সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি ভেজা সপ্ন


সজিব ভাইয়া একটু শুনে যাবেন? রীমতি, কাচুমাচু হয়ে গ্রুপ আড্ডা থেকে ডাক দিল সজিবকে।
-হুম বল রীমতি।
-ভাইয়া সাগর কোথায়? ওকে কিছুদিন হলো ক্যাম্পাসে দেখছিনা যে?
-আজ হঠাৎ ঐ ননসেন্স এর কথা তোমার মনে হল যে?
ভাইয়া সেদিনের ব্যাপারে সত্যি-ই আমি দুঃখিত…
-ও আছে ভালোই আছে! কিছু বলতে হবে?
-ওকে সরি বলবেন প্লিজ…
-হুম বলব, আর কিছু?
-আর…না আর কিছু না। কথা শেষে রীমতি ওর ডিপার্টমেন্টে চলে গেল।
গত ৫দিন ধরে রীমতি সাগরের জন্যে অপেক্ষা করছে অথচ সাগরের দেখা মিলছেই না ।রীমতির কেন জানি মনে হচ্ছে ,যেন রীমতির আকাশটা মেঘে ঢাকা আর  সাগর সেই আলোক ছটা, সত্যিকারের দিনের সূর্য কিন্তু সেই সূর্যের দেখা কেবল সাগরকে পেলেই আসবে।রীমতি কি তাহলে সাগরের মায়াজালে পরেই গেল? কিন্তু কেন! কিছুদিন আগেও তো সাগরের নামটা শুনলে রীমতির মাথা ভন ভন করত রাগে! মাথার রগ ফুলে যেত তবে ৫ দিন আগের সন্ধ্যাটা সব উলট পালট করে দিল। এখন শুধু সাগর আর সাগর এই নামটাই মাথার চারপাশে ঘুর ঘুর করছে। ৫ দিন আগের দিনটা এমন ছিল.…
বিকেলে ভার্সিটির ক্যান্টিনে  রীমতি আর তার বান্ধবীরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ সাগর এসে হাজির, মনে হচ্ছে দৌড়াতে দৌড়াতে এসেছে, এসেই হাপাচ্ছে। হাপাতে হাপাতেই সাগর বলল,
,রীমতি কিছু কথা ছিল।  রীমতি শুনেও না শুনার ভান করল।
-রীমতি তুমি কি তাসফিনকে বলেছ আমি তোমাকে খুব ডিস্টার্ব করি? এবার রীমতি মুখ তুলে তাকাল সাগরের দিকে…সাগরের মুখের বা গাল বেয়ে রক্ত ঝরছে আর পুরো শরীর ঘামে ভিজে আছে,  চেহারাটা লাল হয়ে আছে।
রীমতি বন্ধুদের রেখে সাগরকে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেল, পুরো ক্যান্টিন সাগরের এই অবস্থা দেখে গুঞ্জন শুরু করে দিয়েছে ততক্ষনে।
রীমতি সাগর কেএকটা ফার্মিসীতে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ আর ঔষুধ নিয়ে দিল…
দুজনেই হাটছে, সাগর  চুপসে রয়েছে এটা দেখে রীমতিই আগে কথা বলল-
-কিভাবে হল এসব? সাগর পাল্টা প্রশ্ন করল রীমতি কে,,
-আমি কি সত্যি ই তোমাকে ডিস্টার্ব করি? এতটা অপছন্দের আমি তোমার কাছে?
- না মানে…
হাটতে হাটতে দুজনেই একটা পার্কে চলে এসেছে, রীমতি দেখল সাগর হাটতে কষ্ট হচ্ছে তাই ও বলল,,,,,
-ঐ বেঞ্জটাতে বসবে
কিছুক্ষন কিছুক্ষন নীরব থেকে সাগর বলা শুরু করল।
-আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি তাসফিনকে ভালোবাস যদি এটা জানতাম তো কখনই তোমাদের মাঝে আসতাম না।
-কি বলছ তুমি এসব সাগর?
-আজকের পর এই সাগর ছেলেটা তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবেনা রীমতি,,,,
তোমাকে আমার ভালোবাসতে হবেনা আমি একাই না হয় বেসে গেলাম, হয়ত তোমাকে আর প্রকাশ করবনা তবে আমার মনটা তো আর থেমে থাকবেনা সেটা কেবল আমি ই দেখব তোমাকে দেখানোর চেষ্টাও করবনা। তবে তোমাকে আমি আজ আমার একটা ইচ্ছের কথা বলব, না ভয় নেই পূরণ করতে হবেনা তুমি শুধু শুনে যাবে আমার বোকামী খাম খেয়ালি।
-!রীমতি!
-হুম?
-তুমি কী তোমার পুরো জীবন থেকে মাত্র একটি দিন আমাকে ধার দিবে? মাত্র এক দিন। সে দিনটা তুমি আর আমি ই থাকব আর কেউ না আর কারো চিহ্ন থাকবেনা আমাদের মস্তিস্কে। তুমি ভাববে আমাকে আর আমি তোমায়! সেই দিন খুব সকালে আমি তোমার বাড়ির নিচে দাড়িয়ে থাকব। তোমাকে নিতে আসব, আমার পরনে থাকবে আকাশীপাঞ্জাবী আর তুমি পড়বে নীল রঙের একটা শাড়ি! জানি তোমার আকাশী আর নীল এই ২টাই চক্ষু বিষ, যেখানে আমি নিজেই তোমার অপছন্দের সেখানে আমার পছন্দ তোমার পছন্দ হবেনা সেটাই স্বাভিক।
-
রীমতি কথা গুলি সাগরের দিকে তাকিয়ে থেকেই শুনছে আর  সাগর তার সোজা চলে যাওয়া চিকন রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে কথা গুলি বলছে… সাগর কে কেন জানি খুব আপন আপন মনে হচ্ছে রীমতির, ওর কথা গুলো খুব মনযোগে শুনতে লাগলো সে। সাগর কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগল-
-রীমতি তোমার কী নীল রঙের শাড়ি আছে?
-হুম আছে, হঠাৎ রীমতি জানতে ইচ্ছে হল যে সাগরের  আকাশী পাঞ্জাবী আছে কিনা!
-সাগর তোমার  আকাশী পাঞ্জাবী আছে?
-নাহ নেই, ইচ্ছে করেই কিনি নাহ। জানি পাঞ্জাবীটা কিনলে তোমাকে নিয়ে আমার একদিনের সময় কাটানোর প্রবল ইচ্ছে জাগবে আর সেটা তো সম্ভব নয়! তাই নিজের কস্ট আর নিজে বাড়ালাম নাহ।
তোমাকে ভার্সিটি ক্যান্টিনে যেদিন দেখি সেইদিনই ভালো লেগে যায় আমার, তোমার মিষ্টি হাসিটা আজো আমি ভুলিনি তবে সেদিন ভালোভাবে দেখতে পারিনি। আমার কল্পনার সেইদিনটাতে তোমার হাসিটা আমি প্রাণভরে দেখব আর কোন বাধা থাকবেনা তোমার হাসি দেখতে। দুপুরের খাওয়া শেষে তুমি আর আমি একটা রিক্সায় উঠব, হুট খোলা রিক্সায় মুহু মুহু বাতাসে তোমার চুল গুলি উড়বে। বিকেলের মাঝা মাঝি সময় তুমি আর আমি নির্জন রাস্তায় দুজন দুজনের হাত ধরে হেটে যাব আর তখুনি নামবে ঝুম বৃষ্টি, বিজলীর প্রকট আওয়াজে তুমি আমার হাতের মুষ্টিকে আরো চেপে ধরবে আর আমি তোমাকে অভয় দিব- কিছু হবেনা রীমতি, এর সাগরের হাতে তোমার হাত, এই দেহটাতে প্রাণ থাক পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখব আমি, তোমার আলতো হাসি পরিবেশটাকে আরো মাধুর্য্যতে পুর্ণ করে তুলবে.…
সন্ধ্যার আলো এসে রীমতির মুখে পড়েছে সাগর  সেইটা খেয়াল করল কিন্তু বুঝতে দিলনা রীমতিকে, মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে…
-রীমতি অনেক দেরী হয়েছে তুমি বারি যাও…
বেঞ্জ থেকে উঠতে উঠতে সাগর  বলল…
রীমতি কি বলবে বা করবে তা বুঝে উঠ্ততে পারছেনা, কেবল চেয়ে দেখছে সাগরের আস্তে আস্তে তার সামনের পথ ধরে চলে যাচ্ছে।
সেদিন থেকে আজ ৫ দিন হল সাগরের   দেখা নেই ।রীমতির ঘুমো যেন হারিয়ে গেল, কেবল ভাবে  সাগর আমাকে এত ভালোবাসে কেন?
৭ দিনের মাথায় সাগরকে  ক্যাম্পাসে সজীবের সাথে পাওয়া গেল… খুব শঙ্কা নিয়ে রীমতি এগিয়ে গিয়ে সাগর কে ডাকল-
-সাগর তোমার সাথে কথা ছিল… সাগর রীমতিকে দেখে একটু অন্যমনস্ক হ-ওয়ার ট্রাই করল তবে ডাক যেহেতু ওর পড়েছে তাই ও উঠে গেল…
৭ দিন আগে যেই বেঞ্জটিতে দুজন বসে ছিল সেখানেই এখন ওরা, শুধু সময়ের পার্থক্য। এখন মধ্যদুপুর, ভেজা আকাশ আর এই সময় চাওয়া পাওয়ার ব্যাপার প্রবল হয়!
-সাগর  আমি একজনের অপেক্ষা করছিলাম গত ৭ দিন ধরে, জানো তুমি? কোথায় ছিলে এ কদিন? তুমি যাবে যাও সাথে আমার ঘুম আর মনটাকে কেন নিয়ে গেলে? এ কথা শুনি সাগর হতভম্ব…
কি শুনছে ও! প্রিয়তা ৭ দিন ধরে ওর অপেক্ষা করেছিল!
-তোমার কাছে আজ আমি কিছু চাইব, দিবে সাগর ?
-হুম বল।
-তোমার লাইফের প্রতিটা সকাল,বিকেল আর রাত্রি গুলোকে তুমি আমার সাথে ভাগাভাগি করবে সাগর? ঝুম বৃষ্টিতে তোমার হাতটা আমাকে ধরতে দিবে?
-সাগর  আজ আমি তুমার কাধে মাথা রেখে আমি জোছনা দেখতে চাই। দিবে? সাগরের চোখের অশ্রু আর আটকে রাখতে পারল না… -রীমতি আমি আমার ভালোবাসার সব শক্তি দিয়ে বেধে রাখবো তোমায়, কোথাও হারাতে দিতে চাইনা তোমাকে
-আরে বুদ্ধু আমি তমারি থাকবো।
-রীমতি তোমার হাতটা দিবে? একটু ছুয়ে দেই তোমায়।,,
Ratulmaster
The end................

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(পর্ব ০৯)

RM ,,পূর্ববর্তী পার্ট গুলি পেতে অমার টাইমলাইন  ভিজিট করুন,, কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম সেটা মনে নেই। চোখ খোলে যখন মাথার পেছনে সজোরে এক থাপ্পর খাই। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখি যে কে আমাকে চড়টা মারল। আমি দেখলাম যে আমি উঠানের মাটিতে পড়ে আছি, পায়ের কাছে মাটিতে সুব্রত পড়ে আছে। আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে আমাকে চড়টা মারল, আমি অবাক হয়ে দেখি যে ইন্দ্রানি মাসি আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন “শুয়োর গুলো এখানে শুয়ে? আর আমারা তোদের দু’জনকে সারা বাড়িতে হন্যে হয়ে খুঁজছি। তোদের কি কোন বোধ বুদ্ধি নেই?” আমি সুব্রতর কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠিয়ে দিলাম, সুব্রত আর আমি দুজনেই উঠে পড়লাম মাটি থেকে। আমি কাতর চোখে ইন্দ্রানি মাসির দিকে চেয়ে বললাম “সরি মাসি। ভুল হয়ে গেছে, কাল রাতে একটু বেশি হয়ে গেছিল।” চেয়ারের ওপরে মদের বোতল আর গ্লাসের দিকে ইন্দ্রানি মাসির চোখ পড়ে যায়, তাড়াতাড়ি করে চেয়ারের ওপরে নিজের শাল ফেলে দিয়ে ঢেকে দেয় গ্লাস আর বোতল। ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে অনেক গুলো পায়ের আওয়াজ পাই। মাসি সবাই কে বলে “এই ছেলে দুটো সারা রাত...

নিষিদ্ধ ভালোবাসা(শেষ পর্ব)

RM কিছুদূর যেতেই  একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করায় বল্বিন্দার, বলল যে গাড়িতে তেল ভরতে হবে। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে পরীর ঘুম ভেঙে যায়, আমার দিকে তাকিয়ে বলে “কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?” আমি বললাম “বেশীক্ষণ ঘুময়নি তুমি” “আমরা থামলাম কেন?” “তেল ভরার জন্য।” “আর কত দেরি পৌঁছতে?” আমি পেট্রল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে জিওরি থেকে চিতকুল কতক্ষণ লাগবে পৌঁছতে। লোকটা আমায় জানাল যে আরও ঘন্টা চারেকের রস্তা বাকি। লোকটা আরও জানাল যে কারছাম ব্রিজের পরে রাস্তা খুব খারাপ। বল্বিন্দার আমাকে বলল যে ও রাস্তা জানে, কোন চিন্তা করতে বারণ করল আমাকে। পরী হিন্দি বিশেষ ভালো করে বোঝেনা তাই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বল্বিন্দার কি বলল। আমি রাস্তার কথাটা চেপে গেলাম, জানালাম যে কোন কিছুর জন্য চিন্তা না করতে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আড়াইটে বাজে তখন, তারমানে চিতকুল পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। একে শীতকাল তায় আবার পাহাড়, এখানে রাত সমতলের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি নামে। জিওরি ছাড়ার কিছু পরেই পরী বলল যে ও আর ঘুমোতে চায় না, বাইরের দৃশ্য দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে। কিছু পরেই সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। যখন আ...

"এক অপরিচিতা"(পর্ব: ছয়)

লেখক:আসিফ ইকবাল! "আগের পর্ব গুলো আমার টাইমলাইনে বিদ্যমান" পঞ্চম পর্বের পর থেকে..... ___আরে বাহ, আপনি নিজের বউ কেই চিনতে পারছেন না!       এবার তো বলবেন গতকাল আপনি আমাকে বিয়েই করেন              নি। হম,সেটাও বলে ফেলেন না! দেরি কেনো? ওর এতগুলি কথার পর বুঝতে পারলাম,এটাই আমার অপরিচিতা,কিন্তু ও আজকে নিকাব পড়েনি। হিজাব পড়েছে। তাই চিনতে পারিনি। মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বউটা অনেক কিউট। সকাল বেলা যে আমার জন্য এরকম একটা সারপ্রাইজ আছে সেটা ভাবিনি!      ____কি!আপনি কি এভাবেই তাইকে থাকবেন? নাকি উঠেবেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হোন।(তাফা) ____তুমি আজকে নিকাব পরোনি যে! ____আপনি তো আমার বর!আপনার সামনে নিকাব পড়তে হবে কেনো?(তাফা) বলে.....একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। এই প্রথম ওর হাসি দেখলাম। আর সেটা আমাকে রীতিমতো পাগল করে দিয়েছে। আর দেরি করলাম না। জলদি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চললাম। তাফা,,, তাফা! কই তুমি?........ "এইতো কিচেনে,কি হোয়েছে..... তাফা কিচ...