলোকিত চাঁদ
একটি নিটোল স্বপ্নের নীলভ ভাজ ,
.
কখনো মনে হয়
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"
.
এতসব ভাবনার মাঝে ভাবনা সাজাই
কাব্যের পন্ক্তিতে ভেলা ভাসাই
সবই এসেছে এক বিশেষ দিনে,
তুমি জানো ?
এ ছিলো তোমারই জন্মদিনে
.
.
.
.
রবি খেয়াল করেনি , যখন সে কবিতা পড়ছিল রাইসার চোখ বেয়ে আবার শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরছিলো , এবারেরটা উৎস ছিল এক অপ্রকাশিত সুখ ।
.
.
রবি কবিতা পড়া শেষ করে তাকালো তার দিকে । মেয়েটা ছুটে এসে তার ঠোঁটজোড়া চিপসে দিলো তার ঠোঁট দুটো ।
.
রবি তার চোখে মুখে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করছে । মেয়েটাকে ভালবাসে সে , কখনো তাকে ছাড়বে না ।
.
না ছড়বে না ।
.
যেন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করছে ।
.
.
.
.
.
২০ বছর পর
.
রাইসা তার মেয়ের ব্যাগ থেকে চিঠিটা পেল । রাফা থর থর কাঁপছে । যা ভাবলো তাই মেয়েটা লাভ লেটার পেয়েছে ।
.
রাফা অবাক হয়ে দেখলো মার মুখটি অস্বাভাবিক শান্ত রূপ ধারণ করেছে ।
.
"রুমে যাও " গলাটা কেঁপে উঠলো ।
.
রাফা ভুল দেখলো কি না বলতে পারছে না । মায়ের চোখে ছলছল করছিলো ।
.
রাইসা অনেকদিন পর তার পুরানো এলবামটা খুলল । ছবির নীচ থেকে কাগজ দুটো বেরুলো ।
.
প্রিয় রাইসা
কাল তোমার জন্মদিন । তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা আমার দ্বারা সম্ভব না । তাই লিখছি না । তবে একটা কবিতা লিখেছি । কাল তোমার শোনাবো । তুমি শুনবে তো ?
.
তোমার রবি
.
.
.
রবি আজ বেঁচে নেই , সেই রাতে তিনতলা থেকে নামতে গিয়ে পা ফসকে যায় । হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে । সে মরে গেলেও তার স্মৃতির পৃষ্টাগুলো আজো তার মনে সাড়া ফেলে ।
.
আজ সে তার মেয়ের মাঝে সে ২০ পুরানো রাইসাকেই যেন দেখছে ।
.
রাফার চিঠিটা টেবিলে রেখে এসেছে । বাহিরে অনেক বৃষ্টি । আজ কেন যেন সেই বূষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা করছে । হয়তো চোখের পানিটা লুকানো যাবে বলে ।
.
বিড়বিড় করছে রাইসা
.
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"
Ratulmaster.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...