সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোলা জানালা


 

রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পাগলের যন্ত্রনায় মেয়েদের হোষ্টেলটিকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হল কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘন্টা একঝুড়ি বেলীফুল নিয়ে রাস্তার ওপাশে দাড়িঁয়ে থাকে আর ফ্যালফ্যাল করে মেয়েদের হোষ্টেলের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে বিশেষত পাঁচতলার জানালার দিকে। বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হলেও সে কিভাবে যেন পালিয়ে চলে আসে। এত বেলীফুল সে প্রতিদিন কিভাবে জোগাড় করে তাও এক রহস্য!!!

পাঁচবছর আগে:

পাঁচতলার এই জানালা থেকে সামনের বড়রাস্তাটা বেশ ভালভাবে দেখা যায়। বিচিত্র মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা, রিকশা গাড়ির অবিরাম ছুটে চলা, আরো কত কি। ভোরসকালে পাহাড়ের কোলঘেষে উঠা সূয্যিমামা, কখনো এক ফালি সাদানীল আকাশ, জোসনা রাত, ঝিকিমিকি হাজার তারা কিংবা হঠাত্‍ আসা এক ফোঁটা বৃষ্টির চোখের পাপড়ি আলতো ছুঁয়ে যাওয়া, সব নিয়ে ভালই যাচ্ছিল বারিষার নিঃসঙ্গ হোস্টেল জীবন। সাথে ছিল মিষ্টি ভালবাসার সুখপাখি "মেঘ"দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যেত জানালার পাশে বসে থেকে আর মেঘের সাথে মোবাইলে কথা বলে।
-এই
-বলো
-কি করো?
-জানালার পাশে বসে আছি
-গত এক বছর ধরে একই উত্তর দিয়ে যাচ্ছো, জানালার পাশে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোমার?
-আছে তো। এই ধরো, আমি জানালার পাশে বসে পড়ি, খাই, ঘুমাই আবার তোমার সাথে কথা বলি
-সব জানালার পাশে বসেই করতে হবে?
-হুমম। তুমি এখন আমার একটা কথা রাখো প্লিজ. . . . . . . . . .
-কি?
-একটু তোমার রুমের জানালায় যাবে?
-কেন?
-হাজার তারার মেলা দেখবে
-স্যরি ম্যাম। এখন কম্পিউটারে গেম খেলছি, টার্নিং পয়েন্ট এ আছি, উঠতে পারব না
-ও আচ্ছা, ঠিক আছে রাখি।
খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাঃস গোপন করে মোবাইলটা রেখে ঘুমাতে যায় বারিষা।
হঠাত্‍ রুমমেটের চিত্‍কার "ঐ তুই আজ রাতে ও জানালা বন্ধ করলি না?"
"নারে। ও যদি আসে জানালা বন্ধ থাকলে আমি দেখবো কিভাবে"
"সে আসলে তোকে জানিয়েই আসবে"
"না জানাবে না। হঠাত্‍ একদিন একঝুড়ি বেলীফুল নিয়ে আমার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে আর আমি জানালা দিয়ে দুচোখ ভরে তাকে দেখব আর তারপর ও কিছু বোঝার আগেই দৌড় দিয়ে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরব আর বলব ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি. . . . . . . . . . . . ."
"উফফ! সেই একই প্যাচাল তোর পাগলামি আর ভালো হল না"
"ধ্যাততেরি, কেউ আমায় বুঝতে পারল না, আশেপাশের মানুষ তো দূরের কথা মেঘ ও তো আমার পাগলামি সহ্য করতে চায় না, থাক কেউ না বুঝুক, আমি জানি মেঘ ঠিকই আমায় বুঝবে, ও একদিন ঠিক আমার স্বপ্নের মতো করো এই খোলার জানালার সামনে আসবে, আমি সেই মুহূর্তের জন্য এই জানালার পাশে বসে অপেক্ষা করব"
মনে মনে বিড়বিড় করে বারিষা।

পাঁচ বছর পর:

আজকাল মেঘ অপেক্ষা করে বারিষার জন্য হাতে একঝুড়ি সাদা বেলীফুল নিয়ে খোলা জানালার সামনে, ভাবে এই বুঝি জানালা থেকে বারিষা তাকে দেখে দৌড়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরবে, বুকে মুখ লুকিয়ে বলবে ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি. . . . . . . . . . . . বারিষার অপেক্ষা একদিন ঠিকই শেষ হয়েছিল কিন্তু মেঘের অপেক্ষা হয়তো অন্তহীন। বারিষার ব্যক্তিগত ডায়েরি চুরি করে পড়ে মেঘ তার ভালবাসার মানুষটির একান্ত গোপন ইচ্ছা জানতে পারে, সবকিছু সাজিয়ে ও ছিল বারিষার স্বপ্নের মত করে কিন্তু বারিষা তার নিজের কাজটুকু করে নি, না না ভুল বললাম তাকে করতে দেয়নি শেষরাতে ঘুমন্ত চালকের অবাধ্য ট্রাকটি. . . . . . . . . . . . . বারিষা বেশ ভালোই আছে কারন এখন সে তার প্রিয় আকাশের মাঝে মেঘ হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তার আছে সীমাহীন খোলা জানালা.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...